মন্তব্য কলাম
বাংলাদেশের শিক্ষার মান ক্রমশই নিম্নমুখী। সার্টিফিকেট ও মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রতে পরিণত হচ্ছে শিক্ষা। কর্মমূখী ও বাস্তবিক শিক্ষার অভাবে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠছে না বাংলাদেশে। সরকারের উচিত, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
, ২৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মন্তব্য কলাম
কোনো দেশের শিক্ষার মান যদি নি¤œ হয় তাহলে তা শিক্ষার্থীদেরকে যোগ্যতার দিক থেকে বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী করে রাখে। এতে করে যত রকম আয়োজন কিংবা উদ্যোগই গ্রহন করা হোক না কেন সেই শিক্ষা ব্যর্থ শিক্ষায় পর্যবসিত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের শিক্ষার মান ক্রমশ নি¤œমুখী। দেশের পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে ফলাফল বিস্ফোরণ লক্ষ্য করা গেলেও গুণগত মান নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, যে শিক্ষকগণ বোর্ডের খাতা মূল্যায়ন করে তাদের প্রতি মৌখিক নির্দেশ থাকে পাশের হার বাড়ানোর জন্য যতটা সম্ভব ছাড় দিয়ে খাতা দেখতে হবে। গ্রেস নম্বর দিয়ে হলেও শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দিতে হবে। এতে পাশ বাড়লেও দেশে যে শিক্ষার মানের চরম অবনমন ঘটছে তা আমাদের নীতি নির্ধারকগণ দেখছে না। পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষা শিক্ষার্থীর তাত্তিক জ্ঞানকে বৃদ্ধি করছে; কিন্তু বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ ঘটাতে পারছে না। অর্থাৎ প্রায়োগিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাফল্য আসছে না।
বর্তমানে দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা প্রচলিত। তার সঙ্গে কারিগরি, প্রকৌশলী, ডাক্তারি, ভোকেশনাল ইত্যাদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে দেশে এখনো ব্যাপকভাবে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটেনি। প্রচলিত পন্থায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়েও লাখ লাখ যুবক বেকার হয়ে চাকরির সন্ধানে পথে পথে ঘুরছে। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এশিয়ায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে কর্মমুখী শিক্ষা যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। এমনকি ভারতে যেখানে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ৫% কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত। যেখানে বাংলাদেশে তার পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশেরও কম। অর্থাৎ দেশের শিক্ষাকে সার্টিফিকেট নির্ভর করে রাখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল সর্বসাকুল্যে ছয়টি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ত্রিশ লাখ শিক্ষার্থী দেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। দেশে গড়ে উঠেছে ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর আছে ৩৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৬ হাজারেরও বেশি কলেজ রয়েছে। এই কলেজগুলোতে আনুমানিক সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার পরও এসবে শিক্ষার জন্য চাহিদা আর যোগান দুটির মধ্যে পার্থক্য বিশাল। যার ফলে এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিয়ে উচ্চশিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে এবং তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, জ্ঞান বিতরণের ব্যবস্থা করা নয়; বরং এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন।
শ্রেণীকক্ষে মানসম্মত শিক্ষা এখন অতীত। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থীদের কাছে বোধগম্য করে তোলার পরিবর্তে বিষয়ের কাঠিন্যকে বড় করে তুলে প্রাইভেট থেরাপি অত্যাবশ্যক করে তুলছে। ফলে শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারগুলোতে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, কোচিং সেন্টারওয়ালা শিক্ষকগণ বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং বাণিজ্য করে থাকে। আর কোচিং সেন্টারগুলোতেও বাস্তবিক ও কারিগরি কোনো শিক্ষাই প্রদান করা হয় না। তাদের মূল উদ্দেশ্যই থাকে মুনাফা। ফলে শিক্ষা এক তরফা মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে মানসম্মত শিক্ষার আরো অন্যতম একটি কারণ অদক্ষ শিক্ষক। অনেক সময় শিক্ষক নিয়োগের সময় মেধাকে গুরুত্ব না দিয়ে দলীয় পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়া অথবা কোনো শিক্ষকের সঙ্গে ভাল সম্পর্কই নিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে ওঠে। ফলে তদবির কিংবা রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডনির্ভর শিক্ষক নিয়োগের কারণে শিক্ষার্র্থীদের টেকসই শিক্ষা প্রদানে গুরুত্বই দেয় না শিক্ষকরা। তাদের মূল আকর্ষণই থাকে গৎবাধা পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং অর্থ উপার্জন। আবার অনেক সময় শিক্ষকরা প্রকৃত শিক্ষা আর ক্লাসে পাঠদানের মধ্যে তফাৎ বোঝে না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও একই অবস্থা। শিক্ষক হয়ত অনেক বিষয়ে জানে, কিন্তু তা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারে না।
