ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৮)
, ০৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ফতওয়া বিভাগ
নীচের ঠোট ও থুৎনীর মধ্যবর্তী ছোট ছোট দাড়িকে নীম দাড়ি বা বাচ্চা দাড়ি বলা হয়। অনেকে এ দাড়ির আহকাম না জানার কারণে তা কেটে ফেলে বা চেছে ফেলে। অথচ শরীয়তের হুকুম মোতাবেক উক্ত নীম দাড়ি ছাটা বা কাটাও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও মাকরূহে তাহরীমী।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ আছে যে-
وَنَتْفُ الْفَنْبَكَيْنِ بِدْعَةٌ وَهُمَا جَانِبَا الْعَنْفَقَةِ وَهِيَ شَعْرُ الشَّفَةِ السُّفْلَى كَذَا فِي الْغَرَائِبِ وكذا فى الشامى
অর্থ: নীচের ঠোটের নিম্নবর্তী লোম বা কেশসমূহ ছাটা বা কাটা বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ অনুরূপ গারায়েব ও ফতওয়ায়ে শামীতেও উল্লেখ আছে।
আর বুখারী শরীফ উনার শরাহ ফায়জুল বারীতে উল্লেখ আছে যে-
فإنَّ قطعَ الأشعار التي على وسط الشَّفة السُّفلى، أي العَنْفقة، بدعة،
অর্থ: ঠোট ও থুৎনীর মধ্যবর্তী কেশ বা লোম দাড়ির অর্ন্তভুক্ত। তাও কাটা ও ছাটা বিদয়াত। (৪র্থ খ- পৃষ্ঠা ৩৮০) অনুরূপ “আল মানহাল” কিতাবেও উল্লেথ আছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, নীম দাড়ি বা বাচ্চা দাড়ি কাটা বা ছাটা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও মাকরূহে তাহরীমী। এর থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দাড়ির উপকারিতা:
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দাড়ির গুরুত্ব, তাৎপর্য ও আহকাম সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও দাড়ির জন্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমর্থনের অবকাশ রাখে না। তথাপিও যারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের কিছুটা বুঝ দেয়ার জন্যেই এখানে এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা হলো-
ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দাড়ি হলো পুরুষের সৌন্দর্যের প্রতীক এবং বক্ষদেশের হিফাযতকারী।
আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও দাড়ির বহু ফায়দা পরিলক্ষিত। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের বক্তব্য হলো-দাড়ির উপর বার বার ক্ষুর চালালে চোখের শিরার ক্ষতি হয়, যার ফলে চোখের জ্যোতি হ্রাস পেতে থাকে। এক জনৈক ডাক্তার বলেছে যে, লম্বা দাড়ি রোগ জীবানুকে গলা ও বক্ষ পর্যন্ত পৌঁছতে বাধা দেয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্য হলো- সাত পুরুষ পর্যন্ত যদি দাড়ি মু-নের বদ অভ্যাস থাকে, তবে অষ্টম পুরুষের লোকদের মুখে দাড়ি উঠবে না।
দাড়ি সম্পর্কে আমেরিকান চিকিৎসকদের ভাষ্য হলো, জনৈক লেখক, দাড়ি মু-নের বৈদ্যুতিক যন্ত্র প্রস্তুত করার জন্যে জোর দিয়েছে, যেন কাজটি তাড়াতাড়ি সমাধা করা যায় এবং সময় বাঁচে। আমরা বুঝি না, দাড়ির ব্যাপারে মানুষের এত আপত্তি কেন? মাথায় যদি চুল রাখা যায়, মুখে দাড়ি রাখতে অসুবিধা কোথায়? মাথার কোন স্থানে চুল না উঠলে টাকে খাওয়ার লজ্জা হয়, কিন্তু চেহারাকে টাক পড়ার মত বানাতে লজ্জা হয় না। মূলতঃ এ দাড়ি পুরুষত্বের লক্ষণ। দাড়ি ও গোঁফ মানুষের চেহারাকে পৌরুষদীপ্ত, প্রত্যয়ী ও দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন করে তোলে এবং পুরুষত্বের পরিচয় বহন করে। দাড়ি পুরুষকে নমনীয় তথা মেয়েলী ভাব হতে পৃথক রাখে, নতুবা শরীরের অন্যান্য স্থানের চুলগুলো তো নারী-পুরুষের প্রায় সমান। বস্তুতঃ মহিলারা দাড়ি ও গোঁফের খুব ভক্ত, যে কারণে দাড়িবিহীন পুরুষের চেয়ে দাড়িওয়ালা পুরুষের প্রতি অধিক আকৃষ্ট। যদিও মনে করা হয় যে, দাড়ি, গোঁফ তাদের ভাল লাগে না, এটার একমাত্র কারণ, আধুনিক ফ্যাশনের প্রতি অন্ধ অনুরাগ। অথচ এ দাড়ি ও গোঁফের কারণে ক্ষতিকর ধুলা-বালি ও রোগ-জীবানু নাক ও মুখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে না, মূলতঃ উহা চালুনির ন্যায় কাজ দেয়। তাছাড়া ঘন ও দীর্ঘ দাড়ি গলাকে সর্দি কাশি হতে বাঁচায়।
এখানে উল্লেখ্য যে, চিকিৎসকরা দাড়ি মু-নকে চেহারায় টাক পড়া ফ্যাশনের গোলামী ও নারীসুলভ আচরণ বলে দাবি করেছে, তাদের মতে দাড়ি মু-ন সর্দি, কাশির অন্যতম কারণ।
অতএব, চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি পুরুষের স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত ফায়দাজনক বা উপকারী। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- দাড়ি রাখা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ মুবারকের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ ফরয-ওয়াজিব, আর কাটা হারাম। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক পালন করার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়াবী ও উখরবী, জিসমানী ও রূহানী ফায়দা বা উপকারিতা। আর উনাদের নির্দেশ অমান্য করাই হচ্ছে নানাবিধ ক্ষতির কারণ। অতএব, শরীয়ত উনার কোন বিষয়ের উপরেই বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না, সর্বক্ষেত্রেই শরীয়ত উনার নির্দেশ বা আহকামকে প্রাধান্য দিতে হবে। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)