দ্বীন ইসলামের বিশেষ রাত সমূহের মধ্যে একটি বিশেষ ফযীলতপূর্ণ রাত ‘পবিত্র শবে বরাত’ (২)
, ৫ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৮ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২২ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা

সুওয়াল:
(১) শবে বরাত কি? (২) এ সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ কোন বর্ণনা আছে কি? (৩) অনেকে শবে বরাত উদযাপনকে বিদয়াত ও নাজায়িয বলে থাকে। তারা কারণ স্বরূপ বলে থাকে যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও শবে বরাতের উল্লেখ নেই। আসলে কি তাই? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব (২য় অংশ):
অনেকে বলে থাকে যে, সূরা দুখান-এর উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “আমি কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ....” আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল হয়েছে তা ‘সূরা ক্বদরেও’ উল্লেখ আছে।
মূলতঃ যারা উপরোক্ত মন্তব্য করে থাকে তারা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ‘সূরা দুখান’-এ বলেছেন, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি। ” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। ”
আর ‘সূরা ক্বদরে’ যে বলেছেন, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি। ”
এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে লওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে অর্থাৎ প্রথম আসমানে বাইতুল ইয্যত নামক হজরা শরীফে একসাথে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি। ”
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে বরাতে” কুরআন শরীফ নাযিয করার সিদ্ধান্ত নেন আর শবে ক্বদরে তা নাযিল করেন।
এজন্যে মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শবে বরাতকে ليلة التجويز (লাইলাতুত তাজউয়ীয) অর্থাৎ ‘ফায়সালার রাত। ’ আর শবে ক্বদরকে ليلة التنفيذ (লাইলাতুত তানফীয) অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা শবে বরাতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
অর্থাৎ- “উক্ত রজনীতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয়। ”
হাদীছ শরীফেও উক্ত আয়াতাংশের সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فِيهَا أَنْ يُكْتَبَ كُلُّ مَوْلُودٍ مِنْ بَنِي آدَمَ فِي هَذِهِ السَّنَةِ، وَفِيهَا أَنْ يُكْتَبَ كُلُّ هَالِكٍ مِنْ بَنِي آدَمَ فِي هَذِهِ السَّنَةِ، وَفِيهَا تُرْفَعُ أَعْمَالُهُمْ، وَفِيهَا تَنْزِلُ أَرْزَاقُهُمْ
অর্থাৎ- “বরাতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যু বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে উঠানো হয় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়। ” (বায়হাক্বী, মিশকাত)
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু বলেছেন যে, বরকতময় রজনীতে সকল কাজের ফায়সালা করা হয় আর উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও যেহেতু বলেছেন যে, বরাতের রজনীতেই সকল বিষয় যেমন- হায়াত, মউত, রিযিক, আমল ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, “সূরা দুখান-এর” উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে।
(৩) বরাতের রাত উদযাপন বা উক্ত রাতে খাছভাবে ইবাদত-বন্দেগী, দোয়া-ইস্তিগফার ও দিনে রোযা রাখা ইত্যাদির নির্দেশ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফে রয়েছে।
যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ : إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ، فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا ، فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا ، فَيَقُولُ : أَلاَ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ , أَلاَ مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ , أَلاَ مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ , أَلاَ كَذَا أَلاَ كَذَا ، حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ.
অর্থ: “হযরত ইমামুল আউওয়াল আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। ” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো। ” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো। ” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন। ” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
কাজেই, শবে বরাত উদযাপন করা বা উক্ত রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদেরই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। এটা মোটেও বিদয়াত ও নাজায়িয নয়। বরং সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।
{দলীলসমূহ: (১) সূরা দুখান শরীফ (২) তাফসীরে দুররে মনছূর, (৩) তাফসীরে কুরতুবী, (৪) তাফসীরে মাযহারী, (৫) তিরমিযী, (৬) ইবনে মাজাহ, (৭) বায়হাক্বী, (৮) মিশকাত, (৯) মিরকাত, (১০) আশয়াতুল লুময়াত, (১১) লুময়াত, (১২) ত্বীবী, (১৩) তালীক্ব, (১৪) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি। }
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (৮)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (৩)
০৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ সংশ্লিষ্ট সুওয়াল-জাওয়াব (২)
০২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র রোযা সংক্রান্ত জরুরী সুওয়াল-জাওয়াব
০১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ সংশ্লিষ্ট সুওয়াল-জাওয়াব
২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (২)
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ “নূর” সম্পর্কিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা (২)
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ “নূর” সম্পর্কিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা (১)
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব : প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (১)
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ গান-বাজনা, সঙ্গীত নাজায়িজ ও হারাম (৩)
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: নামাযের মাসায়িল
৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ গান-বাজনা, সঙ্গীত নাজায়িজ ও হারাম (২)
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)