ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ উনার বর্ণনা (পর্ব-৭)
, ১৩ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৪ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৪ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২১ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ উনার ময়দানের অবস্থা:
মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মুসলিম কাফিলাসহ “যাফিরান” উপত্যকা থেকে রওয়ানা করে যখন ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের নিকটবর্তী হন পবিত্র ১৬ই রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল খ¦মীছ (বৃহস্পতিবার) মাগরিবের আগে। তখন সেখানেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলাসহ অবস্থান মুবারক গ্রহণ করেন। এরপর নেমে আসলো পবিত্র ১৭ই রমাদ্বান শরীফ পবিত্র জুমুয়ার রাত।
সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা আল উদ্ওয়াতুদ্ দুন্ইয়া নামক স্থানে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করে ছিলেন। অর্থাৎ ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের নিকটবর্তী সীমানায়। যা ধু ধু বালুকারাশির বিরাট উন্মুক্ত ময়দান। বিচরণ ক্ষেত্র ছিল অসমতল। পদবিক্ষেপ ছিলো অস্বস্তিদায়ক। বালুর উপর পা স্থিরভাবে রাখা যাচ্ছিল না। পানির কোন ব্যবস্থা নেই। সম্মানিত মুসলিম কাফিলা পানির অভাবে পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। অযূ, গোসল সবই প্রকট আকার ধারণ করলো
অপর প্রান্তে কুরাইশরা আল উদ্ওয়াতুল কুছওয়া নামক যে স্থানে অবস্থান করে, তারপরে আকান্কাল নামক এক বিরাট টিলা। এর পরেই নিচে নরম ভূমি, সমতল জায়গা এবং মাটির সুন্দর ভূখ-। এরপরেই ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের ধু ধু বালুকারাশির বিরাট উন্মুক্ত ময়দান এবং ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের পানির কূপগুলো ছিল কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দখলে।
ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের পানির কূপগুলো কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দখলে থাকায় সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা পানির অভাবে পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। ফলে উনাদের পানাহার, অযূ, গোসল সব কিছু প্রকট আকার ধারণ করলো। সুযোগ বুঝে ইবলিস শয়তান, হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও মুসলমান হন নাই) উনার “ছূরত” আকৃতি ধারণ করে সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের সামনে গিয়ে বিভিন্ন কথা বলা শুরু করলো।
ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানে ইবলিসের ধোঁকা:
হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও মুসলমান হন নাই) উনার ছূরতে ইবলিস শয়তান, সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের সামনে গিয়ে বিভিন্ন কথা বলা শুরু করলো:
হে সম্মানিত মুসলমানগণ! আপনারা মনে করেন, আপনারা মু’মিন, মুসলমান। আপনারা সত্যের উপর আছেন। আপনাদের যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও আপনাদের সঙ্গেই আছেন। আপনারা খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়মাত্র মনে করেন অথচ আপনাদের করুন অবস্থা। পানির কোন ব্যবস্থা নেই। আপনাদের অনেকেই অযূ, গোসলবিহীন অথচ দেখুন! আপনারা যাদেরকে মন্দ বলেন, সেই কুরাইশ কাফির মুশরিকরাই পেয়েছে পানির কুপগুলোর অধিকার।
হে সম্মানিত মুসলমানগণ! আপনারা যদি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়পাত্র হয়ে থাকেন; তাহলে আপনাদের এ রকম দুরাবস্থা কেন? পানির অভাবে আপনারা অযূ, গোসল কিছুই করতে পারছেন না। পবিত্রতা অর্জন করা ব্যতীত কি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করা যায়। আর ইবাদত না করলে কি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। কাজেই আপনারা চিন্তা-ফিকির করে দেখুন, খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়পাত্র কারা? আপনারাই, না তারা?
