ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫) কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ২৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ
হযরত শায়েখ আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাইয়াত হওয়ার পর আজীবন উনার শায়েখ সুলত্বানুল আরেফীন হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত মুবারকে নিয়োজিত ছিলেন। নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি পরিপূর্ণভাবে সমর্পিত না হলে, যথাযথ তা’যীম-তাকরীম না করলে, মুহব্বত দৃঢ়ভাবে রাখতে না পারলে উনার যথাযথ খিদমতের আঞ্জাম দেয়া কিংবা আদেশ-নিষেধ পালন করা সম্ভব নয়।
মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত, মুহব্বত ও নৈকট্য মুবারক লাভ করতে হলে অবশ্যই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে যথাযথ মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম, খিদমত মুবারকের আঞ্জাম এবং বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুস্নে যন পোষণ করতে হবে। যা ব্যতীত নৈকট্য তথা কামিয়াবী লাভের কল্পনাও করা যায় না।
এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনেক মূল্যবান নছীহত মুবারক রয়েছে। কুতুবুল আকতাব, হযরত যূন নুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ-নিষেধ মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধের মতই। যা দৃঢ়ভাবে পালন না করা পর্যন্ত কেউ সত্যিকারের মুরীদ হতে পারবে না। ” (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
উল্লেখ্য, যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে মুরীদ হতে পারবে না তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত মুবারক হাছিল করা দুরূহ্ ব্যাপার।
হযরত আবূ ইসহাক ইবরাহীম শায়বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি তার নিজ শায়েখের খিদমত করা ছেড়ে দেয়, সে মিথ্যা দাবিতে জড়িয়ে পড়ে এবং সে এ মিথ্যা দাবির দরুণ লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়। ”
সুলত্বানুল আরেফীন, হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে মুরীদ মুর্শিদ ক্বিবলা উনার তা’যীম-তাকরীম যত অধিক পরিমাণে করতে পারবে সে তত অধিক পরিমাণে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারক লাভ করবে। ”
আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বাইয়ুমে আউওয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সর্বজনমান্য কিতাব “মাকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন, “শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সন্তুষ্টি মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি এবং শায়েখের অসন্তুষ্টিই মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি। ” নাঊযুবিল্লাহ! হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “ছোহবতের আদব-সম্মান রক্ষা করা মুরীদের জন্য একান্ত কর্তব্য। তবেই কামিয়াবী হাছিল হয়ে থাকে, অন্যথায় সমস্ত চেষ্টা-কোশেশ বরবাদ হয়। ”
হযরত আবূল আব্বাস ইবনে আহমদ কাছছার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “মুরীদের পক্ষে সামান্য সময় একজন হক্কানী-রব্বানী আলেম তথা কামিল শায়েখ উনার খিদমত মুবারকে লিপ্ত থাকা, একশত রাকায়াত নফল নামায আদায় করার চেয়েও উত্তম। আর খাওয়ার ক্ষেত্রে এক লোকমা কম খাওয়া সারা রাত নফল নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। ”
সুলত্বানুল হিন্দ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী আজমেরী সানজারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “মুরীদের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ-নিষেধের বিন্দুমাত্র লংঘন না করা এবং পাশাপাশি উনার নির্দেশিত অযীফা, যিকির-ফিকির ও অন্যান্য বিষয়ে তিনি যখন যা আদেশ করেন তা মনোযোগের সাথে শুনে পূঙ্খানুপূঙ্খ রূপে আমল করা। তবেই সে যে কোন একটি স্তরে উন্নীত হতে পারবে। কেননা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি মুরীদকে তা’লীম-তরবিয়ত দিয়ে তার আমলের সংশোধন করে থাকেন। কাজেই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা মুরীদকে যা কিছু নির্দেশ করেন তা মুরীদের ইছলাহ এবং তরক্কীর উদ্দেশ্যেই করে থাকেন। ”
এ প্রসঙ্গে তিনি একখানা ওয়াকেয়া বর্ণনা করেন ‘যে-একজন যাহেদ বা দুনিয়া বিরাগী লোকের ইন্তেকাল হলে অপর একজন বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি তদুত্তরে বললেন- মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমলের বিনিময়ে? তিনি বললেন, আমি দিন-রাত মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করতাম, কোনো সময়ে আরাম-আয়েশ করতাম না। কাজেই সর্বদা আমার খেয়াল মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে লেগেই থাকত। কিন্তু এ সমস্ত ইবাদত-বন্দেগীর কারণে আমাকে ক্ষমা করা হয়নি। বরং আমাকে ক্ষমা করার আসল কারণ হচ্ছে, আমি আমার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার খিদমত মুবারক মনে প্রাণে করতাম এবং উনার প্রত্যেকটি আদেশ-নিষেধ পালন করা “একান্ত ফরয” বলে মনে করতাম। এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি মনে-প্রাণে কোন ওলীআল্লাহ উনার প্রতি মুহব্বত রাখবে, তার আমলনামায় হাজার বছর ইবাদতের ছওয়াব লিখিত হয়। আর সেই অবস্থায় মৃত্যু হলে ওলীআল্লাহগণ উনাদের সাথেই তার হাশর-নশর হবে। ” (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
সর্বোপরি পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিন শ্রেণীর লোক দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী। তন্মধ্যে এক শ্রেণীর হচ্ছে-
وَالْعَبْدُ الْمَمْلُوكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللهِ وَحَقَّ مَوَالِيهِ.
অর্থাৎ “ঐ অধীনস্থ গোলাম যে মহান আল্লাহ পাক উনার হক্ব যথাযথ আদায় করার সাথে সাথে তার মনিব বা শায়েখ উনার যথাযথ হক্ব আদায় করে। ” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)