ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৮)
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ২৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২১ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইলমে তাছাউফ
এই যে বিষয়টা, ইলমে তাছাওউফের বিষয়গুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়। কারণ এই পথ অত্যন্ত কাঁটাযুক্ত পথ। এ পথে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ইস্তেক্বামত না থাকলে মূল জায়গায় পৌঁছা যায় না।
পাশাপাশি নিজের আমিত্ব-বড়ত্ব ও আত্মসম্মান বোধকে অন্তরে জায়গা দেয়া যাবে না। জাহিরী ইলিমের ফখর থাকতে পারে; যেহেতু অন্তর ইছলাহপ্রাপ্ত না। কিন্তু এসব অন্তরে যেন কখনও স্থান না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিসবত-কুরবত মুবারককে মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্যের একমাত্র অবলম্বন মনে করতে হবে। উনার আদেশ-নিষেধ মুবারকগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে। উনার প্রতি আদব বজায় রাখতে হবে।
কারণ, হযরত মামশাদ্ উলূ দীনারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তির অন্তরে আমিত্ব-বড়ত্ব¡ বোধের লেশমাত্রও বাকী থাকবে, সে ব্যক্তি কামিল শায়েখ উনার নছীহত মুবারক উপলব্ধি এবং ছোহবত মুবারকের বরকত হতে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থাকবে। ”
হযরত আবূ আলী মুহম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব সাক্বাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “যে ব্যক্তি শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবত মুবারকে থেকে আদব ও খিদমতের নিয়ম-কানুন রক্ষা করবে না সে ব্যক্তি শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবত, নেক দৃষ্টি, ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ ও রহমত, বরকত হতে এবং সে সমস্ত নূর মুবারক হতে বঞ্চিত থাকবে। যা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হতে কামিল শায়েখ উনার ক্বলব বা অন্তরে পৌঁছানো হয়। ”
অনুরূপভাবে আরো উল্লেখ আছে যে, হযরত শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে যখন উপনীত হলেন তখন উনার পূর্ববর্তী শায়েখ থেকে প্রাপ্ত খাছ নিয়ামতটি কাকে হস্তান্তর করবেন সে জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করতে লাগলেন। উপযুক্ত কাউকে তিনি খুজে পাচ্ছিলেন না। “জাওয়াহেরে মুযিআহ্”-এর মধ্যে উল্লেখ আছে যে, হযরত শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সফর করতে করতে রোম দেশের তুর্কিস্তানের কাউনিয়া নামক শহরে উপনীত হলেন। সেখানে দেখতে পেলেন হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্রদেরকে নিয়ে দর্স বা তা’লীম দিচ্ছেন। উনার সামনে ও আশপাশে অনেক কিতাবাদী। হযরত শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেখানে প্রবেশ করে বিশাল কিতাবের গোডাউনের প্রতি ইশারা করে বললেন, এসব কি? হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি জবাবে বললেন, এসব আপনি বুঝবেন না। হযরত শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ কথা শুনে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন সাথে সাথেই সমস্ত লাইব্রেরীতে দাউ দাউ করে আগুন লেগে গেলো। তিনি তা দেখে বললেন, সর্বনাশ হয়ে গেছে! নিশ্চয়ই তিনি বড় কোন ওলীআল্লাহ। অনেক বড় বেয়াদবী হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে হযরত শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সামনে এসে বললেন, ইহা কি? আমার সমস্ত বিশাল বিশাল লাইব্রেরীতে আগুন লেগে গেছে। হযরত শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এটাও তাই যা আপনি বুঝবেন না। হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাফ চাইলেন। হযরত শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আবার উনার কিতাব গোডাউনে প্রবেশ করে ফুঁ দিলেন। সাথে সাথে সমস্ত আগুন নিভে গেলো। “খাযীনাতুল আছফিয়া” নামক কিতাবের ২য় খ-ের ২৬৯ পৃষ্ঠায় অপর একটি বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিতাবগুলোর প্রতি ইশারা করে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার এখানে এসব কি? তখন হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একটু বাঁকা উত্তর প্রদান করেন। এক পর্যায়ে হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিতাবগুলি নিয়ে নিকটস্থ এক কূপের মধ্যে ফেলে দিলেন। মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিস্মিত হয়ে বললেন, হুযূর! আপনি একি করলেন? হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন কিতাবগুলো কূপ হতে তুলে নিয়ে উনার সামনে রেখে দিলেন। বিস্ময়ের সাথে মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে বুযূর্গ ব্যক্তি! এ কি ব্যাপার? হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ইহা যওক ও হাল, যে সম্বন্ধে আপনার কোন ধারণা নেই। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)