বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১)
, ২২ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২০ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে সমস্ত ঘটনা পেশ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
لَقَدْ قَتَلْتَ قَتِيْلَيْنِ لَأَدِيَنّهُمَا.
অর্থ: আপনি যে, দু’ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন আমাকে তাদের রক্তপণ (দিয়াত) পরিশোধ করতে হবে। (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরতে ইবনে হিশাম, উয়ূনুল আছার ফি ফুয়ূনিল মাগাযী, জাওয়ামিউস সীরাত, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিলু ফিত্-তারিখ)
উল্লেখ্য যে, বানূ নাযীর গোত্রও বানূ আমির গোত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। এই রক্তপণ আদায়ের ক্ষেত্রে তারাও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসারী। এজন্য তাদেরও রক্তপণ আদায় করা চুক্তির শর্ত মোতাবেক জরুরী ছিল। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্তপণের নির্ধারিত অংশ আদায়ের উদ্দেশ্যে বানূ নাযীর গোত্রের এলাকায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। সে সময় উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, হযরত জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ উবাইদাহ ইবনে র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ আরো কতক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। (সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহুদীদের রক্তপণ (বা দিয়্যাত) আদায়ের উদ্দেশ্যে যখন তাদের এলাকায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন তখন তারা বললো, আপনি যা ফায়সালা করবেন সে ব্যাপারে আমরা আপনার ফায়সালা মুবারক মেনে নিবো।
এরপর দেখা গেল ইহুদীরা পরস্পর মিলিত হলো। তারা বলাবলি করলো, দেখ এরূপ সুযোগ আর হাতে আসবে না। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের একটি ঘরের দেয়ালের পাশে অবস্থান মুবারক করছিলেন।
উল্লেখ্য যে, বানূ নাযীর গোত্রের লোকেরা বাহ্যিকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালো, তিনি যে রক্তপণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে তারা সম্মতি প্রকাশ করল এবং তা যথাশীঘ্রই আদায়ের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। কিন্তু তাদের বিপরীত রূপ ছিলো ভিন্ন ধরনের। তারা ভিতরে ভিতরে ষড়যন্ত্র করল যে, তাদের এক ব্যক্তি সকলের চোখের আড়ালে দেয়ালে উঠে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর বড় ভারী পাথর ছেড়ে দিবে, এই পাথর চাপায় পড়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীদারে ইলাহীতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! তাদের একজন সাল্লাম ইবনে মিশকাম বলল-
لَا تَفْعَلُوْا، وَاللهِ لِيَخْبِرَنَّ بِمَا هَمَمْتُمْ وَإنَّهُ لِيِنْقُضَ الْعَهْدَ بَيْننَا وَبَيْنَهٗ،
অর্থ: তোমরা এমনটা করো না, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তোমরা যা করতে চাচ্ছ সে বিষয়টি জানিয়ে দিবেন, আর এটা উনার সাথে আমাদের সম্পাদিত চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন (দেখা গেলো ইহুদীরা তার কথা শুনলো না। ) (উমদাতুল ক্বারী, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তারা যখন বলাবলি করছিল, কে আছে যে এই ঘরের ছাদে উঠে উনার উপর একটি পাথর গড়িয়ে দিবে এবং এভাবে উনার কবল থেকে আমাদেরকে নিষ্কৃতি দিবে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! আমর ইবনে জিহাশ ইবনে কা’ব নামক তাদের এক দুরাচার লোক এতে সাড়া দিল। সে বলল, আমি প্রস্তুত। নাউযুবিল্লাহ! প্রস্তাব মত সে পাথর গড়িয়ে দেয়ার জন্য ছাদে উঠল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখনও তিনি ঘরের নীচে অবস্থান মুবারক করছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে তখন উপস্থিত ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিসহ আরো কতিপয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)