উসমানীয় আমলে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস যেভাবে পালন করা হতো
, ০৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩১ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস
উসমানীয় সালতানাতে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের আগমন বিশেষ উৎসবমুখর পরিবেশের সূচনা করতো। পবিত্র এই মাসকে কেন্দ্র করে কঠোরভাবে শান্তি-শৃঙ্খলা, দ্বীনি অনুশাসন এবং ইনসাফ রক্ষা করা হতো। উসমানীয় সুলতান এই পবিত্র মাস উনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি ফরমান জারি করতেন এবং সেগুলো কঠোরভাবে মানার জন্য নির্দেশনা প্রদান করতেন।
ঋণ পরিশোধ
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার আগমন হলেই উসমানীয় সালতানাতের সম্পদশালী ব্যক্তিরা ছদ্মবেশে উসমানীয় বাজারগুলোতে ঘুরতেন এবং মুদির দোকানগুলোতে গিয়ে দোকানীদের কাছে গিয়ে ঋণের খাতাগুলো বের করতে বলতেন। এরপর ঋণের খাতা থেকে ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ করতেন। ছদ্মবেশে থাকার কারণে দোকানীও বুঝতে পারতেন না যে কে কার ঋণ পরিশোধ করেছে। আর যে ঋণগ্রস্ত সেও জানতে পারতো না কে ঋণ পরিশোধ করেছে। দেখা যেত, পুরো রমাদ্বান শরীফ মাস শেষ হতে হতে দোকানগুলোর ঋণের তালিকা শুণ্য হয়ে যেতো।
চাঁদ দেখায় পুরষ্কার ঘোষণা
উসমানীয় সালতানাতে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার নতুন চাঁদ যে প্রথম দেখে সালতানাতের দায়িত্বশালীদের কাছে সে খবর পৌছাতে পারতো তাকে স্বয়ং সুলতান স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে পুরস্কৃত করতেন এবং সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হতো।
মূল্যবৃদ্ধিতে কঠোরতা
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিলো উসমানীয় সালতানাতে। সালতানাতের কোনায় কোনায় উসমানীয় গোয়েন্দারা ঘুরে বেড়াতেন এবং তদারকি করতেন কেউ যাতে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে। এরপরও যদি কেউ মূল্যবৃদ্ধি করতো তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হতো এবং জরিমানা গুনতে হতো।
নৈতিকতার বাস্তবায়ন
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে সরাসরি সুলতানের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সতর্কবার্তা প্রদান করা হতো। যার মধ্যে- অশ্লীলতা পরিহার, নামাজের সময় সকল বাজার ঘাট বন্ধ রাখা, জনসম্মুখে খাদ্য গ্রহণ না করা, নামাজের জামাতের সময় অযথা আড্ডা দেয়া এবং ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি সতর্কবার্তা প্রদান করা হতো। বার বার ঘোষণা দেয়া হতো।
দাতব্য পাথরের বক্স
প্রতিটি মসজিদের সামনে একটি করে পাথরের বক্স রাখা হতো এবং সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ রাখা হতো। যারা সম্পদশালী লোক তারা এই পাথরগুলোকে অর্থ রাখাকে অহংকারের পতন হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। যারা অর্থসঙ্কটে ভুগতেন তারা গোপনে এই পাথরের বক্স থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সঙ্কট মেটাতেন। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস আগমন করলে এই পাথরের বক্সগুলো মুদ্রায় পরিপূর্ণ হয়ে যেতো।
পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ আগমন করলে সালতানাতের সুলতান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বেশি বেশি পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত করতেন এবং হযরত আউলিয়াকে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মাজার শরীফ সংস্কার এবং বেশি বেশি দান ছদকা করতেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)