মন্তব্য কলাম
শুধু চামড়াই নয়, কুরবানির পশুর উচ্ছিষ্টও মহামূল্যবান কুরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট সঠিকভাবে সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের আয় হতে পারে ১ লাখ কোটি টাকা কুরবানির পূর্ব থেকেই তাই এ খাতের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।
, ০৭ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মন্তব্য কলাম
চামড়া দিয়ে যেমন ট্যানারি শিল্প গড়ে উঠেছে, তেমনি এই ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য দিয়েও লাভজনক শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা সরকারকে পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়ে এ ধরনের উদ্যোগ যাচাই বাছাই করার পরামর্শ দিচ্ছেন। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এমন সব উদ্যোগে সহযোগিতা করতে চান ট্যানারি মালিকরাও। দেশে প্রতিবছর ৬০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ট্যানারি বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার প্রায় সবটুকুই ফেলা হয় যত্রতত্র; যা পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে, কোন উচ্ছিষ্টাংশই ফেলনা নয়, একটু যতœবান হলে এসব বর্জ্যরে প্রায় শতভাগই হতে পারে নতুন কোন মূল্যবান সামগ্রী তৈরির উপাদান।
উল্লেখ্য, কাঁচা চামড়া ট্যানারিতে নেয়ার পর মোটা দাগে তিন ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে কাঁচা চামড়ার ট্রিমিংস দিয়ে গ্লু ও ওষুধ শিল্পে দরকারি জিলেটিন, লাইম ফ্লেশিং ঝিল্লি দিয়ে জৈবসার আর শেভিং ডাস্ট দিয়ে পুনরায় চামড়া তৈরি করা সম্ভব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয় তার একটিও কার্যকর হলে একদিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ, অন্যদিকে এক শিল্পের বর্জ্য হয়ে উঠবে অন্য শিল্পের কাঁচামাল। আর গবেষণা মতে- এই ট্যানারি বর্জ্যরে প্রক্রিয়াকরণ বস্তুসমূহের আন্তর্জাতিক বাজার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যা ধরার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।
অন্যদিকে, ট্যানারি শিল্পের চেয়েও মহাসম্ভাবনায় অর্থনৈতিক দিক হচ্ছে প্রতিবছর পবিত্র কুরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট। পবিত্র কুরবানীর পশুর গোশত আর চামড়ার কদর সবারই জানা। কিন্তু আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া পশুর হাড়, শিং, অন্ডকোষ, ভুঁড়ি, মূত্রথলি, পিত্তথলি, পাকস্থলী, রক্ত ও চর্বি কোনো কিছুই ফেলনা নয়। পশুর এসব উচ্ছিষ্ট অঙ্গ ওষুধ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল এবং রফতানীযোগ্য হওয়ায় বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, প্রতিদিন এই হাড় নিয়ে বাণিজ্য হয় ২০ থেকে ৩০ লাখ এবং নাড়িভুঁড়ি বিক্রি হয় ১৫ লাখ টাকার। শুধুমাত্র কুরবানীর ঈদ ও পরবর্তী ১ মাসে সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন পশুর হাড় সংগ্রহ করা হয়। বার্ষিক হিসেবে তাতে শুধু হাড় ও নাড়িভূড়ি বিক্রিতেই বাণিজ্য হয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার। অন্যদিকে, গরুর শিং বিক্রিতেই প্রতিবছর প্রায় ৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বাংলাদেশ বোন এক্সপোর্টার অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, প্রতিদিন এই হাড় কেনা-বেচায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। হাড় বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে রাজধানীর হাজারীবাগের গজমহল রোড ও কালুনগর রোড এলাকায় গড়ে উঠেছে হাড্ডি পট্টি।
বছর দশেক আগে রাজধানীর হাজারীবাগের কয়েকজন ব্যবসায়ী এই হাড়গোড়ের ব্যবসা শুরু করে। পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে হাড়ের ব্যবসা। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ জেলা পর্যায়ে ৬০টি কারখানা হাড় কিনে প্রক্রিয়াজাত করছে। শুধু কুরবানীর ঈদেই কয়েক হাজার টন হাড় সংগ্রহ করে মোট চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ পূরণ করা হয়। কুরবানী উপলক্ষে এসব হাড় সংগ্রহ আর বিক্রিতে প্রায় ২ লাখ শ্রমিক কাজ করে। শুধু জবাই করা পশুর ফেলে দেয়া হাড়গোড় সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানী করে ৩০০ কোটি টাকা আয় সম্ভব।
সেইসাথে পশুর পাকস্থলি একটু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিলেই পিছপ্রতি এর দাম দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ ডলার। গরু, মহিষ, ভেড়া, খাসির অন্ডকোষের পাউডার চীন, জাপান ও কোরিয়া, মিয়ানমার ও হংকংয়ে রফতানী করা হয়। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকেও আসতে পারে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। প্রতিটি গরু থেকে গড়ে ২০ কেজি হাড় ও ৫ কেজি অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায়। দেখা গেছে, বছরে গরুর উচ্ছিষ্টই উৎপন্ন হয় প্রায় ২৫ কোটি কেজি। অথচ এসব অঙ্গের মাত্র ১০ শতাংশও রফতানী করা সম্ভব হয় না। যদি রফতানি করা যেত তাহলে তা থেকেও প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্য সম্ভব হতো।
