সম্মানিত সারিয়্যাতুল র্কুরা বা বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনা (৬)
, ০৬ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৪ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) আইন ও জিহাদ
এক বর্ণনায় রয়েছে, রবীআ ইবনে আবূ বারা’ আমির ইবনে তুফাইলের পিছু ধাওয়া করেছিলো। তার ক্বওমের লোকদের সহযোগিতায় সে তার ভাতিজার দিকে তীর ছুঁড়তে ছুঁড়তে তাড়া করছিল। সে ইচ্ছা করেছিলো যে তাকে চিরতরে শেষ করে দিবে। কিন্তু তার আশা পূরণ হয়নি। পরে সে উটের তাউন প্লেগ (রোগের মতো এক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।) শেষে অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
স্মরণীয় যে, হযরত যাহ্হাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আমির ইবনে ফুহাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ ও উনার পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লিখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চিঠি পাঠিয়েছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিঠির জবাবে ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ الْمَلَائِكَةَ وَارَتْ جُثتَهُ وَأُنْزِلَ عِلِّيِّينَ.
অর্থ: নিশ্চয়ই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা (হযরত আমির ইবনে ফুহাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার পবিত্র জিসিম মুবারক ঢেকে ইল্লীনে নিয়ে গিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, দালায়িলূন নুবুওওয়াহ, উয়ূনুল আছার, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সম্মানিত বি’রে মাঊনাহ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে কাফির মুশরিকরা কঠিন জুলুম-নির্যাতন করে শহীদ করে। যার ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক কষ্ট পান এবং সেই সমস্ত কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদদোআও করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে কষ্ট দেয় সেসমস্ত লোকদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কঠিন লা’নত ও আযাব-গযব রয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِـى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَـهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا.
অর্থ: নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে কষ্ট দেয়, তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ৫৭)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সারিয়্যাতুল র্কুরা উনাদের সাথে কাফির মুশরিকদের ঘৃণ্য আচরণের বিষয় শুনলেন তখন তিনি হুজনী শান মুবারক গ্রহণ করলেন। এমন হুজনী শান মুবারক গ্রহণ করলেন যা তিনি আর অন্য সময় গ্রহণ করেননি। এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ফজর নামায বাদ প্রায় একমাস কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন।
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَنَتَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرًا حِيْنَ قُتِلَ الْقُرَّاءُ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَزِنَ حُزْنًا قَطُّ أَشَدَّ مِنْهُ.
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনায়) হযরত ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের পর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ফজর নামাযের পর এক মাস যাবৎ কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন। (বর্ণনাকারী বলেন,) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি আর কখনো এর চেয়ে অধিক হুজনী শান মুবারক প্রকাশ করতে দেখিনি। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ১৩০০, শরহে ইবনে বাত্বাল, উমদাতুল ক্বারী, ফয়জুল বারী)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মাস মতান্তরে চল্লিশ দিন কুনূতে নাযিলা পাঠ করার পর আর কখনও তা পাঠ করেননি। বরং কুনূতে নাযিলা পাঠ করা ছেড়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَنَتَ شَهْرًا يَدْعُوْ عَلَى عُصَيَّةَ وَذَكْوَانَ وَرِعْلٍ وَلِحْيَانَ
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উছায়্যাহ, যাকওয়ান, রি’ল ও লিহ্ইয়ান গোত্রের উপর বদদোয়া করার লক্ষ্যে একমাস কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন। (মুসনাদে আবূ ইয়া’লা, সুনানে কুবরা লিল-বাইহাক্বী, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, উমদাতুল ক্বারী, মাআনিল আছার) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)