কেমন ছিলো মুসলিম শাসনামলের বাংলা অঞ্চল
, ১২ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৫ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
ইউরোপীয় এক ঐতিহাসিক বলেছিলো, মুসলমানরা যে শাসন ব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন, তাতে করে অন্তত পরবর্তী এক হাজার বছরের মধ্যে এমন কোনো দুঃসংবাদ আমরা পাই না যে, তাদের শাসিত এলাকার মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে কিংবা কোনো মানুষ না খেয়ে মরেছে।
বাংলায়ও এই ব্যবস্থাপনার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। মানুষ তখন চিরসুখে জীবনযাপন করছিল। দীর্ঘ সাড়ে ৬০০ বছর স্থায়ী মুসলিম শাসনে মানুষ সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পেয়েছিল। ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছিল। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রতিটি ক্ষেত্রে পূর্ণ বিকাশ সাধিত হয়েছিল। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে মুক্তি মিলেছিল তো নিশ্চয়ই। সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো পুরনো বৃক্ষের শিকড়ের মতো দৃঢ়রূপে।
বাংলা ছিলো দুনিয়ার জান্নাত। এখানে সব রকমের ফসলের চাষ হতো। এ অঞ্চল কৃষিতে ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে মানুষের কোনো অভাব ছিল না। এমনকি যাকাত নেয়ার মতো ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল। বাংলা অঞ্চল থেকে থেকে ৮০টি অঞ্চলে ফসল রফতানি করা হতো, যেখানে উৎপাদিত ৩০০-এর বেশি ফসল সমগ্র দুনিয়ায় পৌঁছে যেতো। খনিজ সম্পদে ছিলো প্রাচুর্যময়। জাহাজ নির্মাণশিল্পে এ অঞ্চল ছিলো উন্নত। উসমানীয় সুলতানরা পর্যন্ত এ অঞ্চল থেকে জাহাজ আমদানি করত।
শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ইংরেজ শাসনের আগে কেবল বাংলাদেশেই ৮০ হাজার মকতব ছিল। প্রতি ৪০০ লোকের জন্য একটি করে মাদরাসা ছিল। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আমলে দিল্লিতে এক হাজার মাদরাসা ছিল। সেখানে দর্শন শিক্ষারও ব্যবস্থা ছিল। দিল্লির কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হওয়ার পরও কেবলমাত্র রোহিলাখন্ড জেলার বিভিন্ন মাদরাসায় পাঁচ হাজার আলেম শিক্ষাদান কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নওয়াব রহমত আলী খানের কোষাগার থেকে তারা নিয়মিত বেতন পেতেন। মাদরাসায় দর্শন, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পৌরনীতি, সমাজতত্ত্ব, ভাষা, সাহিত্য, গণিত, উসূল, ফিকহ, তাফসির, চিকিৎসাবিজ্ঞান ইত্যাদি পড়ানো হতো।
ঐতিহাসিক ইবনে বতুতার সফরনামা থেকে জানা যায়, এ দেশে তখন স্বতন্ত্র মহিলা মাদরাসা ছিল। এসব মাদরাসাগুলোতে হাজার হাজার হাফেজা, ক্বারিয়া, আলেমা ও শিক্ষিকা ছিলেন।
তবে ১৭৫৭ সালে হিন্দুত্ববাদী ও ইংরেজদের চক্রান্তে পলাশী অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য হয় অস্তমিত। শুরু হয় ইংরেজদের দৌরাত্ম্য পিশাচের মতো আচরণ। জোঁকের মতো তারা শোষণ করে বাংলাকে। পলাশী বিপর্যের পর ৭ দিন পর্যন্ত বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ বৃটিশরা লুণ্ঠন করে। মুর্শিদাবাদ হতে লুণ্ঠিত সোনা-চাঁদি, গহনা-পত্র এবং টাকা পয়সা ইত্যাদিসহ ৬০টি নৌকা বোঝায় মালামাল কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে সব মূল্যবান সম্পদ কলকাতায় পৌঁছার পর সেখান হতে ক্লাইভ চুরি করে ছয় লাখ পাউন্ড মূল্যমানের সম্পদ এবং তার চেলা চামুন্ডারা চুরি করে আরো চার লাখ পাউন্ড। সর্বমোট ১০ লাখ পাউন্ড চুরি হওয়ার পরও অবশিষ্ট যে টাকাগুলো ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়েছিল, তা দিয়ে ১৭৫৮ সালের ১ জুলাই সর্বপ্রথম ইউরোপের বুকে ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ এর জন্ম হয়। এসব থেকে অনুমান করা যায় তৎকালীন বাংলা কতটা সমৃদ্ধশালী ও প্রাচুর্যময় ছিলো।
সংস্কৃতি চর্চার নামে অপসংস্কৃতি চর্চার কারণেই আজ শিক্ষার্থীরা বিপথে-কুপথে :
নানা অপরাধ যেমন কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাসবাদী ইত্যাদিতে যারা জড়িত তারা প্রত্যেকেই উচ্চবিলাসী, সংস্কৃতমনা এবং সংস্কৃতির নামে হারাম পরিবেশের মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠা। যেমন- গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত তাহমিদ খান গান-বাজনা, নাটক ইত্যাদি সংষ্কৃতি চর্চার মধ্যেই বেড়ে উঠা ছেলে। এই তাহমিদ খান কিন্তু কোনো মাদরাসার ছাত্র নয়। সে নাচ-গান, খেলাধুলা, হারাম অনুষ্ঠান আয়োজনে অংশগ্রহণ, কথিত সংস্কৃতির এমন কোনো হারাম পর্ব নেই, যেখানে তার পদচারণা ছিলো না। কিন্তু তারপরও তাহমিদ কেন সন্ত্রাসবাদে জড়ালো? এছাড়া বাংলাদেশে আইএস আছে প্রমাণ করতে যে ভিডিওটি গুলশান হামলার পরপর অনলাইনে প্রচারণা হয়, সেখানে তিন জনের মধ্যে একজন ছিলো তাহমিদ রহমান সাফি। এই সন্ত্রাসী তাহমিদ রহমান সাফি ছিলো সঙ্গীতশিল্পী। ক্লোজআপ ওয়ান তারকা হিসেবেও সে পরিচিত। সে ছিলো রবীন্দ্র চেতনায় উজ্জীবিত। রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে পিএইচডি করারও ইচ্ছা ছিলো তার। অথচ এমন সংস্কৃতিবান ও রবীন্দ্রচর্চাকারীই মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে আইএস-এ যোগ দিয়েছে এবং বাংলাদেশে হামলার হুমকি দিয়েছে।
পাশপাশি গুলশানে হামলাকারী নিহত সন্ত্রাসী নিবরাস ইসলামও সংস্কৃতিমনা ছিলো। সে ভারতীয় নায়িকার সাথে নাচানাচি করতো অর্থাৎ ভারতীয় সংস্কৃতি পালনে প্রথম কাতারে ছিলো। সেও সন্ত্রাসবাদে পা বাড়ালো। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, কথিত সংস্কৃতি চর্চার দ্বারা তরুণ প্রজন্মকে কখনোই সন্ত্রাসবাদ বিমুখ করা যাবে না বরং সন্ত্রাসবাদের দিকেই ধাবিত করা হবে।
তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব অপসংস্কৃতি চর্চা বাদ দিয়ে প্রকৃত দ্বীন শিক্ষার আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
-মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)