জানা গেছে, দেশে মোট প্রায় ২শ’টি ওষুধ কোম্পানি ও হারবাল প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য প্রতিমাসে ৪০ থেকে ৪৫ কোটি ক্যাপসুল সেলের চাহিদা রয়েছে। অপসোনিন গ্লোবাল ক্যাপসুল সেল গুঁড়া করা হাড় থেকে তৈরি করে ক্যাপসুলের সেল। এসব কাজে প্রতি মাসেই প্রয়োজন হয় কয়েকশ’ টন পশুর হাড়। পাকিস্তান, আমেরিকা, ইউক্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, সউদী আরবসহ ১৭টি দেশে প্রতি মাসে প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি ক্যাপসুল সেল রফতানী হচ্ছে।
বলাবাহুল্য, সরকারের অবহেলা, অসচেতনতা এবং মিডিয়াগুলো এসব প্রচার না করায় গবাদি পশুর হাড়গোড়, ক্ষুর, শিং, লেজ কিংম্বা রক্ত- এসব হাজার কোটি টাকার সম্পদ উচ্ছিষ্ট হিসেবে স্থান হয় আবর্জনার ডাস্টবিনে। যার কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। সরকার সচেতন হলে এ খাত হতে বিপুল টাকা রফতানী আয় সম্ভব। কুরবানীর পশুর উচ্ছিষ্টের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে দেশ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের সব স্থানের জবাইকৃত পশুর উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করতে পারলে আয় হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
আর এর জন্য প্রয়োজন সরকারি উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা। যদিও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার পরও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এসব বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং সামান্য কিছু পরিমাণ বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করা শুরু করেছে। কিন্তু তাও নামমাত্র এবং নিতান্তই কম। যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কুরবানীর এসব বর্জ্য আধুনিক উন্নত উপায়ে সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা যায়, তাহলে এই বর্জ্যই রূপান্তরিত হবে সম্পদে। যা থেকে দেশের অর্থনীতির এক বিশাল আয়ের পথ উন্মোচিত হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাপবিত্র রওজা শরীফ ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফের পবিত্র ভূমি জাজিরাতুল আরবকে অপবিত্র করে দিন দিন পরিণত করা হচ্ছে অবাধ পাপাচারের পঙ্কিলরাজ্যে নাউযুবিল্লাহ! কা’বা শরীফের আদলে তৈরি মঞ্চে চলছে খোলামেলা পোশাকে ফ্যাশন শো, উদ্দাম কনসার্ট, বিক্রি হয়েছে ৩৬ লাখ কোটি টাকার ভারতীয় সিনেমার টিকিট; পালিত হচ্ছে হ্যালোইনও! নাউযুবিল্লাহ!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ : কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা ও ক্বিয়ামতের তথ্য
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার অনবদ্য তাজদীদ ‘আত-তাক্বউইমুশ শামসী’ সম্পর্কে জানা ও পালন করা এবং শুকরিয়া আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরয। মুসলমান আর কতকাল গাফিল ও জাহিল থাকবে?
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: ভয়ঙ্কর জেদ, মহা দাম্ভিকতা, চরম সীমালঙ্ঘন, প্রতিহিংসা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ইত্যাদি কুরিপুর কারণে সরকারের পতন কিন্তু কুরিপুর সংজ্ঞা, প্রতিকার, পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়ার বর্ণনা সংবিধানে তথা রাষ্ট্রীয় কোন কিতাবে নেই তাহলে রাষ্ট্রের সংস্কার হবে কীভাবে? নাগরিক সুরক্ষা হবে কেমনে?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচারণার বিপরীতে রপ্তানি আসলে কতটা চাঙা হবে প্রকৃত রপ্তানি আয় আসলে কত? ১০ বছরে রপ্তানি বেশি দেখানো হয়েছে ৬৫ বিলিয়ন ডলার পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়নের রাজনীতির মিথ্যাবুলি, মহা সাগর চুরি আর অর্থপাচারের নিকৃষ্ট কাহিনী
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা।
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১লা জানুয়ারি ২০২৫ থেকে সুইজারল্যান্ডে মুখ ঢেকে রাখলেই প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা (নাউযুবিল্লাহ) বোরকা পড়াকে সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপীয় দেশ পর্দার আড়ালে নারীদের বন্দী, বৈষম্য এবং পিছিয়ে পড়ার অপবাদ দিলেও বাস্তবতা হচ্ছে গোটা ইউরোপ-আমেরিকায় নারীর প্রতি বৈষম্য হয়রানি, সহিংসতা, অত্যাচার আর ব্যভিচারের মাত্রা ভয়াবহ পশ্চিমাদের বোরকা নিষিদ্ধের প্রবনতা শুধুই ইসলাম আর মুসলিম বিদ্বেষ (পর্ব-১)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)