ইলমে তাছাউফ
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
, ১৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৪ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইলমে তাছাউফ
লতিফাসমূহে পবিত্র যিকির জারির অর্থ উক্ত লতিফাসমূহে সর্বক্ষণ আল্লাহ আল্লাহ যিকির মুবারক হওয়া। অর্থাৎ যার যে লতিফার যিকির জারি হবে, সে ব্যক্তির চলা-ফেরা, উঠা-বসা, আহার-নিদ্রা, ওযূ-ইস্তিঞ্জা সর্বাবস্থায় সর্বক্ষণ সে লতিফা আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করবে। আর তাতে তার উক্ত লতিফা সংশ্লিষ্ট বদ স্বভাবসমূহ বিদূরীত হবে এবং সৎ গুণসমূহ অর্জিত হবে। যেমন- ক্বলব লতিফাকে বলা হয় তওবার মাক্বাম। যার ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হবে অর্থাৎ যার ক্বলব ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সর্বক্ষণ আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করবে, তখন তওবার মাক্বামের গুণ হিসেবে তার দ্বারা যদি কোনো গুনাহও হয়, তবে গুনাহ করার পর গাফিল থাকার মানসিকতা দূর হবে এবং গুনাহ করার সাথে সাথে খাছ তওবা করার যোগ্যতা পয়দা হবে। এছাড়াও ক্বলবের মাক্বামের আরো অনেক তাৎপর্য রয়েছে।
অনুরূপ ক্বলবের পরে যথাক্রমে রূহ, সির, খফি, আখফা, নফ্স্, আব, আতেশ, খাক, বাদ অর্থাৎ দশ লতিফার প্রত্যেকটিতে পবিত্র যিকির জারি হলে সে লতিফার সংশ্লিষ্ট বদ গুণাবলী বর্জিত হয় এবং সৎ গুণাবলী অর্জিত হয়। হক্ব মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে বাইয়াত হয়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে পবিত্র যিকির করলে সাধারণত প্রতিটি লতিফার যিকির জারি হতে এক মাস সময় লাগে। তবে কোশেশ ও ইখলাছের তারতম্যের কারণে কম-বেশি সময় লাগতে পারে।
‘পবিত্র সুলত্বানুল আযকার’ যিকির মুবারক প্রসঙ্গে
দশ লতিফার প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদা পবিত্র যিকির জারি হওয়ার পর সম্মিলিতভাবে দশ লতিফার যিকির করতে হয়। আর একেই বলা হয় পবিত্র সুলত্বানুল আযকার বা যিকিরের বাদশাহ।
এতে প্রথমে প্রত্যেক পশমের গোড়ায় গোড়ায় অতঃপর পর্যায়ক্রমে চামড়া, গোশত, রক্ত, হাড় ও তার মজ্জায় অর্থাৎ সমগ্র শরীরে আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক জারি হয়ে যায়, তখন মাথার তালু হতে পায়ের তলা পর্যন্ত শরীরের সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করতে থাকে।
উল্লেখ্য, পবিত্র সুলত্বানুল আযকার যিকির মুবারক উনার তিনটি পর্যায় বা স্তর রয়েছে। প্রথমত : সালিক বা মুরীদ দেখতে পাবে যে, তার শরীরের সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করছে। দ্বিতীয়ত : সালিক দেখতে পাবে যে, তার আশেপাশের গাছ-পালা, তরুলতা সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করছে। তৃতীয়ত : সালিক দেখতে পাবে যে, তাহতাচ্ছারা হতে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করছে। অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত যত কায়িনাত বা মাখলূকাত রয়েছে, সবই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করছে।
যে প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّ ۚ وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا يُسَبِّحُ بِـحَمْدِهٖ وَلٰكِنْ لَّا تَفْقَهُوْنَ تَسْبِيْحَهُمْ ۗ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا.
অর্থ : সাত আসমান ও যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সব কিছুই উনার (খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার) তাসবীহ পাঠ করছে। এমন কিছুই নেই, যা উনার প্রশংসা মুবারক জ্ঞাপন করেনা। কিন্তু তোমরা তা বুঝনা। নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ধৈর্যশীল ও ক্ষমাশীল। (সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : আয়াত শরীফ ৪৪)
পবিত্র ইলমে তাছাওউফ উনার পরিভাষায় একেই পবিত্র সুলত্বানুল আযকার উনার শেষ স্তর বলা হয়।
এ সবক বা মুরাক্বাবা-মুশাহাদার দ্বারাই মুহলিকাত বা বদ গুণাবলী দূর হয়ে অন্তরে পবিত্র মুনজিয়াত বা সৎ গুণাবলী পয়দা হয়, যার ফলে সালিক পবিত্র বিলায়েত উনার দরজা তথা পবিত্র বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করে। তাই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনার ছহীহ বর্ণনা সাপেক্ষে সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম ও মাশায়িখে ইযাম আজমাইন উনারা এরূপভাবে যিকির-ফিকির, মুরাক্বাবা-মুশাহাদা উনাদের মাধ্যমে ক্বল্ব্ তথা দশ লতিফায় পবিত্র যিকির জারি করতঃ অন্ততপক্ষে পবিত্র বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করাকে ফরয-ওয়াজিব বলে ফতওয়া দেন। উনাদের মতে, অন্তর পরিশুদ্ধ করে পবিত্র ইখলাছ অর্জন করার এটাই একমাত্র উপায় বা পদ্ধতি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)