তাছাড়া সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা একটানা সফর করে আসছেন। অনেকেই ক্লান্ত-শ্রান্ত ছিলেন। বিশ্রামেরও প্রয়োজন ছিলো উনাদের। তাই খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এ অবস্থায় ওই রাতেই মুষলধারে বৃষ্টি নাযিল করলেন। বৃষ্টি নাযিল হওয়ার ফলে সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের অবস্থান মুবারক হয়ে উঠলো অধিকতর স্বচ্ছন্দ। নিচুভূমিতে জমে থাকলো প্রচুর পানি। সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা সেই পানি দিয়ে নিজেদের এবং পশুপালের সকল প্রয়োজন পূর্ণ করলেন। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি নাযিল হওয়ার ফলে কুরাইশ কাফির মুশরিকদের অবস্থানকে করে তুললো বিপর্যস্ত। তাদের চারিপাশ হয়ে উঠলো কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল। ওই মুবারক রাতে ঘটলো আরেকটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের উপর নাযিল করেছিলেন এক অপার্থিব তন্দ্রা মুবারক। সুবহানাল্লাহ্! ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত সকল সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মুবারক রাতে বৃক্ষের নিচে স্থাপিত মুবারক তাঁবু উনার মধ্যে সারারাত ধরে সম্মানিত ছলাত মুবারক আদায় করেছিলেন। ওই তন্দ্রা মুবারক ছিলেন খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ রহমত মুবারক উনার অলৌকিক বর্ষণ। ওই মুবারক রাতে দীর্ঘ সময় ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতে ময়দানের পরিবেশ সিক্ত ও শীতল হয়ে উঠেছিল। আর সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের হৃদয় মুবারক ও চেতনা মুবারক পূর্ণরূপে সিক্ত ও প্রশান্ত হয়ে উঠেছিলো। খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার অপার রহমত মুবারক উনার অলৌকিক বর্ষণে। তন্দ্রা নামক সেই মুবারক রহমত উনার সমুদ্রে নিমগ্ন থাকলেন সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা। তখন সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের এবং কুরাইশ কাফির মুশরিক বাহিনীর মধ্যে মাত্র একটি ছোট্ট টিলার ব্যবধান ছিল।
বৃষ্টি থেমে গেল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শত্রুদলের যুদ্ধ প্রস্তুতি এবং অবস্থান সম্পর্কে সংবাদ সংগ্রহের জন্য হযরত আব্দুল্লাহ্্ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে পাঠালেন। উনারা শত্রুদের গতিবিধি লক্ষ্য করে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানালেন। প্রচ- বৃষ্টিপাতের ফলে শত্রুদের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। কুরাইশ কাফিরদের বিচরণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই তারা এখন অপ্রস্তুত। এখন আমরা অগ্রসর হলে সহজেই বদর ময়দানের পানির কূপগুলো অধিকার করতে পারবো।
ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের ওপারে টিলার পাশে কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দখলে ছিল পানির উৎস ছোট বড় সকল কূপগুলো। তাই পানির কূপগুলো সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের আয়ত্বে নিয়ে আসা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে হযরত হুবাব বিন মুনজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরজু মুবারক করলেন “ইয়া রসূলাল্লাহ্্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি অনুমতি মুবারক প্রদান করেন, তাহলে আমরা এখনই সামনে অগ্রসর হয়ে পানির অবস্থানগুলো আমাদের আয়ত্বে নিয়ে নিব এবং একটি বড় চৌবাচ্চা খনন করবো। অতঃপর নালা খনন করে পানির উৎসগুলো যুক্ত করে দিবো বড় চৌবাচ্চাটির সঙ্গে। এ রকম করতে পারলে আমরা আর পানির অসুবিধায় পড়বো না। তখন অসুবিধায় পড়বে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা।
ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তখন হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি নাযিল হয়ে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পানি পাওয়ার ব্যাপারে হযরত হুবাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরামর্শ খুবই সুন্দর।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখনই উনার সম্মানিত কাফিলাকে নিয়ে অগ্রসর হলেন। বিপর্যস্ত ও অপ্রস্তুত কুরাইশ কাফির মুশরিকরা কিছু বুঝে উঠার আগেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পানির কূপগুলো আয়ত্বে নিয়ে নিলেন এবং খনন করলেন একটি বড় চৌবাচ্চা। এরপর নালা খনন করে পানির উৎসগুলো যুক্ত করে দিলেন বড় চৌবাচ্চাটির সঙ্গে। এভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের পানির প্রয়োজন সুনিশ্চিত করলেন। সুবহানাল্লাহ্!
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)