ইংরেজদের আতঙ্ক বাংলার বীর মুহম্মদ তকী খাঁ’র বীরত্ব
, ১৯ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১০ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় এবং ইন্তেকালের পর ক্ষমতায় আসে মীর জাফর। তবে যে সিংহাসনের জন্য বেনিয়া ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলিয়েছিলো মীর জাফর সেই সিংহাসনের স্থায়ীত্ব হলো মাত্র চার বছর। এরপর তাকে জোর করে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে বসানো হয় তারই জামাতা মীর মুহম্মদ কাশিম আলী খাঁ নসরত জঙ্গী বাহাদুরকে। যিনি ইতিহাসে মীর কাশিম নামেই বেশি মশহুর।
মীর কাশিম ভেতর থেকে ছিলেন ইংরেজবিদ্বেষী। তিনি চাচ্ছিলেন শেষবারের একটা চেষ্টা করে দেখতে। বাংলার মুলুক থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করা যায় কিনা। তিনি ক্ষমতায় এসে দেখলেন রাজকোষ একেবারেই শূণ্য। ইংরেজরা বিনা শুল্কে সবজায়গায় বাণিজ্য করে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। বিপরীতে স্থানীয় মুসলিম বণিকদের অত্যাচার নির্যাতন এবং পরিশেষে গুম করে দিচ্ছে।
তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আগে রাজকোষ শক্তিশালী করবেন এবং সাধারণ জনগণের উন্নয়ন করবেন। এজন্য তিনি সকল বিলাসীতা পরিত্যাগ করলেন। তিনি ভাবলেন মিশরের সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সিরিয়ার সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বাদশাহ নাসিরুদ্দিন মাহমুদ হুমায়ুন, বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি সবাই সকল বিলাসীতা ছেড়ে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে শত্রুদের দমন করেছিলেন। মীর কাশিমও উনাদেরই পথ অনুসরণ করলেন। তিনি ইংরেজদের ব্যবসায়ীদের উপর বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করলেন। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হলোনা। তখন তিনি কৌশলে বাণিজ্য শুল্কই উঠিয়ে নিলেন। এবার ইংরেজদের স্বার্থে আঘাত পড়লো। কারণ বাণিজ্য শুল্ক এদেশীয় ব্যবসায়ীদের জন্যও ছিলো। এবার উঠিয়ে দেয়ায় দেশীয় ব্যবসায়ীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলো। ইংরেজদের যেহেতু এজেন্ডা ছিলো এদেশীয় বাণিজ্য ধ্বংস করা তাই তারা মীর কাশিমের বিরুদ্ধে অবস্থা নিলো। মীর কাশিমও বুঝতে পারলেন যে, ইংরেজদের সাথে এবার যুদ্ধ ছাড়া উপায় নেই। তিনিও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকলেন।
নবাব মীর কাশিমের সেনাপতি ছিলেন সুশিক্ষিত অশ্বারোহী ও সমরবিদ মুহম্মদ তকী খাঁ। মীর কাশিমের আদেশে তিনি সেনাদল নিয়ে মুর্শিদবাদের দিকে রওনা দিলেন। অজয় নদীর তীরে ইংরেজদের সাথে তকী খাঁর যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ইংরেজদের পিছিয়ে যেতে হয়। এরপর তকী খাঁ দ্রুত কাটোয়ায় উপস্থিত হন এবং সেখানে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়। তবে এবারও সিরাজউদ্দৌলার মতো বিশ্বাসঘাতকদের কবলে পড়তে হয় তকী খাঁকে। তার সহযোগী সকল সেনাধিনায়ক ইংরেজদের কাছে বিক্রি হয়ে যায় এবং যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তিনি তখন উনার সাথে থাকা কিছু সৈন্য নিয়েই ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন।
যুদ্ধ শুরু হলো। ইংরেজরা মনে করেছিলো তকী খাঁর সামান্য সৈন্য তারা সহজেই ধরাশায়ী করবে। কিন্তু তকী খাঁর সাথে যেসকল সৈন্য ছিলো তারা সবাই ছিলো প্রচন্ড ইংরেজবিরোধী। তাই সবাই প্রাণপণে যুদ্ধ করছিলো। পুরো ময়দান ইংরেজ সৈন্যের লাশে ভরে গেলো। তকী খার অনেক বিশ্বস্ত সৈন্যও শহীদ হলো। তকী খাঁও সাথে থাকা আফগান ও মুঘল সৈন্যরাও ইংরেজদের লাশের সারি বিছিয়ে দিলো। ইংরেজরা প্রায় ধরাশায়ী। তারা পলায়নের চিন্তা করছে। ঠিক এমন সময় ইংরেজদের ছোড়া একটি গোলা এসে পড়লো তকী খাঁর পায়ের কাছে। ব্যাপক আহত হলেন। উনার প্রিয় ঘোড়াটি মারা গেলো। কিন্তু এরপরও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকলেন। দ্বিতীয় একটি ঘোড়াতে তিনি তরবারী চালাতে লাগলেন।
ঠিক এমন মুহুর্তে ইংরেজদের বন্দুকের একটি গুলি এসে তকী খাঁর ঘাড়ে এসে লাগে। গুরুতর আহত হন তিনি। এরপরও লাফিয়ে তিনি ঘোড়ায় উঠে পড়েন এবং আফগান ও মুঘল সৈন্যদের উদ্দেশ্য আরো তীব্রবেগে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। এত গুরুতর আহত হওয়ার পর উনার চেহারায় ব্যাথা-বেদনার লেশমাত্র ছিলো না। তবে উনার দ্বিতীয় ঘোড়াও মারা গেলো। এবার তিনি হুংকার দিয়ে তৃতীয় একটি ঘোড়াতে উঠে একাই ইংরেজদের ভেতর ঢুকে গেলেন। তখন সেখান থাকা শত শত ইংরেজ সৈন্য ভয়ে বন্দুক-সামগ্রী ফেলেই পালাতে শুরু করলো। তকী খাঁ একাই তাদের ধাওয়া করলেন। তবে ইংরেজরা যেহেতু ধূর্ত ও কাপুরুষ তাই তারা কিছু সৈন্যকে একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলো। ত্বকী খাঁ যখন সেই ঝোপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন তখন তারা বন্দুক দিয়ে তকী খাঁর মাথা বরাবর গুলি করলো। সাথে সাথেই শহীদ হলেন মুহম্মদ তকী খাঁ। তার শাহাদাতের সাথে সাথে বাংলার স্বাধীনতার শেষ আশাটুকুও নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)