প্রোটিন সমৃদ্ধ ব্রি ধান ১০৭-১০৮ ও অন্যান্য প্রজাতি
, ০৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পাঁচ মিশালী
বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ভাত হওয়ায় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে কৃষি কর্মকর্তারা। তারই অংশ হিসাবে ব্রি ধান ১০৭ ও ১০৮ নামের নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
অন্য ধানের তুলনায় এসব ধানে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি বলে জানা গেছে বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে। তবে সেটা মানুষের শরীরের আমিষ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুষ্টি বিজ্ঞানীদের।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) নতুন উদ্ভাবিত এই দু’টি জাতের ধানের একটি হলো ব্রি ধান ১০৭ ও অন্যটির নাম ব্রি ধান ১০৮।
বিজ্ঞানীরা বলছে, উভয় প্রজাতির ধান যেমন উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ, ঠিক তেমনি এগুলো উচ্চফলনশীলও। সেইসাথে, এই ধান থেকে চিকন এবং ঝরঝরে চাল হওয়ায় এগুলো বিদেশে রপ্তানিযোগ্য।
ব্রি ধান ১০৭:
ব্রি ধান ১০৭ হলো উফশী বালাম জাতের বোরো মৌসুমের ধানের জাত। এই প্রজাতির ধান উদ্ভাবন করতে প্রায় সাত বছর লেগেছে।
এই ধানের জীবনকাল ১৪৮ থেকে ১৫০ দিন। এই ধানের দানার রং খড়ের মতো এবং চাল হলো বাসমতী এবং বালাম চালের মতো লম্বা এবং চিকন। এছাড়া, পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৩ সেন্টিমিটার।
যখন এটি মাঠ পর্যায়ে চাষ করা হবে, তখন হেক্টরপ্রতি এই ধানের গড় ফলন হবে ৮.২ টন। তবে, উপযুক্ত পরিচর্যা করলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ থেকে ১০ টন পর্যন্তও ফলন দিতে পারে ব্রি ধান ১০৭।
এই প্রজাতির ধানটি লবণাক্ত বা খরা এলাকা বাদে সারাদেশে চাষাবাদযোগ্য। যেমন- “সাধারণ চালে ৬ থেকে ৮ শতাংশ প্রোটিন এমনিতেই থাকে। কিন্তু এই ধানে ১০.০২ শতাংশ প্রোটিন আছে।”
কেউ যদি তিনবেলা এই চালের ভাত খায়, তাহলে এটা দিয়ে তার শরীরের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
“দৈনিক একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে ৫৮ গ্রাম প্রোটিন দরকার হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক গরীব মানুষ আছে, যারা প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন দুধ, ডিম, মাছ, গোশত খেতে পারে না। তাদের জন্য এই চাল খুবই উপযোগী। কারণ এতে দুই শতাংশের মতো বেশি প্রোটিন আছে।”
ব্রি ধান ১০৮:
ব্রি’র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম মাসুদুজ্জামানের নেতৃত্বে ‘ব্রি ধান ১০৮’ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।
এই প্রজাতির ধানটি অপেক্ষাকৃত খাটো বা ছোট চাল; সেইসাথে, আবার চিকনও। এটার গড় ফলন হলো হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৮ টন। কিন্তু, এটাও উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ১০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে।
চালটির আকার হবে জিরার মতো এবং এর ভাত হবে ঝরঝরে, সাদা রঙের। এতে প্রোটিনের মাত্রা ৮.৮ শতাংশ। এটিও বোরো মৌসুমে উপকূল ও খরাপ্রবণ অঞ্চল বাদে সারা দেশে চাষযোগ্য।
গত প্রায় ৯ বছর ধরে এই প্রজাতিটির জন্য গবেষণা করে হয়েছে। “কেউ যদি তিনবেলা এই চালের ভাত খায়, তবে এখান থেকে তার দেহের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে।”
ধান গবেষণাকেন্দ্র এবং ব্রি’র ১১টি আঞ্চলিক অফিসে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর নতুন প্রজাতির এই ধান দু’টির সামগ্রিক তথ্য সামনে আসে।
এই ধান কি মাছ-গোশতের বিকল্প?
উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ধান হওয়ায় এই ধানগুলো মানুষের দেহের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে ঠিকই। কিন্তু সেটা মাছ, গোশত, দুধ, ডিমের বিকল্প হবে কিনা; সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
“ব্রি ধান ১০৭ এবং ১০৮-কে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে বিকল্প বলা যাবে কিনা, সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে যারা মাছ-গোশত কিনে খেতে পারছে না, তাদের ক্ষেত্রে এটা ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।”
তবে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছে, চালের মধ্যে প্রোটিন থাকলেও তা আমিষজাত প্রোটিনের অভাব মানবদেহে পূরণের জন্য যথেষ্ঠ নয়।
“বাড়ন্ত বয়সের বাচ্চাদের গ্রোথের জন্য উদ্ভিজ আমিষ পর্যাপ্ত না। বাচ্চাকে প্রাণীজ আমিষ খেতেই হবে। উদ্ভিদ আমিষ ও প্রাণীজ আমিষ এ দু’টোর রয়েছে বিস্তর ফারাক। তাই চাল থেকে প্রাপ্ত আমিষ কখনো প্রাণীজ আমিষের ‘সাবস্টিটিউট’ হতে পারে না।
প্রাণীজ আমিষের ক্ষেত্রে যে ২০টি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে প্রোটিন তৈরি হচ্ছে, তা গ্রোথের জন্য যে মাত্রায় দরকার, সেটা উদ্ভিজ আমিষ দিয়ে সরবরাহ সম্ভব না। সেকারণেই গ্রোথের জন্য প্রাণীজ আমিষ লাগবে।”
আমার শক্তির কত শতাংশ কোন খাত থেকে আসবে, সেটা তো গাইডলাইন করে দেয়া আছে। প্রতি কেজি ওজনের জন্য.৮ গ্রাম প্রোটিন দরকার। সেক্ষেত্রে, যতটুকু প্রোটিন সে খাবে, তার ১০-২০ শতাংশ প্রাণীজ আমিষ থাকতে হবে।”
বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু ভাত বেশি খায়, তাই তাদের দৈনিক প্রোটিনের চাহিদার অনেকটাই এখান থেকে পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু তারা মানসম্পন্ন প্রোটিন খাচ্ছে কিনা, সেটাই মূল প্রশ্ন হওয়া উচিত।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, প্রোটিন কোয়ালিটি। কারণ, এনিমেল প্রোটিন এবং প্লান্ট প্রোটিনের কোয়ালিটি এক না। প্লান্ট প্রোটিনের যে কোয়ালিটি, তাতে যে পরিমাণ অ্যামাইনো এসিড থাকার কথা, সেটা থাকে না। তাই, প্রোটিনের কোয়ালিটি এবং কোয়ান্টিটি, দু’টোই নিশ্চিত করতে হয়। প্রোটিন যদি পুওর কোয়ালিটির হয়, সেক্ষেত্রে কোয়ান্টিটি ঠিক করেও কোনও লাভ নাই।
বাংলাদেশে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ধান এই প্রথম?
যখন কোনও ধানে প্রোটিনের পরিমাণ ৯ শতাংশের বেশি থাকে, তখন সেটিকে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ধান হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই হিসেবে, বাংলাদেশে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ধানের উদ্ধাবন এটাই প্রথম না।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ধানের প্রজাতি উদ্ভাবন করা হয় ১৯৯৭ সালে, ধানটির নাম ব্রি ধান ৩৪। এরপর সময়ের সাথে সাথে আরও অনেক প্রজাতির ধান এসেছে, যেগুলোর সবগুলোতেই প্রোটিনের পরিমাণ ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ব্রি ধান ৩৪-এর পর এসেছে-
ব্রি ধান ৩৬, ব্রি ধান ৩৭, ব্রি ধান ৬৬, ব্রি ধান ৮১, ব্রি ধান ৮৬, ব্রি ধান ৯০, ব্রি ধান ৯১, ব্রি ধান ৯৬, ব্রি হাইব্রিড ৪, ব্রি হাইব্রিড ৭।
কিন্তু পার্থক্য হলো, ব্রি ধান ৩৪ উদ্ভাবনের অনেক পরে জানা গেছে যে এটি উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ধান।
ভারতেও কয়েকটা প্রজাতি এর আগে অনুমোদন পেয়েছে। আমাদেরও ১০-১১ শতাংশ প্রোটিনসমৃদ্ধ ধানের কিছু কিছু প্রজাতি এর আগে আগে থেকেই হচ্ছে। পার্থক্য হলো, আগে সেগুলো টার্গেট (লক্ষ্য নিয়ে) করে করেনি। কিন্তু এখন মানুষের পুষ্টির কথা বিবেচনা করে প্রোটিনের পরিমাণ যেন বেশী হয় সেই উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষি ও ধান গবেষণাকেন্দ্র।
কবে নাগাদ পাওয়া যাবে?
এবছর বীজ উৎপাদন করা হলে ২০২৫ সালের মে মাসের পর এই ধানের চাল বাজারে আসবে।
বীজ কৃষকদের হাতে চলে গেলে কত হেক্টর জমিতে এই ধানের চাষ হবে এ বিষয়ে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেছে, “একটা প্রজাতি উদ্ভাবন হওয়ার সাথে সাথে কৃষকদের হাতে যায় না। এটার আস্তে আস্তে প্রসার হবে। সেই হিসেবে আমরা ধরে নিতে পারি যে এটা পূর্ণাঙ্গভাবে মাঠে যেতে তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যাবে।” এই ধান উৎপাদনে বাড়তি কোনো খরচ হয় না। তাই এর দাম স্বল্পমূল্যই থাকে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
উৎপাদন বাড়াতে ছাঁটাই করা হয় চা গাছ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের যে গ্রামের জনসংখ্যা চারজন!
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ডাবের পানি খেলে শরীরে কি হয়? ডাবের পানির উপকারিতা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ধানের গোলা এখন কেবলই স্মৃতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
১০ হাজার ফুট ওপর থেকেও যেভাবে শিকার দেখতে পায় ঈগল
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ওজন আর রক্তচাপ কমায় বিটের রস! বাড়ায় স্মৃতিশক্তি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবালের সন্ধান মিললো প্রশান্ত মহাসাগরে
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্ট্রবেরি খেলে শরীরে যা ঘটে
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে ৫ ভিটামিনের অভাবে অকালে চুল পেকে যায়
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার নৌকার সন্ধান দেবে ৩ হাজার বছরের পুরোনো মানচিত্র!
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)