সম্মানিত সারিয়্যাতুল র্কুরা বা বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনা (২)
, ০২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
এ কাফিলা বি’রে মাঊনাহ নামক স্থানে পৌঁছে রওয়ানা বিরতী করেন। বি’রে মাঊনাহ একটি কূপের নাম। এ কূয়াটি বানূ আমিরের আবাসভূমি ও বানূ সুলাইমের প্রস্তরময় এলাকার মাঝখানে অবস্থিত। উভয় এলাকাই কূয়াটির নিকটবর্তী ছিলো, তবে বানূ সুলাইমের আবাস ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি কাছে। বানূ আমির গোত্রের সরদার আমির ইবনে তুফায়িল ছিলো আবূ বারার ভ্রাতুষ্পুত্র। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাট্টা কাফির আমির ইবনে তুফায়িলের নামে একটি পত্র মুবারক লিখেন এবং তা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। যখন এ কাফিলা বি’রে মাঊনাহ এলাকায় পৌঁছেন তখন এ পত্র মুবারক হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মামা হযরত হারাম ইবনে মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে পৌঁছানো হয়, উনাকে এ পত্র মুবারকখানা আমিরের নিকট পৌঁছানোর দায়িত্ব দেয়া হয়।
হযরত হারাম ইবনে মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন পত্র মুবারকখানা নিয়ে আমিরের মজলিসে উপস্থিত হলেন তখন সেই দুরাচার পত্র মুবারকখানা পড়ার পূর্বেই মজলিসে উপস্থিত অপর এক ব্যক্তিকে ইশারা করতঃ হযরত হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করার আদেশ করে, লোকটি হযরত হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিছনে দাঁড়ানো ছিলো। পিছন থেকে সে একটি ছোট বর্শা নিক্ষেপ করলো। বর্শাটি হযরত হারাম ইবনে মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দেহ মুবারক ভেদ করে সম্মুখে দিয়ে বের হয়ে আসলো, তিনি শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করলেন। উনার শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার সময় তিনি বলে উঠেন-
فُزْتُ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ
অর্থ: “পবিত্র কা’বা শরীফের রব উনার ক্বসম! আমি কামিয়াব।”
এরপর কাট্টা কাফির আমির ইবনে তুফায়িল তার গোত্রের লোকদেরকে অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে শহীদ করতে প্ররোচিত করলেও তারা আবূ বারার নিরাপত্তা দানের প্রেক্ষিতে আর কাউকে শহীদ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা বলল, আমরা আবূ বারার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারব না। সে উনাদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। অগত্যা সে বানূ সুলাইমের শাখা উসায়্যা, রি’ল ও যাকওয়ান গোত্রের সহযোগিতা চাইলো। তারা সাহায্য করতে সম্মত হলো এবং সেই মুহূর্তে তারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তারা দেখামাত্র তরবারি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং অপর দিকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও জিহাদ মুবারক করতে করতে সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের উপর বেমেছাল রহমত মুবারক বর্ষণ করুন। আমীন।
তবে একমাত্র হযরত কা’ব ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি গাযী হিসাবে ফিরে আসেন। তিনি ছিলেন দীনার ইবনে নাজ্জার গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তি। কাফির মুশরিকরা উনাকে শহীদ হয়েছেন ভেবে রেখে গিয়েছিল। তারপর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। অবশেষে তিনি সম্মানিত খন্দক জিহাদে সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নবুওওয়াহ, আল মু’জামুল কাবীর লিত-ত্ববারানী, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, শরহে কুসত্বলানী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, তারিখুল খ্বামীস, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক)
কাফির মুশরিকদের এ আক্রমণের সময় দু’জন সম্মানিত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা পশুপাল চরানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। একজন হযরত আমর ইবনে উমাইয়া দ্বামরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, অপরজন আমর ইবনে আওফ গোত্রের জনৈক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার নাম মুবারক হযরত মুনযির ইবনে মুহম্মদ ইবনে উকবা ইবনে উহাইহা ইবনে জুলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা উনাদের সঙ্গী-সাথী উনাদের সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের বিষয়টি টের পাননি। কিন্তু যখন উনাদের সম্মুখে ঘটনাস্থলে এক ঝাঁক পাখি উড়তে দেখলেন, তখন উনাদের সন্দেহ হলো। উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই পাখিগুলো উড়ার পিছনে কোন না কোন রহস্য আছে। উনারা বিষয়টি দেখার জন্য অগ্রসর হলেন। উনারা দেখতে পেলেন উনাদের সাথী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সবাই রক্তের উপর অবস্থান মুবারক করছেন। কাফির মুশরিক ঘাতকরাও সেখানে উপস্থিত। তখন আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ করে বললেন, আপনার মত কি? এখন আমাদের কি করা উচিত? হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জবাবে বললেন, আমার মতে আমাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ সংবাদ মুবারক জানানো উচিত। (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)