মিশর ও তার ইতিহাস
, ১৪ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইতিহাস
১৮৫৯ থেকে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে একটি ফরাসি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে সুয়েজ খাল তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সেনারা মিশর দখলে নিয়ে নেয় এবং ১৯১৪ সালে দেশটিকে যুক্তরাজ্যের উপর নির্ভরশীল একটি অঞ্চলের মর্যাদা দেয়। ১৯২২ সালে মিশর নামমাত্র স্বাধীনতা লাভ করে এবং এটিকে একটি সংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত করা হয়। কিন্তু এতে ব্রিটিশ সেনা উপস্থিতি অব্যাহত থাকে। ১৯৪০-এর দশকে দেশটি আরব লিগ নামের একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে, যাতে একাধিক আরব রাষ্ট্র সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আরব লিগ মিশরের প্রতিবেশী অঞ্চল ফিলিস্তিনের স্থানীয় আরব জনগণ ও সম্প্রতি ইউরোপ থেকে বহিরাগত ইহুদীদের মধ্যবর্তী ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালে ইহুদীরা ফিলিস্তিনের একটি অংশকে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করলে মিশর ও তার আরব মিত্ররাষ্ট্রগুলি ইসরায়েলকে আক্রমণ করে, শুরুতে কামিয়াবীর দারপ্রান্তে থাকলেও ইহুদীদের সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র বুঝতে না পেরে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে পরাজিত হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে একটি সামরিক দল মিশরের রাজা ফারুককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নির্বাসনে পাঠায়, ব্রিটিশ সেনাদের দেশ থেকে উৎখাত করে এবং তাদের নেতা জামাল আবদেল নাসের প্রায় ২০০০ বছর পরে প্রথম স্থানীয় মিশরীয় হিসেবে দেশটির শাসনক্ষমতার অধিকারী হন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে মিশর একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নাসের মিশরকে আরব বিশ্বের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালে মিশর ও সিরিয়া একত্রে মিলে একীভূত আরব প্রজাতন্ত্র নামের একটি রাষ্ট্র গঠন করেছিল, কিন্তু সেটি টেকেনি। নাসের আরব সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে অনেক শিল্প কারখানা ও সুয়েজ খালের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ সম্পন্ন করেন। তার শাসনামলে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে আরও দুইবার (১৯৫৬ ও ১৯৬৭ সালে) যুদ্ধ হয়। ১৯৭০ সালে আনওয়ার এল-সাদাত মিশরের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৩ সালে মিশর ইসরায়েলের সাথে আরেকটি স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি সাদাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাকেম বেগিনের সাথে বৈঠক করে। এই বৈঠকের সূত্র ধরে ১৯৭৯ সালে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে এক ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি (ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি) সম্পাদিত হয়। মিশর গাজা উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় ও ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। বেশির ভাগ আরব রাষ্ট্রই এই চুক্তির ব্যাপারে নারাজ ছিল। ১৯৮১ সালে ইহুদী চরমপন্থীরাই সাদাতকে হত্যা করে। নতুন রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারকের নেতৃত্বে মিশরের সাথে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। তবে মিশর ১৯৯১ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে সম্মিলিত জোটের অংশ হিসেবে ১ম পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। “আরব বসন্ত” পর্বে এসে একটি গণঅভ্যুত্থানের বদৌলতে মুবারকের সেনা-সমর্থিত শাসনের অবসান ঘটে এবং নির্বাচনে মুসলমান ভ্রাতৃত্ব নামক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের জয় হয়, কিন্তু তাদেরকেও কিছুদিন পরে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। বর্তমানে মিশরে ইসলামী উগ্রবাদের উত্থান ঘটেছে এবং এতে স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে বহু শতাব্দী যাবৎ বিদ্যমান সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কে চিড় ধরেছে। এছাড়া শিক্ষা ও অর্থনৈতিক মর্যাদার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার মধ্যে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত দক্ষিণ মিশর অঞ্চলে। আধুনিক মিশর রাষ্ট্রটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। মিশরকে উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামী বিশ্বের একটি আঞ্চলিক শক্তি, এবং বিশ্বমঞ্চে একটি মধ্যম শক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশটি জাতিসংঘ, আরব লিগ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, আফ্রিকান ঐক্য এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)