পবিত্র নামায উনার মাসয়ালা-মাসায়িল
, ১৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র ছলাত বা নামায উনার ফযীলত ও গুরুত্ব
পবিত্র হাজত উনার নামায
যে কোনো প্রকারের নেক মাকছূদ পুরণের জন্য বা কোনো জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য নি¤œলিখিত নিয়মে নামায পড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ দু‘আ করলে মনের আশা পূর্ণ হয়ে থাকে।
প্রথমে উত্তমরূপে উযূ করে, পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তা‘আলা তিনিই যে সর্বপ্রকার সমস্যার সমাধান ও সকল মনের আশা পূর্ণ করার একমাত্র মালিক, সেরূপ দৃঢ় বিশ্বাস অন্তরে বদ্ধমুল করে এবং উনারই উপর পরিপূর্ণ ভরসা করবে। শারীরিক অপবিত্রতা সম্বন্ধে সন্দেহ হলে গোসল করে নিবে। বাজে চিন্তা ও বাজে আলাপ ছেড়ে ধীরস্থির হয়ে উযূ করবে।
তারপর দু রাক‘আত নামায নিয়ত ও তাকবীরে তাহরীমা অন্তে সুবহানাকা, আঊযুবিল্লাহ শরীফ, বিসমিল্লাহ শরীফ ও পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার সাথে অন্য একটি পবিত্র সূরা শরীফ মিলিয়ে অন্যান্য নফল নামায উনার ন্যায় দু’রাক‘আত নামায আদায় করবে, তারপর বসে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ এ দু‘আ কিছুক্ষণ পড়বে এবং পেয়ারা নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ১০০ বার পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়বে।
অতঃপর নিম্নের দু‘আ পড়ে অনুনয়-বিনয় সহকারে মুনাজাত করবে।
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ الْـحَلِيْمُ الْكَرِيْـمُ سُبْحَانَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ. اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيـْنَ. اَسْأَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْـمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيْمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ اِثْـمٍ لَا تَدَعْ لِىْ ذَنْبًا اِلَّا غَفَرْتَه وَلَا هَـمًّا اِلَّا فَرَّجْتَه وَلَا حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا اِلَّا قَضَيْتَهَا. يَا أَرْحَمَ الرَّاحِـمِيْنَ. وَصَلَّى اللهُ تَعَالٰى عَلٰى خَيْرِ خَلْقِهٖ سِيِّدِنَا مَوْلٰنَا حَبِيْبِنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاٰلِهٖ وَاَصْحَابِهٖ اَجْـمَعِيْنَ.
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি ধৈর্য্যশীল, মহামহিম, আমি মহান আরশ পাক উনার মহান রব তা‘আলা উনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যিনি সারা জাহানের পালনকর্তা। আপনার কাছেই আপনার অবশ্যম্ভাবী রহমত ও সুদৃঢ় মাগফিরাত কামনা করি। মহামূল্যবান প্রতিটি নেক কাজ, যাবতীয় কবীরা গুণাহ হতে প্রতিরক্ষা, যাবতীয় ছগীরা গুনাহ থেকে নিরাপত্তার জন্য আপনার কাছে দু‘আ করি। আমার জন্য মাফ করা ছাড়া কোনো গুনাহ বাকি রাখবেন না, কোনো দুশ্চিন্তা দূর করা ছাড়া রাখবেন না, কোনো ঋণ আদায় করা ছাড়া রাখবেন না। আপনার সন্তুষ্টি মুবারক রয়েছে যার প্রতি, (দুনিয়া এবং আখিরাতের) এমন যাবতীয় প্রয়োজনই আপনি পূর্ণ করে দিন হে পরম দয়ালু। মহান আল্লাহ পাক আপনি কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি, উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি এবং সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম উনাদের প্রতি ছলাত মুবারক বর্ষণ করুন।” (তিরমিযী শরীফ)
নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ الْـحَاجَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক‘আতাই ছলাতিল হাজাতি সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
পবিত্র ইস্তিখারা উনার নামায
বিবাহ-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদেশ গমন ইত্যাদি যাবতীয় মুবাহ কাজ, করতে চাইলে পরিণামে যাতে ওই কাজে খায়ের-বরকত হয়, সেই নিয়তে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করাকে ইস্তিখারা বলে। ইস্তিখারা না করে কাজে প্রবৃত্ত হওয়া ঠিক নয়।
ইস্তিখারা করার পর কাজে হাত দিলে ইনশাআল্লাহ পরে সেইজন্য অনুতপ্ত হতে হবে না। প্রবাদ আছে-
مَاخَابَ مَنْ اِسْتَخَارَ وَلَا نَدِمَ مَنْ اِسْتَشَارَ.
অর্থ : “যে ইস্তিখারা করে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়না এবং যে পরামর্শ করে সে লজ্জিত হয় না।” (তাফসীরে দুররে মানছূর ৪র্থ খ- ৮৯ পৃষ্ঠা)
ইস্তিখারা করার সুন্নত তরীক্বা হলো এই যে, পবিত্র ইশা উনার নামায শেষে ঘুমাবার পূর্বে উযূ করে দুরাক‘আত নামায খুব একাগ্রতার সাথে আদায় করে ইস্তিগফার ৩ বার ও পবিত্র দুরূদ শরীফ ১১ বার পড়ার পর পাক পবিত্র বিছানায় উযূ উনার সাথে নি¤œলিখিত দু‘আ অন্ততঃ তিনবার পড়ে ক্বিবলামুখী হয়ে ডান কাতে শয়ন করবে।
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَاَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْئَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَأِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا اَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ. اَللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِّىْ فِيْ دِيْنِـيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ فَأَقْدِرْهُ لِىْ وَيَسِّرْهُ لِىْ ثُـمَّ بَارِكْ لِـىْ فِيْهِ وَاِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْأَمْرَ لِـىْ شَرٌّ لِّىْ فِىْ دِيْنِــىْ وَمَعَاشِىْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ فَأَصْرِفْهُ عَنِّـىْ وَاَصْرِفْنِـيْ عَنْهُ وَأَقْدِرْ لِـىَ الْـخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُـمَّ اَرْضِنِـيْ بِهٖ.
اِنَّ هٰذَا الْأَمْرَ এ বাক্য মুখে উচ্চারণ করার সময় যে কাজ করতে চায় সেই দিকে খেয়াল করবে, স্বপ্নে কিছু বুঝতে পারে কিংবা নাও পারে, তবে নিদ্রা হতে উঠার পর যেদিকে মনের ঝোঁক হয় বলে ধারণা হয় তাই গ্রহণ করবে। একদিনে কিছু বুঝতে না পারলে পরপর সাতদিন এরূপ ইস্তিখারা করবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি এরূপ ইস্তিখারা শিক্ষা দিয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ইস্তিখারা নামায আদায়ের পদ্ধতি
পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার পর যে কোনো পবিত্র সূরা শরীফ পড়ে এই পবিত্র নামায পড়া যায়, তবে প্রথম রাক‘আতে সূরা কাফিরূন শরীফ এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ পড়া উত্তম।
নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ الْاِسْتِخَارَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক‘আতাই ছলাতিল ইস্তিখারাতি সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)