উট মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতময় সৃষ্টি: উট সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য
, ০৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পাঁচ মিশালী
أَفَلَا يَنظُرُونَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ
অর্থ : তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে?
উট মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতের এক মহাবিস্ময়, এটি ৫৩ ডিগ্রি গরম এবং মাইনাস-১ ডিগ্রি শীতেও টিকে থাকে। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর উপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পা ফেলে রাখে। কোনো পানি পান না করে মাসের পর মাস চলে। মরুভূমির বড় বড় কাঁটাসহ ক্যাকটাস খেয়ে ফেলে। দেড়শ কেজি ওজন পিঠে নিয়ে শত মাইল হেঁটে পার হয়। উটের মত এত অসাধারণ ডিজাইনের প্রাণী প্রাণীবিজ্ঞানীদের কাছে এক মহাবিস্ময়।
মানুষসহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর আশেপাশে থাকে। যদি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে ৩৮.৫ ডিগ্রির (১০২ ফা) বেশি হয়ে যায়, তখন অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি হতে থাকে। ৪০ ডিগ্রির (১০৪ ফা) বেশি হয়ে গেলে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, খাদ্যতন্ত্র ব্যাপক ক্ষতি হয়। ৪১ ডিগ্রি (১০৫ ফা) তাপমাত্রায় শরীরের কোষ মরে যেতে শুরু করে।
একারণেই যখন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যায়, তখন শরীর ঘেমে বাড়তি তাপ বের করে দিয়ে ঠা-া হয়ে যায়। কিন্তু উটের জন্য এভাবে পানি অপচয় করা বিলাসিতা। কারণ মরুভূমিতে সবচেয়ে দুর্লভ সম্পদ হচ্ছে পানি। একারণে উটের শরীরে এক বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ভোরবেলা এর শরীরের তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি থাকে। তারপর আবহাওয়া যখন প্রচ- গরম হয়ে যায়, তখন অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ ডিগ্রি (১০৪ ফা) পর্যন্ত ওঠে। এরপর থেকে এটি ঘামা শুরু করে। এর আগে পর্যন্ত এটি পানি ধরে রাখে। এভাবে প্রতিদিন উট স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে প্রচ- জ্বরের তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উটের শরীরের ভেতরে এ ধরণের ধারণক্ষমতা দিয়েছেন, যে তা দিনের পর দিন ভীষণ জ্বর সহ্য করার পরেও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি হয় না।
উটের রক্ত বিশেষভাবে তৈরি প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখার জন্য। ৬০০ কেজি ওজনের একটি উট এক সাথে প্রায় ২০০ লিটার পানি তিন মিনিটে পান করতে পারে, যা কয়েকটি গাড়ির ফুয়েল ট্যাঙ্কের সমান। এই বিপুল পরিমাণের পানি অন্য কোনো প্রাণী পান করলে রক্তে মাত্রাতিরিক্ত পানি গিয়ে অভিস্রবণ চাপের কারণে রক্তের কোষ ফুলে ফেঁপে ফেটে যেত। কিন্তু উটের রক্তের কোষে এক বিশেষ আবরণ আছে, যা অনেক বেশি চাপ সহ্য করতে পারে। এই বিশেষ রক্তের কারণেই উটের পক্ষে একবারে এত পানি পান করা সম্ভব হয়।
উটের কুজ হচ্ছে চর্বির আধার। চর্বি উটকে শক্তি এবং পুষ্টি যোগায়। আর পানি শরীরের যাবতীয় আভ্যন্তরীণ কাজকর্ম সচল রাখে, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে। একবার যথেষ্ট খাবার এবং পানি নেওয়ার পর একটি উট ছয় মাস পর্যন্ত কোনো খাবার বা পানি পান না করে টিকে থাকতে পারে।
