সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৫)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ৩০ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৮ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৬ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২২ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি আদব:
উল্লেখ্য যে, মু’মিনগণ, মুহসিনগণ উনারা উনাদের আমলের প্রতিদান পাবেন। কিন্তু বেয়াদবী করলে আমল বিনষ্ট হবে। তার কোন প্রতিদান পাবেন না।
তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে যে, পূর্বে উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফখানা এবং অনুরূপ অন্যান্য পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে নাযিল হলেও হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা ওলীআল্লাহগণ উনাদের ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য। অর্থাৎ উনাদের সাথে আদব রক্ষা না করলেও আমলসমূহ বিনষ্ট হয়ে যাবে। সেই আমলের কোন প্রতিদান দেয়া হবে না।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি সবসময় আদব ইহতিরাম বজায় রেখেছেন। উনার আদেশ নিষেধগুলো পরিপূর্ণভাবে পালন করতেন। কখনো চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করেননি। যা কিছু নিয়ামত পেয়েছেন, পাচ্ছেন এবং পাবেন সবই উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মাধ্যমে পাবেন বলে মনে করতেন। অন্য কোন মাধ্যমে পাওয়ার চিন্তাও করতেন না। উনার কাজ কর্ম, কথা-বার্তা, আমল-আখলাক্বের কখনো অগ্রবর্তী হতেন না। মাল, জান, সময়, শ্রম সবকিছু দিয়েই সবসময় উনার খিদমত মুবারকে আঞ্জাম দিতেন। উনার প্রতি পরিপূর্ণরূপে ফানা ছিলেন। কখনো অন্য কারো প্রতি দৃষ্টি দেননি। আলোচ্য ঘটনা দ্বারা সে বিষয়টি পরিষ্ফুটিত হয়েছে।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শায়েখ হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন উনাকে ডেকে বললেন, মুঈন্দ্দুীন! আপনাকে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ সফর করবো।
তিনি মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সফরের সমস্ত জিনিষপত্র প্রস্তুত করতঃ নিজের মাথা মুবারকে বহন করে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার পিছনে পিছনে চলতে লাগলেন।
যথাসময়ে পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছলেন। প্রথমে দু’রাকায়াত শোকরানা নামায আদায় করলেন। তারপর পবিত্র কা’বা শরীফ সাত বার তাওয়াফ করলেন। তাওয়াফ শেষ করে হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়ালেন। কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ডান হাত মুবারক ধরে আকাশের দিকে তুলে বললেন, “আয় বারে ইলাহী! আপনি আমার মুঈনুদ্দীনকে কবুল করুন। ”
সাথে সাথে আওয়াজ মুবারক আসলো, “আমি মুঈনুদ্দীনকে কবুল করলাম। ” সুবহানাল্লাহ!
শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। বললেন, মুঈনুদ্দীন! মহান আল্লাহ পাক আপনাকে আখাছছুল খাছভাবে কবুল করেছেন।
চলুন, পবিত্র মদীনা শরীফে চলে যাই। ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছলেন। গোসল করে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে দু’ রাকায়াত নামায আদায় করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ক্বদম মুবারকের দিকে দাঁড়িয়ে শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালাম মুবারক পেশ করলেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালাম মুবারক পেশ করলেন না। বিষয়টি উনার মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন-
معین تم نے حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم کو سلام نہیں دیا؟
অর্থ: মুঈনুদ্দীন! আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম দিলেন না? তিনি উত্তরে বললেন-
حضور معین میں معین ہے کہا؟ جو سلام پیش کرے. میں نے خود کو اپکے قدم پر سپرد کر دیا. اب اپ اگر حکم کرے تو میں سلام پیش کرونگا.
অর্থ: “মুঈনুদ্দীনের মধ্যে মুঈনুদ্দীন আছে কোথায় যে সালাম পেশ করবে? আমি তো আমার সত্তাকে আপনার ক্বদম মুবারকে সমর্পন করেছি। এখন আপনি যদি আদেশ মুবারক দান করেন তাহলে সালাম পেশ করতে পারি। ” (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র দশ লতিফা উনাদের বিবরণ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (২)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)