৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা পরাজিত করলেন ৬০ হাজার কাফিরকে (৬)
, ২৫শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) আইন ও জিহাদ
পিছনে থাকা সম্মানিত মুসলমান উনারা উনাদের সম্মানিত মুজাহিদ ভাই উনাদের বিষয়ে শুরু থেকেই অস্থির ছিলেন। এক পর্যায়ে সম্মানিত আমীরুল মুজাহিদীন হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার মধ্যে লিপ্ত সম্মানিত মুজাহিদ উনাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মানিত নির্দেশ দিলেন। উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী সবাই যখন প্রস্তুত হলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘এই মুহূর্তে এটা করার প্রয়োজন নেই। আগে সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার অবস্থা কি তা খোঁজ-খবর নেয়া দরকার। তারপর অবস্থা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে।’ কিন্তু আমীরুল মুজাহিদীন হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি শত্রুদের মোকাবেলায় এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। কিন্তু রওনা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে হঠাৎ শোনতে পেলেন যে,
وإذا جيش العرب المتنصرة منهزمون وأصوات الصحابة رضي الله عنهم قد ارتفعت بالتهليل والتكبير كل ينادي أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله والعرب المتنصرة منهزمة على أعقابهم كأنما صاح بهم صائح من السماء
আরব খ্রিষ্টানরা পরাজিত হয়েছে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা উচ্চ আওয়াজে তাকবীর-তাহলীল পাঠ করছিলেন। প্রত্যেকে উচ্চ আওয়াজে বলছিলেন-
أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক উনার কোনো শরীক নেই। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ আরব খ্রিষ্টানরা তাদের প্রতিদান স্বরূপ পরাজয় বরণ করেছে। (উনারা এমন উচ্চ আওয়াজে তাকবীর-তাহলীল পাঠ করছিলেন) যেন উনাদের সাথে আসমানবাসী উনারাও উচ্চ আওয়াজ মুবারক-এ তাকবীর-তাহলীল পাঠ করছেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বিজয়ী তাকবীর ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হচ্ছিলেন। তখন বিজয়ী বীর সেনাপতি হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি শত্রুদেরকে পলায়ন করতে দেখে সম্মানিত মুসলমান উনাদের দিকে ফিরে এসে উনার সাথী উনাদের ২০ জন ব্যতীত অন্যান্য উনাদেরকে দেখতে পেলেন না।
এমন সময় সামনে অগ্রসর হচ্ছিলেন সম্মানিত আমীরুল মুজাহিদীন হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং উনার সাথে থাকা সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদীন উনারা। হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে দেখে আমীরুল মুজাহিদীন হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘হে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে সাহায্য করার জন্য এবং কাফিরদেরকে ধ্বংস করার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত প্রশংসা মুবারক করছি।’ সুবহানাল্লাহ!
হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘হে সম্মানিত আমীরুল মুজাহিদীন হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করেছেন ঠিকই; কিন্তু আপনার জন্য আনন্দের সাথে বেদনার সংবাদও রয়েছে। আমীরুল মুজাহিদীন হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘সেটা কি?’
হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘হে সম্মানিত আমীরুল মুজাহিদীন! আমি ৪০ জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে দেখতে পাচ্ছিনা, উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফুফাতো ভাই হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চাচাতো ভাই হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা দু’জনও রয়েছেন।’ এভাবে পর্যায়ক্রমে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি হারানো বাকী আটত্রিশজন উনাদের সম্মানিত নাম মুবারকও উল্লেখ করলেন।
হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এটা শুনে বললেন- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজি‘ঊন’! তখন হযরত সালামা ইবনে আহ্ওয়াছ আস সুলামী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘হে সম্মানিত আমীরুল মুজাহিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার ময়দানে খোঁজ-খবর নেয়া যেতে পারে। যদি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে সেখানে না পাওয়া যায়, তাহলে বুঝা যাবে যে, হয়তো উনারা শত্রুদের হাতে বন্দী হয়েছেন।’ সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারণে তখন অন্ধকার বিরাজ করছিল। হযরত সালামা ইবনে আহ্ওয়াছ আস সুলামী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত পরামর্শ মুবারক অনুযায়ী হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি মশাল নিয়ে আসতে বললেন। মশাল নিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার ময়দানে গিয়ে দেখা গেল, দুইজন কাফির নেতাসহ ৫ হাজার আরব খ্রিষ্টানকে কচু কাটা করে তাদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঐ দুইজন কাট্টা কাফির হচ্ছে- রিফা‘আ ইবনে মুতইম আল গাসসানী এবং শাদ্দাদ ইবনে আউস। অন্যদিকে সম্মানিত মুসলমান উনাদের মধ্য থেকে ১০ জন উনারা সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করেছেন। উনাদের মধ্য থেকে দুইজন হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনাদের নাম মুবারক উল্লেখ রয়েছেন। একজন হলেন হযরত আমির আল আউসী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, আরেকজন হলেন হযরত সালামা আল খাযরাজী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি। হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন- ‘এমন হতে পারে যে, কয়েকজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা শত্রুদের ধাওয়া করতে গিয়েছেন।’ এই কথা বলে তিনি সম্মানিত দু‘আ মুবারক করলেন, ‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি দয়া করে আমাদেরকে গায়িবী মদদ করুন এবং আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফুফাতো ভাই হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চাচাতো ভাই হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত শাহাদাত মুবারক দ্বারা আমাদেরকে ব্যথিত করবেন না।’
(পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)