ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৬) কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ২৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ
উল্লেখ্য, যদি কোন ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হক্ব তথা নামায, রোযা, যাকাত, দান-ছদক্বা ইত্যাদি নেক কাজ যথারীতি আদায় করার পর তার মালিক বা মনিবের আদেশ-নিষেধ যথাযথ পালন করে, তাহলে সে ব্যক্তি দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হবে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ যার উসীলায় মুরীদের দুনিয়া ও আখিরাতের সামগ্রিক কল্যাণ নিহীত। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত মুবারক হাছিল হয়। তাহলে সেই কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করা, মুহব্বত করা, খিদমত মুবারক করা, আদেশ-নিষেধগুলো যথাযথভাবে পালন করা কতবেশী ফযীলতপূর্ণ ও অশেষ গুরুত্ববহ তা সহজেই অনুমেয়।
কাজেই সালিক বা মুরীদের জন্য উচিত হবে- কামিল শায়েখ উনার যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করা, গভীরভাবে মুহব্বত করা এবং একনিষ্ঠতার সাথে উনার যাবতীয় খিদমত মুবারকে আঞ্জাম দেয়া। এক্ষেত্রে কোন নিন্দুকের নিন্দা এবং তিরস্কারকারীর তিরস্কার যেন তাকে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে বিরত রাখতে না পারে। কারণ নক্বশ্বন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা উনার ইমাম হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালিক বা মুরীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “খাল্ক বা সৃষ্টি জীবের অত্যাচার উৎপীড়ন সহ্য না করে তাদের কোন উপায় নেই। সাথে সাথে আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের নির্যাতন বরদাস্ত করাও অনিবার্য। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَهُمْ.
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! “আপনি ধৈর্য্য ধারণ করুন। যেমন সম্মানিত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য হতে যারা উলুল আ’যম রসূলগণ ছবর বা ধৈর্য্য ধারণ করেছিলেন এবং তাদের জন্য অর্থাৎ কাফেরদের ধ্বংস ও শাস্তির জন্য তড়িঘড়ি করবেন না। ” (পবিত্র সূরা আহকাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)
হযরত শায়েখ আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি আদব, পরিপূর্ণ আনুগত্যতা, সীমাহীন মুহব্বত, যথাযথ তা’যীম-তাকরীম ও খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতেন। তাহাজ্জুদ নামায পড়ার সুবিধার্থে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার খিদমতে গরম পানির যোগান দিতেন। তিনি গরম চুলা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে সফর করতেন। ফলে উনার মাথার সমস্ত চুলগুলো পড়ে গিয়েছিলো।
হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লক্ষ লক্ষ মুরীদ ও খলীফাগণের মধ্যে হযরত শায়েখ আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিই ছিলেন প্রধান। উনার মাধ্যমেই সিলসিলার বিস্তার ঘটে। হযরত শায়েখ আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার হাজার হাজার খলীফা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর হিদায়েতের উদ্দেশ্যে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েন। যার ফলশ্রুতিতে আজও মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভের বিশ্বখ্যাত তরীক্বা “চিশতীয়ায়ে নিযামীয়া” বিশ্বব্যাপী পরিব্যপ্ত। অদ্যাবধি পৃথিবীজুড়ে চিশতীয়ায়ে নিযামীয়া তরীক্বা বিরাজ করছে। এ তরীক্বার নিয়ামত পেয়ে অসংখ্য অগণিত লোক সঠিক পথের দীক্ষা পাচ্ছে। মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ মা’রিফাত মুহব্বত তথা খালিছ সন্তুষ্টি-রেযামন্দী মুবারক লাভ করছে। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তরীক্বা প্রশস্ত ও প্রসারিত হওয়ার মূল কারণই হচ্ছে- উনার সম্মানিত শায়েখ মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খাছ দোয়া ও সন্তুষ্টি মুবারক। যা উনার কামিয়াবীর পথকে প্রশস্ত করে দিয়েছে।
অতএব, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার কোন আমল, কথা, কাজ কিংবা আচার-আচরণ ইত্যাদির ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা অথবা কোন প্রকার চূ-চেরা করা নিসবত-কুরবত মুবারক ও ফায়িয তাওয়াজ্জুহ মুবারক থেকে মাহরুম হওয়ার কারণ। ফলে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খালিছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দী লাভ হয় সুদূর পরাহত। উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে হযরত নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবন চরিত্রই যথেষ্ট।
সে জন্যই হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার জনৈক ছাত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন যে, “যদি কোন ব্যক্তির তকদীরে কোন কামিল শায়েখের সন্ধান মিলে যায়, তাহলে তার উচিত উনাকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয়দিক দিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফের ন্যায় সম্মান করা। উনার কোন কথা-বার্তা, আমল, চরিত্র মুবারকের উপর কোনরূপ সন্দিহান না হওয়া। মাসয়ালা-মাসায়েলের ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত না হওয়া। অর্থাৎ কোন ব্যাপারেই উনার সাথে কোন প্রকার দ্বিমত পোষণ না করা। কেননা এমন হতে পারে যে, তিনি যা বলেছেন, যা করেছেন তার অন্য কোন অর্থ আছে যা হয়ত তিনি পরে ব্যাখ্যা করবেন কিন্তু মুরীদ বুঝতে পারছে না। মুর্শিদ ক্বিবলা যখন তাকে বুঝার বা উপলব্ধি করার যোগ্যতা দান করবেন তখন সে উপলব্ধি করতে পারবে। (সিরাতুল মুস্তাক্বীম) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (২)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩১)
৩০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খিলাফত, খলীফা, পীর বা মুর্শিদ, গদীনশীন পীর বা মুর্শিদ পরিভাষার ব্যাখ্যা
২৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ উনাদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩০)
২০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩০)
২০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)