উট হচ্ছে মরুভূমির জাহাজ। এটি ১৭০-২৭০ কেজি পর্যন্ত ভর নিয়েও নির্বিঘেœ চলাফেরা করে। এই শক্তিশালী প্রাণীটির মানুষের প্রতি শান্ত, অনুগত হওয়ায় মানুষের জন্য অনেক উপকারী। আল্লাহ পাক যদি উটকে মানুষের জন্য উপযোগী করে না বানাতেন, তাহলে মরুভূমিতে মানুষের পক্ষে সভ্যতা গড়ে তোলা অসম্ভব হয়ে যেত।
উটের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা হলো কাটা যুক্ত গাছপালা চিবানোর ক্ষমতা, যা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। বড় বড় কাঁটাসহ ক্যাকটাস এটি সাবাড় করে দিতে পারে। অন্য কোনো প্রাণী হলে ক্যাকটাসের কাঁটার আঘাতে মাড়ি, গাল, জিভ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। কিন্তু উটের কিছুই হয় না। উটের মুখের ভেতরে এক বিস্ময়কর ব্যবস্থা রয়েছে। এর মুখের ভেতরের দিকটাতে অজস্র ছোট ছোট শক্ত আঙ্গুলের মত ব্যবস্থা রয়েছে, যা কাটার আঘাত থেকে একে রক্ষা করে। এমন এক জিভ আছে যা কাঁটা ফুটো করতে পারে না।
উটের চোখে দুই স্তর পাপড়ি রয়েছে। যার কারণে মরুভূমিতে ধূলিঝড়ের মধ্যেও তা চোখ খোলা রাখতে পারে। এই বিশেষ পাপড়ির ব্যবস্থা সানগ্লাসের কাজ করে মরুভূমির প্রখর রোদের থেকে চোখকে রক্ষা করে এবং চোখের আদ্রতা ধরে রাখে। একইসাথে এটি বিশেষভাবে বাঁকা করা যেন তা ধুলোবালি আটকে দিতে পারে।
উটের নাসারন্ধ্রে আর্দ্রতা বিশোষণের জন্য এক বিশেষ ঝিল্লিস্তর রয়েছে, যা শ্বাস ত্যাগকালে তার সঙ্গে আর্দ্রতা বেরিয়ে যেতে দেয় না। আর কোনো পশুর দেহে এ ধরনের ঝিল্লির অস্তিত্ব কখনও লক্ষ্য করা যায়নি। উটের নাসারন্ধ্রে এ ধরনের ঝিল্লি থাকার কারণে, অন্যান্য পশুর শ্বাসত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে অনিচ্ছাকৃতভাবে যে পরিমাণ আর্দ্রতা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়, তার ৬৮ ভাগ রক্ষা করা সম্ভব হয়। গবেষকরা উটের নাসিকার ব্যবচ্ছেদ করে দেখেছেন, সেখানে ১০০০ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৪০০ বর্গ ইঞ্চি পরিমিত জায়গা জুড়ে একাভিমুখী এক ঝিল্লির অস্তিত্ব রয়েছে। মানুষের ঝিল্লির আয়তন মাত্র ১২ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৪.৮ বর্গ ইঞ্চি।
উট সাধারণত ৪০-৫০ বছর বেঁচে থাকে। -সংগৃহীত
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
শীতে যে কারণে বাড়ে ফ্যাটি লিভার, সুস্থ থাকার উপায়
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দশ টাকার পুরাতন নোটের আতিয়া মসজিদ
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
গুড় খাঁটি কিনা যেভাবে যাচাই করবেন
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ধনে পাতা শুধু স্বাদ বাড়ায় না, আছে যেসব পুষ্টিগুণ
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
অবহেলিত পানিফলের যত উপকারিতা
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৯ মস্তিষ্কের অধিকারী অক্টোপাসের জ্ঞানের রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীরা
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাতমসজিদ রোডের ঈদগাহ এক অনন্য মোগল পুরাকীর্তি
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
চাঁদের মাটিতে গাছ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১৭ দিন ধরে মৃত বাচ্চাকে বহন করা সেই ‘তিমি’র বাচ্চা হয়েছে আবার
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মহাঔষধ মেথি শাক!
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সূর্যের দিকে সবচেয়ে কাছের যাত্রায় মহাকাশযান
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
১৮০০ বছর পর তুরস্কের প্রাচীন কেস্ট্রোস ফোয়ারা চালু
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)