বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান:
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
, ২১ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) বিজ্ঞান মুসলমান উনাদেরই অবদান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হিজরী ২৭১ (২৫৫ শামসী, ৮৮৮ খ্রিস্টাব্দ) সালে ইরানের ইস্পাহানে এমন একটি পাবলিক লাইব্রেরী তৈরি করেছিলেন একজন জমিদার ধর্নাঢ্য ব্যক্তি এবং ইরানের নিশাপুরেও অনুরূপ পাবলিক লাইব্রেরী ছিল হিজরী ৩৫৩ (৩৩১ শামসী, ৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ) সনে।
বাগদাদে পাবলিক লাইব্রেরিগুলির সাফল্য অন্যান্য ইসলামিক শহরগুলির উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল এবং ফলস্বরূপ, সমগ্র ইসলামী বিশ্ব জুড়ে প্রচুর সংখ্যক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
নিম্নলিখিত স্মরণীটি বড় ইসলামী শহরগুলিতে পাবলিক লাইব্রেরির বিস্তার ফুটিয়ে তুলেছে।
তাই দেখা যায় কায়রোতে তখনকার প্রকাশিত কিতাবগুলোর অনুলিপি তৈরি করে ইয়েমেনের সানায় প্রেরণ করা হতো স্কলার গবেষকদের জন্য। হিজরী ৭০০ সালে সানায় মালিক দাউদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে এক লক্ষ ভলিউম কিতাব ছিল। এটা উল্লেখ করা উচিত যে, অনেক প্রাইভেট লাইব্রেরিসমূহ ছাত্র এবং গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল এবং কখনও কখনও জনসাধারণের জন্যও। অন্যান্য প্রাইভেট লাইব্রেরিগুলি শুধুমাত্র গ্রন্থাগারের মালিক এবং তাদের নিকটবর্তী বন্ধুদের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত সংগ্রহ হিসেবে ছিল। ইতিহাসে দেখা যায় খলীফাদের লাইব্রেরিসহ অন্যান্য সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারগুলো পরবর্তীতে মসজিদ লাইব্রেরী বা পাবলিক লাইব্রেরীতে পরিণত হয়েছিল।
মুসলমানদের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার বিষয়টি এতটাই প্রচলিত ছিল যে একজন লেখক অনুমান করেছেন যে, হিজরী ৬০০ সালে (শামসী ৫৭০, খ্রিস্টাব্দ ১২০৩), পশ্চিম ইউরোপের সমস্ত সরকারী এবং ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারের তুলনায় মুসলিম বিশ্বের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিগুলোতে বেশি বই ছিল। খ্রিস্টান ঐতিহাসিক জনসন উল্লেখ করেছে, বিশ্বের ইতিহাসে খুব কম সংখ্যক বার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারগুলি এত সমৃদ্ধ, এত সংখ্যক কিতাবে পূর্ণ হয়েছিল যা আমরা মুসলিম স্বর্ণালী যুগে পেয়েছি।
গণ পাঠাগার বা পাবলিক লাইব্রেরি
কোন সভ্যতার উৎকর্ষের ইঙ্গিত ব্যক্তিগত লাইব্রেরির মাধ্যমে নয়, বরং সর্বজনীন পাবলিক লাইব্রেরির মাধ্যমে পাওয়া যায়। পাবলিক লাইব্রেরির ধারনা ইসলামিক ইতিহাসের প্রায় শুরু থেকে প্রতিষ্ঠিত। মুসলিম খলীফাগণ, গভর্ণরগণ এবং সরকারী কর্মকর্তারা এমন একটি ধারণা অনুসরণ করেছিলেন যার কারণে অধ্যয়ন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একচেটিয়া অধিকার হিসেবে ছিল না, বরং তা উন্মুক্ত ছিল ধনী-গরীব সকল মানুষের জন্য। মুসলিম স্বর্ণালী যুগের পাবলিক লাইব্রেরিগুলো তিন ধরনের লাইব্রেরি থেকে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে ও বিকশিত হয়েছে: (১) খলীফা উনাদের, (২) মসজিদের এবং (৩) মাদ্রাসার (স্কুল)।
খ্রিস্টান ঐতিহাসিক জনসনের মতে, দামেশকে প্রথম পাবলিক লাইব্রেরিই স্থাপিত হয়েছিল হিজরী ৭০ (৫৬ শামসী, ৬৮৯ খ্রিস্টাব্দ) সালে উমাইয়া খলীফা বা শাসকদের দ্বারা।
