ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩২)
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ১৭ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২২ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইলমে তাছাউফ
(১৯) কামিল শায়েখ কাশফ্ দ্বারা মুরীদের অবস্থা জ্ঞাত হচ্ছেন। এটা না ভেবে উনার নিকট নিজ হাল জানাবে। এ ব্যাপারে তিনি যে উপদেশ দেন তা পূর্ণরূপে পালন করার কোশেশ করবে। কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা মুরীদের হাল হাক্বীক্বত বা বিভিন্ন অবস্থাদি সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। মুরীদ কখন, কোথায়, কোন কাজে রত কি অবস্থায় থাকে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে সেটাও উনাদেরকে অবহিত করেন।
গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন যে, আমার মুরীদ যদি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে ইযার বা লুঙ্গির বাঁধন খোলা অবস্থায় থাকে, তাহলে আমি পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত থেকে তা বেঁধে দেয়ার ক্ষমতা রাখি। অর্থাৎ সকল মুরীদই উনার আয়ত্ত্বাধীন। যা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কারামত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। যে কারামত মুবারককে অস্বীকার করা বা সে সম্পর্কে সন্দিহান হওয়ার কোন অবকাশ নেই। কারণ আকাঈদে নাসাফী ও আকাঈদে হাক্কাহসহ আরো অনেক কিতাবেই উল্লেখ আছে যে-
كَرَامَاتُ الْاَوْلِيَاءِ حَقٌّ
অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের কারামত সত্য। যা দলীলে কেত্য়ী তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِتَّقُوْا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ، فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللهِ
অর্থ: তোমরা হাক্বীক্বী মু’মিন তথা ওলীআল্লাহগণের ফিরাসাত (অন্তরদৃষ্টি) উনাকে ভয় করো। উনারা উনাদের মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক দ্বারা প্রত্যক্ষ করেন। ” (তিরমিযী শরীফ, আল মু’জামুল কাবীর ৭/১০৯, মু’জামুল আওসাত্ব-৩/৩১২, আহকামুশ শরীয়াহ ৩/২৯৩, মুসনাদুশ শামিয়্যীন ৩/১৮৩, হিলইয়াতুল আউলিয়া-৪/৯৮)
সুতরাং কামিল শায়েখ মুরীদের হাল হাক্বীক্বত সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। বাতিনীভাবে সে হালের উন্নতি সাধন করতে পারেন এবং তা করেও থাকেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বীয় কামিল শায়েখ উনাকে মুরীদের হাল অবহিত করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও ভদ্রতা। সর্বোপরি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বরকতময় জীবনী মুবারকে তার প্রমাণ মিলে। তবে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের হাল এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হাল বা অবস্থা একরকম নয়; আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কেননা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন; আর উনাদের পরে যারা এসেছেন উনাদেরকে মাধ্যম দিয়ে যেতে হয়েছে, সরাসরি নিয়ামত মুবারক লাভ করতে পারেননি। যার কারণে সরাসরি ছোহবত মুবারকের তাছীরে উনাদের যে হাল ও জজবা অর্থাৎ ঈমানী কুওওয়াত পয়দা হয়েছে তা পরবর্তী উম্মত লাভ করতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে ফকীহুল আছার, আল্লামা রুহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “ওয়াজ শিক্ষা” কিতাবের তৃতীয় ভাগের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন- বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে আমার সাক্ষাত হলো; তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি কেমন আছেন? উত্তরে আমি বললাম, হানযালা মুনাফিক হয়ে গিয়েছে। ইহা শুনে তিনি বললেন, আপনি বলেন কি? আমি বললাম, যে হ্যাঁ, হানযালা ঠিকই বলেছে; হানযালা মুনাফিক হয়ে গিয়েছে। কেননা আমরা যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে যাই, তিনি আমাদেরকে নছীহত মুবারক দান করেন, জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করেন, যেন আমরা তা চাক্ষুষ দেখে থাকি। অতঃপর যখন সেখান থেকে ফিরে এসে আহলিয়া বা স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির সাথে মিলিত হই তখন সবকিছু ভুলে যাই।
তখন আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! নিশ্চয়ই আমারও তো একই অবস্থা হয়। অতঃপর আমি ও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম আমরা রওয়ানা হলাম দরবারে নববী শরীফ উনার দিকে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হানযালা মুনাফিক হয়ে গিয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তা কিরূপে? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যখন আপনার দরবার শরীফে অবস্থান করি, আপনি আমাদের নিকট জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা করেন, তখন যেন আমরা তা স্বচক্ষে দর্শন করি। অতঃপর যখন আপনার ছোহবত মুবারক থেকে চলে যাই তখন সে অবস্থা থাকে না।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা শুনে বললেন, হে হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ করে বলছি, আপনারা যদি সর্বক্ষণ আমার ছোহবত মুবারকে থেকে যিকির-ফিকিরে লিপ্ত থাকেন তাহলে ফেরেশতাগণ আপনাদের শয্যায় ও পথে ঘাটে আপনাদের সাথে মুছাফাহা করবেন। সুবহানাল্লাহ! তবে এক সময় মহান আল্লাহ পাক উনার হক্ব আদায় করবেন। অন্য সময়ে নিজের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের হক্ব বজায় রাখবেন। ” (মুসলিম শরীফ) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১)
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)