প্রসঙ্গত, সার্টিফিকেট এবং বাণিজ্যনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব না হওয়ায় বিদেশীরা এসে বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে লক্ষ্যগত অসঙ্গতিও রয়েছে। বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যে ধরনের জনসম্পদ প্রয়োজন, শিক্ষার্থীদের সে আলোকে তৈরি করা প্রয়োজন। যদিও সেটি করা হচ্ছে না।
চাকরির বাজারে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু বিভাগে অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। আবার চাহিদা থাকলেও বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রকৌশলের মতো বিভাগে আসন বাড়ানো হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বেশি ৩০.৫% রয়েছে কলা ও মানবিকে। অথচ চাকরির বাজারে এর চাহিদা মাত্র ১৩.৭%। অর্থাৎ এ শাখায় প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। অন্যদিকে বিজ্ঞানশিক্ষায় ২৩.৯% শিক্ষার্থীর চাহিদা থাকলেও এতে অধ্যয়নরত মাত্র ৮%। ফলে বিজ্ঞান শিক্ষায় এখনো ঘাটতি রয়েছে ১৫.৯% শিক্ষার্থীর। অথচ চীন, জাপান ও জার্মানির মতো দেশ তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি ও কলকারখানাকেন্দ্রিক শিক্ষিত জনবল তৈরি করেছে।
আমরা মনে করি, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করা এবং শিক্ষাকে কর্মমুখী করার কোনো বিকল্প নেই। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চাকরির বাজারকে অর্থাৎ কোন ধরণের প্রতিষ্ঠানে কতজন লোক লাগতে পারে- এ তথ্য-উপাত্তকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা নীতিমালা গ্রহণ করা উচিত। আর কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষা ছাড়াও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার দরকার রয়েছে। অন্যথায় কথিত শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। যা দেশ ও জাতির জন্য সম্পদ না হয়ে বোঝাস্বরূপ হয়ে উঠছে। যত দ্রুত এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় দেশ ও জাতির জন্য ততই তা ভালো। আমরা সরকারের সঠিক বোধোদয় কামনা করি।
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
‘মানুষ বাড়ে কিন্তু জমি বাড়ে না’- এ ধারণা মহাভুল। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে বাংলাদেশের জমি বাড়ছে। বাংলাদেশের পাশে জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গঃ সম্মানিতা হুর, গেলমানের আলোচনায় কুণ্ঠা। তার বিপরীতে অশ্লীল শব্দ আওড়াতে স্বতঃস্ফূর্ততা
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দেশের ৮২ শতাংশ উচ্চ মেধাবী তরুণ উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়ে আর ফিরছে না। পাশাপাশি বিদেশে পড়াশোনার নামে অর্থও দেদারছে পাচার হচ্ছে। বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী এনে দেশের জন্য যারা কাজ করতে চান তাদের জন্য নেই কোনো সুযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা।
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম অন্যান্য ধর্মের সাথে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সহাবস্থানে থাকতে পারে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম কখনোই কথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র অধীন হতে পারে না।
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কর্মক্ষম জনশক্তি তথা কর্মক্ষমতার স্বর্ণযুগে বাংলাদেশ অথচ যথাযথ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদেশে কর্মরত দেশীয় শ্রমিক স্বদেশে তো ফিরবেই পাশাপাশি বিদেশি কর্মশক্তি বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বাড়ছে পরকীয়া, বাড়ছে তালাক সমাজে বাড়ছে কলহ-বিবাদ, শিথিল হয়ে পড়ছে পারিবারিক বন্ধন দ্বীনী মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চলচ্চিত্র নামক জাহান্নামী সংস্কৃতির ফাঁদে মুসলিম উম্মাহ। নাটক-সিনেমার মাধ্যমে মুসলিম প্রজন্মকে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিনেমার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিস্তার ঘটছে ইসলামোফোবিয়ার।
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাংলাদেশ কার্যত গ্যাসের উপর ভাসছে তাই আমদানির চিন্তা বাদ দিয়ে তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে ইনশাআল্লাহ
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিই মুসলমানদের জন্য উন্নয়ন হিসেবে গৃহীত হতে পারেনা। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ নয়; নিদেন পক্ষে মধ্যম ত্বাকওয়ার মুসলমানের দেশ চাই।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম মদের বিরুদ্ধে দিয়েছে অসংখ্য সতর্কবাণী ও নির্দেশনা। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে দেয়া হবে মদের লাইসেন্স! মদ-জুয়ার প্রসার মহান আল্লাহ পাক উনার চরম অসন্তুষ্টির কারণ। যার পরিণতি হতে পারে খোদায়ী গযব। নাউযুবিল্লাহ!
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
খোলা চিঠি ও উদাত্ত আহ্বান “পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ”, “পবিত্র সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম শরীফ”, “পবিত্র সাইয়্যিদে ঈদে আকবর শরীফ” “পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনার শামসী তারিখ- ১৯ রবি’ আর খৃঃ তারিখ- ১৬ সেপ্টেম্বর; রোজ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)