আফগানিস্তানে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের ইতিহাস
, ২৬শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২০ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান স্থলবেষ্টিত একটি দেশ। এর পশ্চিমে ইরান, দক্ষিণ ও পূর্বে পাকিস্তান, উত্তরে তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে তাজিকিস্তান ও চীন। আফগানিস্তানের আয়তন দুই লাখ ৫২ হাজার ৭২ বর্গমাইল। আফগানিস্তানের বেশির ভাগ অঞ্চল পর্বতসংকুল।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়েই আফগানের ভূখন্ডে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন হয়। এরপর আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে বোখারা-সমরকন্দ অঞ্চল অতিক্রম করে আফগান অঞ্চলে দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ঈসায়ী ৬৩৭ সালে মুসলমানদের কাছে সাসানীয়রা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার ১০০ বছরের মধ্যে আফগান অঞ্চল মুসলমানদের অধীনে চলে আসে। এবং আফগানিস্তানের বিভিন্ন উপজাতি ও গোষ্ঠী সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। ঈসায়ী ৬৪২ সালে ‘নাহাভান্দ’ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানরা খোরাসান জয় করলে আফগান অঞ্চল জয়ের পথ প্রশস্ত হয়।
আফগান ভূখন্ডে মুসলিম শাসন ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয় উমাইয়া শাসকদের আমলে। এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন হিশাম ইবনে আবদুল মালিক ও ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি। উমাইয়া সেনাপতি আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা জানবিলদের পরাজিত করে জাবুলিস্তান (দক্ষিণ আফগানিস্তান) জয় করেন। আব্বাসীয় শাসক আল মুতাসিমের সময় সমগ্র আফগানিস্তান মুসলিমদের অধীনে আসে এবং পুরো আফগানিস্তানের বাসিন্দাগণ মুসলমান হয়ে যান। আব্বাসীয়দের অধীনে সামানিদরা (৮১৯-৯৯৯ সাল) আফগানসহ মধ্য এশিয়ার কিছু অঞ্চল শাসন করত ঈসায়ী দশম সালে সামানিদদের পতন হলে আফগানিস্তানে গজনভি সালতানাতের গোড়াপত্তন হয়। গজনভিদের শাসনকালেই আফগানিস্তান প্রথমবারের মতো বৃহত্তর পরিসরের কোনো ইসলামী শাসন লাভ করে। ১২২০ সালে সমগ্র মধ্য এশিয়ার মতো চেঙ্গিস খান দ্বারা আক্রান্ত হয়। ১৩৮০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। এরপর তৈমুর লং আফগানিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং তার পরিবার ১৬ শতাব্দী পর্যন্ত তা শাসন করেন।
১৫০৪ সালে উত্তর ভারতে প্রতিষ্ঠিত নতুন মোগল সালতানাতের অধীন হয় আফগানিস্তান। পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা পরবর্তী দুই শ বছর ইরানের সাফাভিদ সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে। ১৭৪৭ সালে সাফাভি শাসক নাদির শাহের মৃত্যুর পর আফগানিস্তানে পশতু শাসনের উত্থান ঘটে, যারা দুররানি নামে বেশি পরিচিত। নামে মাত্র হলেও ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তাদের শাসন অব্যাহত ছিল। দুররানি সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আহমদ শাহ দুররানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ইতিহাসে আহমদ শাহ আবদালি নামেও পরিচিত; তিনি আফগানিস্তানের পশতু জাতিগোষ্ঠীকে একত্র করেন। উনাকে আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয়। আফগানিরা উনাকে আহমদ বাবা নামে অভিহিত করে থাকেন। আহমদ শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৭৬০ সালে উনার শাসন ভারতের দিল্লি থেকে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। ১৭৭২ সালে উনার ইন্তেকালের পর দুরদানি সালতানাত ভেঙে যায়। তবে ১৮২৬ সালে পশতু নেতা দোস্ত মুহম্মদ আফগানিস্তানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।
দোস্ত মুহম্মদের পর থেকে আফগানিস্তানে বিদেশি আগ্রাসি শক্তিগুলোর আনাগোনা শুরু হতে থাকে। ব্রিটেন রাশিয়া আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রন নিতে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করে। অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে আফগানিস্তান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পরিণত হয় দেশটি। এ সময় কয়েকটি নামমাত্র মুসলিম শাসক দেশটির শাসক করলেও তারা সবাই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলো। সাম্রাজ্যবাদীরা বর্তমানে আফগানিস্তান ত্যাগ এবং তালেবানরা আফগানিস্তানের শাসনভার তুলে নিয়েছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)