পবিত্র যাকাত-ফিতরা আদায়ের হুকুম আহকাম ও মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক-২
, ২৪ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২১ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদাক্বাতুল ফিতর’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতি দেওয়া। আমরা পবিত্র ঈদের দিন রোযা বিরতি করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ছুবহে ছাদিক্বের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (৭.৫ তোলা স্বর্ণ অথবা ৫২.৫ তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য - যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী রূপা ১২৮২.৬/- টাকা তোলা হিসেবে ৬৭,৩৩৭.৫/- টাকার) সম্পদ থাকে; তাদের প্রত্যেককেই নিজের এবং অধীনস্থদের পক্ষ হতে নিজ নিজ এলাকা অনুযায়ী “১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা এর সমপরিমাণ মূল্য” ছদাক্বাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতে হবে।
ঢাকা শহরে ভালো লাল আটা ৬৫/- টাকা কেজি। সে হিসেবে এ বছর ছদাক্বাতুল ফিতর ১০৮/- টাকা। সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে, আটা বা তার মূল্য ব্যতীত অন্য কিছু যেমন- চাল, খেজুর ইত্যাদি দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়িয নেই।
রোযা শেষ হলে পবিত্র ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্মানিত সুন্নত মুবারক হচ্ছে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যেই ফিতরা আদায় করা যা ৭০ গুণ বেশি ফযীলত লাভের কারণ।
তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে সে কারণে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তা পৌঁছেনা বা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু সু’আইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। উনার পিতা বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম, পুরুষ অথবা নারী প্রত্যেক দুইজনের উপর এক সা' গম (ফিতরাহ) নির্ধারিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে এর দ্বারা পবিত্র করবেন এবং তোমাদের দরিদ্রদেরকে মহান অল্লাহ পাক তিনি তাদের দানের চাইতে অধিক দিবেন। ” (আবূ দাউদ শরীফ: কিতাবুয যাকাত: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১৬১৯)
যাকাত দিলে যে নিয়ামত মুবারক লাভ করা যায় সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
خُذْ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ.
অর্থ:“(ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদের মাল-সম্পদ থেকে ছদক্বাহ (যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি) গ্রহণ করুন, তা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি তাদেরকে পবিত্র করুন ও পরিশুদ্ধ করুন এবং তাদের জন্য মহাসম্মানিত দু’আ মুবারক করুন। নিশ্চয়ই আপনার মহাসম্মানিত দু’আ মুবারক তাদের জন্যে প্রশান্তি লাভের কারণ হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সব কিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন। ” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ:১০৩)
উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ৪ খানা বিশেষ নেয়ামত মুবারক উনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে,
(১) ত্বহারাত বা পবিত্রতা অর্জন হয়।
(২) তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধি হাছিল হয়।
(৩) সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া মুবারক পাওয়া যায় ও
(৪) কামিয়াবী অর্জন হয়, প্রশান্তি লাভ হয়-দুনিয়া ও আখিরাতে।
যাকাত শুধু যেখানে সেখানে বা যাকে তাকে দিলে আদায় হবে না, যাচাই করে হক্ব স্থানে প্রদানের ব্যবস্থাও করতে হবে; যেখানে দিলে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হন। আর বর্তমানে সেই হক্ব স্থান হচ্ছে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহবোর্ডিং যা যাকাত, ফিতরা, উশর,মন্নত,দান-ছদক্বা ইত্যাদি প্রদানের শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র হক্ব স্থান। যেখানে যাকাত দিলে তা নিঃসন্দেহে কবুল হবে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে যাকাত, ফিতরা, ওশর, দান-ছদক্বা, মান্নত-কাফফারা ইত্যাদি নিঃসন্দেহে কবুল হওয়ার একমাত্র হক্ব স্থান, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহবোর্ডিং এ দ্রুত পৌঁছানো। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র আযানের জবাব দেয়ার হুকুম-আহকাম ও খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক (১)
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার যব ও যবের রুটি
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে (নববর্ষ) বা নওরোজ পালন করা হারাম (৩)
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘হাইস’
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে (নববর্ষ) বা নওরোজ পালন করা হারাম (২)
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার “হারীসাহ
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে (নববর্ষ) বা নওরোজ পালন করা হারাম (১)
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সেলাইবিহীন সুন্নতী ইযার বা লুঙ্গি
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি ও উপকারিতা : দুধজাতীয় খাবার
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রতিক্ষেত্রে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ করা ফরয। কোন অবস্থাতেই কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করা যাবে না (১)
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাবারের সময় দস্তরখানা ব্যবহার করা সুন্নত
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
শীতল-ঠান্ডা এবং মিঠা পানি পান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)