গাজী উসমান পাশা: ঐতিহাসিক প্লেভনা যুদ্ধে রাশিয়াকে হারানো উসমানীয় জেনারেল
, ০৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৩ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস

১৮৩২ সালে তুরস্কের উসমানী সালতানাতের তোকাত অঞ্চলে উসমান নূরী পাশা জন্মগ্রহণ করেন। যিনি পরবর্তীতে গাজী উসমান পাশা নামে পরিচিতি পান। তার জীবন দুঃসাহসী সব অভিযান আর বীরত্বে ভরপুর। যে কারণে শত্রুরাও তাকে সমীহ করতো। তাদের মধ্যে আছে রাশিয়ার শাসক আলেকজান্ডারও। ১৮৭৭ সালে রাশিয়া-উসমানীয় যুদ্ধে প্লেভনা শহর অবরোধের সময় তিনি অসম এক লড়াইয়ের মুখোমুখি হোন। ওই যুদ্ধে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলো তৃতীয় আলেকজান্ডার।
প্লেভনা শহর রক্ষার এই যুদ্ধে পাশার দেখানো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সামরিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত করে। উসমান পাশা রাহোভা এবং ভিদিন অঞ্চলের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। তাকে প্লেভনা শহর রক্ষার নির্দেশ দেয়া হলে তিনি মাত্র ৩৫০০ সেনা নিয়ে সরাসরি দানিয়ুব নদী পার হয়ে শত্রুর সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামেন। পাশার সামরিক কৌশল ছিলো অসাধারণ। যখন রাশিয়ান বাহিনী বেরকোভিস্তা পাহাড় পাড়ি দিচ্ছিলো তখনই পাশা স্থল আক্রমণ শুরু করেন। শত্রুদের অবস্থানে হামলা করতে করতে তিনি প্লেভনায় এসে উপস্থিত হোন। প্লেভনা শহরের অবস্থা ছিলো অত্যন্ত নাজুক। পাশা সেখানে পৌঁছেই শহরের প্রতিরক্ষা শক্ত করে গড়ে তুলেন এবং রাশিয়ান বাহিনীকে পরাজিত করেন। ২০ জুলাই, ১৮৭৭ সালে পাশা সফলভাবে প্লাভনা শহরে রাশিয়ার আক্রমণ রুখে দেন। এতে রাশিয়ার ৪০০০ সেনা নিহত হয় এবং ২৫০০ সেনা বন্দী হয়। তিনি ক্ষিপ্রগতিতে প্রতিপক্ষের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ওসমা নদীর ওপারে ঠেলে দেন।
তিনদিন পর রাশিয়ান বাহিনী পুনরায় আক্রমণ চালায়, সে সময়ও পাশার বীরত্বের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে রুশ বাহিনী। রক্তাক্ত এই যুদ্ধের ১০ হাজার সেনা হারানোর পর রাশিয়ার শাসক সেনাবাহিনীকে পিছু হটার নির্দেশ দেয় এবং রোমানিয়ার সাহায্য প্রার্থনা করে। রাশিয়ার সমর্থনে রোমানিয়া ৫০ হাজার সৈন্য পাঠায়। মোট দেড় লাখ সৈন্য নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বরে ফের রাশিয়া ও রোমানিয়ার যৌথবাহিনী পাশার নেতৃত্বাধীন স্বল্পসংখ্যক উসমানী সেনাদের ওপর হামলা চালায়। উসমানী সালতানাতের পক্ষ থেকে আরও ৩৫ হাজার নতুন সেনা পাঠানো হয়। আবারও সফলভাবে রাশিয়া-রোমানিয়ার যৌথবাহিনীকে পরাজিত করে পিছু হটিয়ে দেয় পাশার সেনারা। প্লেভনার সামনে ১২ ঘণ্টার ভয়াবহ এই যুদ্ধে রাশিয়া ও রোমানিয়ার ২০ হাজার সেনা মারা যায়। অপরদিকে উসমানী খেলাফতেরও ৫ হাজার সেনা শহীদ হন। উসমান পাশা ও তার বাহিনী জয়লাভ করায় তাদেরকে ‘গাজী’ উপাধী দেয়া হয়। যার অর্থ যুদ্ধ জয়ী বীর।
উসমান গাজীর এই বীরত্ব আজও শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করে মুসলিম উম্মাহ। বিশেষ করে এই বিজয়ের দিনটি আজও তুরস্কে ব্যাপকভাবে উৎযাপন করা হয়।
-মুহম্মদ শাহ জালাল
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিশ্বব্যাপী ইহুদী ষড়যন্ত্রের মাস্টার প্ল্যান প্রটোকল অফ ইহুদী
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কি বলে? হিজরী সন বাদ দিতেই কি পহেলা বৈশাখ তথা ফসলী সন চালু করা হয়েছিলো?
০৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোলকাতা কেন্দ্রীক উচ্চ বর্ণের হিন্দু চাটুকাররা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলার কৃষকদের উপরে জুলুমের রাজত্ব কায়েম করে (১)
০৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত ইলম অন্বেষনকারীদের উপর গায়েবী মদদের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ফ্রান্সে দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননা এবং একজন সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঈমানী গর্জন
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মামলুক সালতানাতের সময় মাদরাসায় উচ্চতর পড়াশুনার বৈচিত্রতা
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলদিজ প্রাসাদে ইফতার আয়োজনের স্মৃতিকথা
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়সমূহ
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসমানীয় আমলে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস যেভাবে পালন করা হতো
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রাচীন বাংলার মুসলমান মুদ্রার ইতিহাস
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জানা আছে কি? আজকের সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একসময় মুসলমানদের কর দিয়ে চলতো
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মোগল সেনাপতির ডায়েরী প্রকাশ ও বিধর্মীদের প্রচারিত মিথ্যা ইতিহাস ফাঁস
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)