পৃথিবীর যেখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়
, ২৫ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৪ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পাঁচ মিশালী
তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে এখন দেশের বেশির ভাগ এলাকায়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি আর বান্দরবানের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানি আর পাহাড়ি ঢলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় যে এলাকায়, তা নিয়েই প্রবন্ধ।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় যে এলাকাটিতে সেটি কিন্তু আমাদের পাশের দেশ ভারতেই। মেঘালয় রাজ্যের উক্ত গ্রামটির নাম মৌসিনরাম। সিলেট সীমান্ত দিয়ে গেলে সহজে পৌঁছানো যায় সেখানে। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১ হাজার ৮০২.৪ মিলিমিটার। বৃষ্টির জন্য বিখ্যাত মেঘালয়ের আরেক শহর চেরাপুঞ্জি থেকে জায়গাটির দূরত্ব মোট ১৫ কিলোমিটার। পূর্ব খাসি পাহাড়ের এই গ্রামটি টানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষদের। বিশেষ করে বর্ষায় এখানে রোদ্রালোকিত দিন পাওয়া কঠিন।
সাগর সমতল থেকে মৌসিনরামের গ্রামটির উচ্চতা ১ হাজার ৪০০ মিটার। এই গ্রামটিতে পাহাড়ি এলাকার পানিবায়ুর পাশাপাশি লম্বা বর্ষাকাল ও তুলনামূলক ক্ষণস্থায়ী শুষ্ক মৌসুম হয়। এখানে টানা বৃষ্টির দুটি কারণ ওঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়। বর্ষার সময় বঙ্গোপসাগর থেকে ওপরের দিকে ওঠে প্রচুর পানীয়বাষ্পসহ মেঘ। খাসি পর্বতে বাধা পেয়ে নিচে নেমে মৌসিনরাম ও চেরাপুঞ্জি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়।
টানা বৃষ্টি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে বড় বাধা। তবে সেখানকার মানুষের জন্য এটি পুরোপুরি সত্যি নয়। বৃষ্টির কারণে তাদের জীবন যেন পুরো থমকে না যায় সে জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করে থাকে এখানকার অধিবাসীরা। বৃষ্টিপাতের শব্দের আওয়াজ এড়াতে এখানকার অধিকাংশ বাড়ি শব্দরোধী। নাপস নামে পরিচিত এখানকার ঐতিহ্যবাহী ছাতাগুলি শরীরের বেশির ভাগ অংশই ঢেকে রাখে। এটি স্থানীয়দের বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত খুব একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই ছাতাগুলো বাঁশ ও কলা পাতা দিয়ে তৈরি। তুমুল বৃষ্টির জন্য স্কুলের ক্লাস প্রায়ই বাতিল হয় এই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বর্ষায় দিনের একটা বড় সময় বাড়িতে কাটায়।
কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়চূড়া, সবুজ জমি, শীতল বাতাস, পানিপ্রপাত সব মিলিয়েই মনোরম স্থানটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল গ্রাম হিসেবে গিনেস বুকে নাম ওঠা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি একে জনপ্রিয় করে তুলে। শান্ত গ্রামটি ধীরে ধীরে একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। মৌসিনরামের অবস্থান পূর্ব খাসি পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে একটি পাহাড়ের চূড়ায়। গ্রামে যাওয়ার পথে পানিপ্রপাত এবং বৃষ্টিতে ভেজা গাছপালা, খেতের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামটি থেকে কিছুটা দূরে থাকতেই কুয়াশার ঘন আবরণ দৃষ্টিসীমা কমিয়ে দেবে। কখনো কখনো সেটা কেবল ১০ মিটার পর্যন্ত। তারপরে একটি খাঁড়া পাহাড়ের পাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে গেছে রাস্তাটি। একসময় একটি সাইন পোস্টের সামনে যেখানে লেখা দেখা যাবে ‘মৌসিনরাম ভিলেজ’। এখান থেকে অল্প কিছুটা দূরত্ব পেরোলে ঋতুভেদে হালকা বা ভারী বর্ষণ উপভোগ করা যায়।
এই অঞ্চলের ছাতা প্রবল বাতাস ও ভারী বৃষ্টিপাত দুটির থেকেই বাঁচায়। এই ছাতা নিয়ে সেখানকার কৃষকদের ক্ষেতে কাজ করতে দেখা যায়। আবহাওয়ার এই ব্যতিক্রমী দৃশ্য ছাড়াও এখানে অনেক কিছু রয়েছে।
মৌসিনরামের আগে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিস্নাত এলাকার তকমা ছিল পাশের শহর চেরাপুঞ্জির। ১৯৭৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গড় হিসেব করলে মৌসিনরামের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১ হাজার ৮০২.৪ মিলিমিটার। অপরদিকে ১৯৭১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হিসেব করলে চেরাপুঞ্জির বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১১ হাজার ৩৫৯.৪ মিলিমিটার। বর্ষায় কখনো কখনো টানা ১৫-২০ দিন বৃষ্টি হয় চেরাপুঞ্জিতে। কলম্বিয়ার তুতোনেন্দো আছে বৃষ্টিবহুল এলাকার তালিকায় তৃতীয় স্থানে। আর্দ্র উষ্ণম-লীয় রেইনফরেস্টের আবহাওয়া চোখে পড়ে এলাকাটিতে।
সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের কলোরিয়াং নামের একটি গ্রামও প্রচুর বৃষ্টির জন্য আলোচনায় এসেছে। এখানকার বাসিন্দাদের দাবি ঠিকভাবে পরিমাপ করলে মৌসিনরামকে টেক্কা দেবে তাদের শহর। ১০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শহরটিকে ঘিরে রেখেছে উঁচু সব পর্বত। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস ছাড়া বাকি সময়টা এই এলাকায় বৃষ্টির কোনো কমতি হয় না। তবে এটি এখনো কেবল শহরবাসীর দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। তাই মৌসিনরামই এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিস্নাত এলাকা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাতমসজিদ রোডের ঈদগাহ এক অনন্য মোগল পুরাকীর্তি
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
চাঁদের মাটিতে গাছ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১৭ দিন ধরে মৃত বাচ্চাকে বহন করা সেই ‘তিমি’র বাচ্চা হয়েছে আবার
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মহাঔষধ মেথি শাক!
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সূর্যের দিকে সবচেয়ে কাছের যাত্রায় মহাকাশযান
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
১৮০০ বছর পর তুরস্কের প্রাচীন কেস্ট্রোস ফোয়ারা চালু
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিনে তিন কাপ কফি মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি করতে সক্ষম - ক্যানসার-হার্টের মত আত্মঘাতী রোগ-ব্যাধি দূর করে
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম প্রজাতন্ত্রের দেশ সেনেগাল
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সেনেগালে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও ইসলামী আদর্শে নতুন মাত্রা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে আদা
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রাশিয়ার আকাশে দেখা মিললো উজ্জ্বল গ্রহাণুর
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মসজিদের ভেতরে ৫৪০ বছরের পুরনো জিনের মসজিদ!
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)