ইলমে তাছাউফ
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয
, ২০ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১১ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইলমে তাছাউফ
পবিত্র ইলমে তাছাওউফ উনার আ’মালী বিষয়সমূহ হাছিল করা যেহেতু একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত সেহেতু এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার আহকাম ও কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পরিচয় বর্ণনা করা হলো।
স্মরণযোগ্য যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পবিত্র ইলমে তাছাওউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুযূরী ক্বলব অর্জন করতঃ পবিত্র বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করতে হলে অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ বা পীর ছাহিব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতেই হবে। কারণ কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত পবিত্র ইলমে তাছাওউফ অর্জন করা কখনই সম্ভব নয়। আর পবিত্র ইলমে তাছাওউফ ব্যতীতও অন্তর পরিশুদ্ধ করা কখনই সম্ভব নয় এবং অন্তর পরিশুদ্ধ করা ব্যতীত হুযূরী হাছিল করা বা পবিত্র বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
তাই অনুসরণীয় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ রায় বা ফতওয়া দেন যে, পবিত্র ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করার মাধ্যমে হুযূরী ক্বলব হাছিল করতঃ পবিত্র বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করার জন্য একজন কামিল শায়েখ ছাহিব বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয। কেননা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, পবিত্র ইলমে তাছাওউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বলব হাছিল করা তথা অন্ততপক্ষে পবিত্র বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করা ফরয।
এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী’ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে-
كُلُّ مَا يَتَرَتَّبُ عَلَيْهِ الْاَثَرُ مِنَ الْفُرُوْضِ الْاَعْيَانِ فَهُوَ فَرْضٌ عَيْنٌ
অর্থ : যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয।
মহান হানাফী মাযহাব উনার মশহুর ফিক্বাহর কিতাব ‘দুররুল মুখতার’ উনার মাঝে উল্লেখ আছে যে-
مَا لَا يَتِمُّ بِهِ الْفَرْضُ فَهُوَ فَرْضٌ
অর্থ : যে আমল ব্যতীত কোনো ফরয পূর্ণ হয়না, সে ফরয পূর্ণ করার জন্য ওই আমল করাও ফরয।
উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র ইলমে তাছাওউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয আর তা যেহেতু হযরত কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।
শুধু তাই নয়, কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম বা ওলীআল্লাহ আজমাঈন উনাদের ছোহবত লাভ করা বা উনাদেরকে অনুসরণ করার নির্দেশ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেই রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণ উনাদের সঙ্গী হও। (সূরা তওবা শরীফ : আয়াত শরীফ ১১৯)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ছাদিক্বীন দ্বারা উনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে, যাঁরা যাহির-বাতিন, ভিতর-বাহির, আমল-আখলাক, সীরত-ছূরত, ক্বওল-ফে’ল সর্বাবস্থায় সত্যের উপর ক্বায়িম রয়েছেন। অর্থাৎ যাঁরা পবিত্র ইলমে ফিক্বাহ ও পবিত্র ইলমে তাছাওউফ উভয় ইলমে তাকমীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছেছেন।
এক কথায় যাঁরা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মত মুবারক অনুযায়ী এবং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথ মুবারক অনুযায়ী হয়েছেন এবং সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল। অর্থাৎ যাঁরা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّـهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِىِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ ۖ
অর্থ: ওই সমস্ত ব্যক্তিত্ব উনাদের পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা লাযিম করে নাও, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যা তথা দায়িমীভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য যিকির-ফিকির করে থাকেন। (সূরা কাহ্ফ শরীফ : আয়াত শরীফ ২৮)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য পবিত্র ক্বলবী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ ۚ
অর্থ : যিনি আমার দিকে রুজু হয়েছেন, উনার পথকে অনুসরণ কর। (সূরা লুক্বমান শরীফ : আয়াত শরীফ ১৫)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: ইলমে তাছাউফ উনার দৃষ্টিতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলমে তাছাউফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)