স্থাপত্যশৈলীর বিস্ময় মদিনা-তুজ-জাহরা (২)
, ২৮ শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৩২ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১৫ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পাঁচ মিশালী
একটি সুউচ্চ প্রাচীর প্রাসাদ এলাকা ও নগরীকে আলাদা করে রেখেছিল। প্রাচীরঘেরা প্রাসাদে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদের ‘বাব আল-সুদ্দা’, বা ‘রাষ্ট্রের ফটক’-এর মধ্য দিয়ে যেতে হতো। বিশাল প্রবেশদ্বারটি প্রাসাদের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত ছিল। এর সামনে প্রধান প্রবেশপথকে ঘিরে ছিল ১৪টি বিশাল খিলান। মাঝের খিলানটি ছিল অশ্বখুরাকৃতির, যা মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার হতো। সারিবদ্ধ স্তম্ভের এ পথ ধরে সুসজ্জিত অভ্যর্থনা কক্ষের দিকে যাওয়ার সময় এক ধরনের বিস্ময় ও সম্ভ্রমের অনুভূতি সৃষ্টি হতো।
শহরের নিচের স্তরটি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। এর পূর্ব অঞ্চলটি প্রায় ৭০০ মিটার বিস্তৃত ছিল এবং এটি ছিল মদিনা-তুজ-জাহরা মূল নগর এলাকা ও সাধারণ মানুষের বসতি। সম্প্রতি খননকার্য থেকে জানা গেছে, শহরের নিম্ন অঞ্চলে একাধিক প্রবেশদ্বার ছিল। উত্তরের প্রবেশদ্বারটি সরাসরি প্রাসাদের দিকে নিয়ে যেত। দক্ষিণ প্রাচীরের মাঝামাঝি ছিল ‘বাব আল-কুব্বা’ বা গম্বুজের প্রবেশদ্বার, আর পূর্ব প্রাচীরে ছিল ‘বাব আশ-শামস’ বা ‘সূর্যের প্রবেশদ্বার’।
প্রধান ফটক পেরোলেই প্রাসাদের প্রশাসনিক এলাকা, যেখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দপ্তর ছিল। উমাইয়া খলিফারা উজির নিয়োগ করতেন। তারা খলিফার উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে রাজনৈতিক, সামরিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। যদিও তারা মূল শহরে বসবাস করতেন, তাদের দপ্তর ছিল প্রাসাদের ভেতরে ‘দার আল-উজারা’ বা উজিরদের ভবনে। প্রায় ২০০ মিটার চওড়া পশ্চিম অঞ্চলটিতে ছিল সেনাবাহিনীর ব্যারাক, যেখানে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এ অঞ্চলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ছিল ‘দার আল-জুন্দ’ বা সেনাবাহিনীর ভবন, যা সেনাবাহিনীর প্রশাসনিক ও কৌশলগত সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হতো।
মদিনা-তুজ-জাহরা খলিফাদের বাসভবন ছিল নগরের পূর্ব দিকে, যা প্রশাসনিক এলাকা থেকে কিছুটা দূরে। প্রাসাদগুলোর নকশা ছিল নগরের অন্যান্য স্থাপত্যের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। খলিফাদের নিজস্ব রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী এসব প্রাসাদ নির্মাণ হয়েছিল। প্রাসাদগুলো নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল আল-আন্দালুসের বিভিন্ন অঞ্চলের চুনাপাথর। অলংকরণে ব্যবহৃত ছিল ‘আতাউরিক’ নকশা, যা জটিল লতাপাতা, জ্যামিতিক ও শিলালিপির নকশার অপূর্ব সমন্বয় উপস্থাপন করেছিল।
তৃতীয় আবদুর রহমানের বাসভবন ছিল ‘দার আল-মুলক’। প্রাসাদটি ছিল দুর্দান্ত অলংকরণে সজ্জিত, যেখানে দরজাগুলোর নকশায় ছিল জ্যামিতিক ও পত্রলতাবিশিষ্ট নকশা। কিছু দরজা ছিল আয়তাকার, আবার কিছু ছিল খিলান আকৃতির। মেঝেগুলো ছিল জ্যামিতিক নকশায় বাঁধানো। প্রাসাদের দক্ষিণ দিকের সম্মুখভাগে ছিল তিনটি অলংকৃত দরজা, আর ওপরের অংশে ছিল প্রতীকী জানালার সারি। হলগুলোর সারিবদ্ধ দরজা উপত্যকার দূরপ্রান্তে বিস্তৃত দৃশ্যের দিকে মুখ করে ছিল। তবে খলিফা দ্বিতীয় হাকাম বাসভবনে গোপনীয়তার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এর কক্ষগুলো একটি প্রশস্ত পাথর বিছানো আঙিনার চারপাশে সাজানো ছিল। সেখানে ফোয়ারা, পানাধার ও বাগান এক শান্ত ও নির্জন পরিবেশ তৈরি করত। এ ঘনিষ্ঠ পরিবেশটি অতিথিদের জন্য এক আদর্শ স্থান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
রহস্যময় মিঠাপানির ‘বিগমাউথ বাফেলো’ মাছ, বাঁচে ১০০ বছর
৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দশ বছর ধরে শুধু কাঁচা সবজিই খাচ্ছেন আনোয়ার
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাতছড়িতে আছে একাধিক এশিয়াটিক ব্ল্যাক ভালুক
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পৃথিবীর অভ্যন্তরে এভারেস্টের ১০০ গুণ বড় দুই পর্বতের সন্ধান
২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাকাশে নতুন গ্রহ ‘এনাইপোশা’ আবিষ্কার
২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঢাকার আকাশে এক সারিতে ৪ গ্রহ
২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বরিশালের প্রাচীন কসবা ‘আল্লাহর মসজিদ’
২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্থাপত্যশৈলীর বিস্ময় মদিনা-তুজ-জাহরা (১)
২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আজারবাইজানের বকতি পর্বতমালায় সৃষ্ট নয়নাভিরাম প্রকৃতি
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাড়ে পাঁচ’শ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক গোয়ালদি মসজিদ
২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তিন দেশের সংযোগস্থল যেখানে
২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কুখ্যাত সব নৌদস্যু: একের পর এক জাহাজ লুটই ছিল যাদের নেশা
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)