এখানে তৎকালীন বিশ্বের সমস্ত অংশ থেকে সংগৃহীত ও প্রাপ্ত পা-ুলিপিগুলির সমাবেশ করা হয়েছিল, পরে লাইব্রেরির ব্যবহারের জন্য সেগুলির অনুলিপি তৈরি করা হয়েছিল। খ্রিস্টান ঐতিহাসিক পিন্টোর মতে, আব্বাসীয় খিলাফতের রাজধানী বাগদাদে আব্বাসীয় শাসক আল মামুন (হিজরী ২০৭-২১৭, ১৮৯-১৯৯ শামসী, ৮২২-৮৩২ খ্রিস্টাব্দ) কর্তৃক যে পাবলিক লাইব্রেরী খোলা হয়েছিল তা বর্তমানের পাবলিক লাইব্রেরির সকল সুবিধা সম্বলিত প্রথম পাবলিক লাইব্রেরী।
এটা উল্লেখ করা উচিত যে বৃহৎ পাবলিক লাইব্রেরি সকল পুরুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল কোন পার্থক্য ছাড়াই। ইতিহাসের সূত্রগুলি ক্রমাগত উল্লেখ করেছে যে, যে কেউ একটি বিষয় পড়তে, লিখতে বা অধ্যয়ন করতে পারে তাকে এসব লাইব্রেরিগুলোতে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করা হতো। ত্রিপোলি, কায়রো, শিরাজ এবং মোসুলের গ্রন্থাগারগুলিতেও বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করার ব্যবস্থা ছিল। ছাত্র এবং প-িতদের জন্য কিতাব ব্যবহারের সমস্ত উপায় ও সুবিধা এসব লাইব্রেরীতে প্রবর্তন করা হয়েছিল। পাবলিক লাইব্রেরিগুলি কখনো কখনো উনাদের অনেক সংখ্যক বই ঋণের অনুমতি দিত অর্থ জমার বিপরীতে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বই ঋণ দেওয়া হত এই ধরণের আমানত ছাড়াই।
এর একটি উদাহরণ হল মারভের দামিরিয়া লাইব্রেরি, যেখান থেকে ইয়াকুত আল-হামাউই ২০০টি বই ধার করেছিলেন।
মুসলমানগণ পাবলিক লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত ভবনগুলোর ব্যাপারে অত্যন্ত যতœবান ছিলেন। শিরাজ, কর্ডোভা এবং কায়রোতে কিছু পাবলিক লাইব্রেরি আলাদা অবকাঠামোতে স্থাপন করা হয়েছিল। যেখানে বিভিন্ন ব্যবহারের জন্য অনেকগুলি কক্ষ ছিল। তাকসহ গ্যালারী কক্ষ ছিল যেখানে বই রাখা হত। কিতাব পড়ার জন্য কক্ষ, পান্ডুলিপির কপি তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিতদের জন্য আলাদা কক্ষ, সাহিত্য সমাবেশ ও পরিবেশন করার জন্য আলাদা কক্ষ।
এটা লক্ষণীয় যে অনেক পাবলিক লাইব্রেরিতে শুধুমাত্র পড়ার জন্য কক্ষই নয়, বৈঠকের জন্য কক্ষ এবং আলোচনা ও বিতর্কের জন্য ছোট কক্ষও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সমস্ত কক্ষ সাজানো এবং আরামদায়ক ছিল। মেঝেতে কার্পেট বা ম্যাট বিছানো থাকত যেখানে পাঠক আড়াআড়ি বসতেন, পড়তেন, লিখতেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মসজিদ গ্রন্থাগার
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নুরুদ্দীন ইবনে ইসহাক আল-বিতরূজী
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আবু বকর মুহম্মদ ইবনে আবদুল বাকী আল বাগদাদী
১৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের চক্রান্ত (৫)
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আবু আবদুল্লাহ মুহম্মদ আল ইদরিসী আল কুরতুবী আল হাসানী আস সাবতী
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আবু মুহম্মদ জাবির ইবনে আফলাহ আল ইশবিলি
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিখ্যাত মহাকাশ ও জ্যোতিষ বিজ্ঞানী আবু ইসহাক ইবরাহীম ইবনে ইয়াহইয়া আন নাক্কাশ আয যারকালী
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ সৌর ক্যালেন্ডার অত্যন্ত জরুরী। উম্মাহর এই ঘাটতি পুরণের উদ্দেশ্যেই আত-তাক্বউইমুশ শামসী তৈরি করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের উচিত- বিধর্মীদের অনুসরন বাদ দিয়ে আত-তাক্বউইমুশ শামসী অনুসরন-অনুকরন করা।
২৭ আগস্ট, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)