হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ।
, ২৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) স্থাপত্য নিদর্শন
হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার অলঙ্করণে লিপি শিল্পের প্রয়োগদৃষ্টে উল্লিখিত মন্তব্যের যথার্থতা প্রমাণিত হয়। ক্যালিগ্রাফি (হস্তলিখন শিল্প) ইসলামী স্থাপত্যের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং প্রথম থেকেই এর প্রয়োগ দেখা গেলেও বাংলায় স্থাপত্যিক অলঙ্করণ হিসেবে মাজার শরীফে এর সার্থক রূপায়ণ দেখা যায়। হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ ভবনের কবরের সম স্থানের করে শব্দ ও বাক্যের জন্য স্থান নির্বাচনে (কমপোজিশনে) পরিপাট্য উল্লেখযোগ্য।
আলোচ্য মাজারলিপি হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইন্তেকালের তারিখ সম্বন্ধে তথ্য প্রদান করায় এর ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে এবং এখনও যে সব শিলালিপি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সে সব লিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হলে আরও ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এখানে লিখন শিল্পের স্থাপত্যিক অলঙ্করণের বৈশিষ্ট্যই মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে। আরবি হস্তলিখন শৈলী ও অ্যারাবের স্থাপত্য অলঙ্করণ শিল্প হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে সার্থকতা অর্জন করেছে এবং লিখন শৈলী স্থাপত্যে প্রয়োগের মাধ্যমে অলঙ্করণ ক্ষেত্র যথেষ্ট সম্প্রসারিত হয়েছে। মাজার শরীফের সমস্ত স্থান জুড়ে উন্নতমানের লিপিকলা দৃষ্টে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায় যে অলঙ্করণ উপকরণ হিসেবে লিখন শিল্পকে কাজে লাগাতে শিল্পীগণ যথার্থ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও অলঙ্করণ শিল্প শৈলী পর্যবেক্ষণে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে মাজার শরীফে উৎকীর্ণ লিপিমালার আলংকারিক প্রয়োগেই এর সর্বাধিক সুবৃদ্ধি সাধিত হয়েছে এবং এখানেই এ মাজার স্থাপত্য ইমারতের সুকৃতি নিহিত।
বাংলায় সুলতানি আমলের অধিকাংশ ইমারতে শিলালিপি না থাকায় নির্মাণকাল নির্ধারণে বিভ্রান্তির অবতারণা হয়ে থাকে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ কেবল এ-ইমারত নির্মাণের সঠিক সময়ই নির্দেশ করছে তাই নয় একইসাথে বাংলায় বিকশিত মধ্য পঞ্চদশ শতকের মুসলিম মাজার স্থাপত্যের পরিণতরূপ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা প্রদান করছে।
একলাখী মাজার (হযরত পান্ডুয়া, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্চদশ শতকের প্রারম্ভ) বাংলার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যম-িত মাজার শরীফের বিদ্যমান নমুনা। এই বর্গাকৃতির এক-গম্বুজবিশিষ্ট সৌধে বর্গাকার কক্ষকে অষ্টভুজে পরিণত করেছে, যাতে তাদের খিলানভিত্তিক গম্বুজ নির্মাণে অভিজ্ঞতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। একলাখী মাজার শরীফে প্রথমবারের মত ছাদে বৃহৎ আকার গম্বুজ নির্মাণে অভিজ্ঞতার অভাব পরিলক্ষিত হয়।
খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফে খিলানভিত্তিক স্কুইঞ্চ পদ্ধতিতে নিয়মানুগভাবে গম্বুজ নির্মাণে পূর্বের প্রযুক্তিগত সমস্যার পরিসমাপ্তি ঘটে এবং মাজার স্থাপত্যের পূর্ণাঙ্গরূপ বিকশিত হয়। এখানে গম্বুজের কোনো স্কন্ধ নেই (shoulder/drum); ফলে দেখতে চাপা এবং গম্বুজটি দিগন্ত বিস্তৃত অনুচ্চ অর্ধবৃত্তাকৃতির স্থিত নিদর্শন। বস্তুত সমগ্র সুলতানি আমল ব্যাপী কুব্বা ধরণের বর্গাকার পরিকল্পনা বাংলাদেশের অধিকাংশ মাজার শরীফে অনুসৃত হয়।
দানী খানজাহান রীতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন যে বাগেরহাটের হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইমারতসমূহ তুগলক স্থাপত্যের ন্যায় অলঙ্করণবিহীন এবং কোণের পার্শ্ববুরুজ তুগলক স্থাপত্যে বিকশিত বুরুজের ন্যায় গোল।
দানী অন্যত্র নিজেই উল্লেখ করেছেন যে মুগল আমলে সংস্কারের ফলে হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইমারতে তুগলক স্থাপত্যের ন্যায় পলেস্তারার আবরণ দেখা দিয়েছে। ষাটগম্বুজ মসজিদ অলঙ্করণবিহীন নয়; এর গাত্রালংকারে পোড়ামাটির ফলকসংবলিত প্যানেল নকশা রয়েছে, তবে গৌড়ের নকশালংকার সমৃদ্ধ ইমারতের সাথে তুলনা করলে হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্থাপত্য নিদর্শনসমূহ সাদাসিধা বলে প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে মুসলিম স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মোশাররফ হোসেনের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তার মতে “গৌড়ের ইমারতের তুলনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত সমসাময়িক স্থাপত্যে যে অল্প অলঙ্করণ দৃষ্ট হয় তাহার প্রধান কারণ পৃষ্ঠপোষকতার মান এবং কারিগর প্রাপ্তির লভ্যতা।
চলবে ইনশাল্লাহ....
সূত্র:
ইন্টারনেট অবলম্বানে সংকলিত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুঘল আমলের নিরাপত্তা নিদর্শন হাজীগঞ্জ দুর্গ
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রাচীন মসজিদের অজানা ইতিহাস
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাজ-উল-মসজিদ ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায় আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক চুনাখোলা মসজিদ
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৪)
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (৩)
১২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (২)
০৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (১)
২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১১)
২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ (৩)
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১০)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)