উপকূলহীন দেশ চাদে ইসলাম ও মুসলমান
, ২৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ২০ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পাঁচ মিশালী
উত্তর-মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদে ইসলামের আগমন হয়েছিল হিজরী প্রথম শতকেই। সুদীর্ঘ সময়ে দেশটি বহু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেলেও কখনো ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহৎ লেক ‘চাদ’-এর নামানুসারে দেশটির নামকরণ হয়েছে। চাদ আফ্রিকা মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ।
যার চারদিকে রয়েছে লিবিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান ও সুদান। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। জাতিসংঘ, ওআইসি ও রাবেতা আলম আল ইসলামীসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য চাদ।
১৯৩৬ সালের সীমান্তরেখা অনুযায়ী দেশটির আয়তন ১২ লাখ ৮৪ হাজার বর্গকিলোমিটার।
সমতল মালভূমি, পাহাড়, মরুভূমি, নদী-নালা, হ্রদ ও বনভূমি নিয়ে গঠিত বৈচিত্র্যময় দেশ চাদ। ভূমির মতোই বিচিত্র জাতি, ধর্ম, ভাষা ও বর্ণের মানুষ বাস করে দেশটিতে। দেড় শতাধিক গোত্রের মানুষ বাস করে সেখানে। তাদের বেশির ভাগ গ্রামে বসবাস করে।
চাদে ভাষার সংখ্যাও শতাধিক। তবে সরকার স্বীকৃত ভাষা দুটি, আরবী ও ফ্রেঞ্চ। তবে দেশের বেশির ভাগ মানুষের ভাষা আরবী। সারা দেশে যোগাযোগের সাধারণ ভাষা হিসেবে আরবীই ব্যবহৃত হয়। দেশের সর্ববৃহৎ ও রাজধানী শহর অ্যানজামিনা।
চাদের উল্লেখযোগ্য শহরের মধ্যে রয়েছে সার, মুন্ডো ও আবসিয়া ইত্যাদি।
ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক অনুযায়ী চাদের জনসংখ্যা এক কোটি ৫৮ লাখ ৩৩ হাজার ১১৬ জন। যার মধ্যে মুসলিম ৫২.১ শতাংশ, প্রটেস্ট্যান্ট ২৩.৯ শতাংশ, ক্যাথলিক ২০ শতাংশ ও ধর্মহীন ২.৮ শতাংশ মানুষ। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম হিসেবে চাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে দ্বীন ইসলামের প্রভাব দৃশ্যমান। চাদের মুসলিমরা মালেকী মাযহাবের অনুসারী, এছাড়া আশয়ারি বিশ্বাস, তিজানিয়া সুফি মতবাদে বিশ্বাসী। ইসলামপূর্ব যুগে চাদে কোনো আসমানি ধর্মের প্রচার হয়েছিল বলে জানা যায় না। তারা ছিল প্রকৃতি পূজারি। প্রথম প্রহরেই ইসলামের আলো চাদে পৌঁছায়। ৬৬৬ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৪৬ হিজরীতে দেশটিতে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ঘটে। লিবিয়ার ফিজান জয় করার পর হযরত উকবা ইবনে নাফে’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অত্র অঞ্চলে তাশরীফ মুবারক রেখে সম্মানিত ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। বলা হয়, উনার মাধ্যমেই চাদে দ্বীন ইসলামের আগমন হয়। তবে চাদে ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার হয় সেই সময়ের আরো ৫০০ বছর পরে। ১১ শতক খ্রিস্টাব্দে। এই সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, ইসলাম প্রচারক, হিজরতকারী, ব্যবসায়ী, পর্যটক, আরবী ভাষায় রচিত ইসলামী সাহিত্য ও মুসলিম শাসকরা চাদে ইসলাম প্রচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশে ইসলামী শাসন ও জনসাধারণের দ্বীন ইসলামচর্চা চাদের মানুষকে দ্বীন ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করেছে।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, চাদে দিন দিন ধর্মহীনতা বাড়ছে। সংখ্যালঘু হলেও খ্রিস্টানরাই দেশটির প্রশাসন, গণমাধ্যম, রাজনীতি ও অর্থনীতির নিয়ন্তা। ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন এ জন্য দায়ী। ১৯০০ সালে ফ্রান্স যখন চাদ দখল করে, তখন সেখানে খ্রিস্টানের হার ছিল শূন্যের কোঠায়। ফ্রান্সের সহযোগিতায় ১৯২৩ সালে প্রটেস্ট্যান্ট এবং ১৯২৯ সালে ক্যাথলিক চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রান্স খ্রিস্টধর্মের প্রসার এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রশাসন ও রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে। ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষা বিলোপ করে পশ্চিমা শিক্ষার প্রবর্তন করে। পঞ্চাশের দশকে খ্রিস্টান মিশনারীদের কার্যক্রম চরম পর্যায়ে পৌঁছলে সেখানে স্থানীয় আলেম সমাজ ও একদল আরব মুসলিম স্কলার দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন। ষাটের দশকে সেখানে বেশ কিছু দ্বীনী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। যেমন- মাহাদুত তারবিয়্যাতিল ইসলামিয়া (১৯৫৪), আল মারকাজুল ইসলামী (১৯৫৫), মাহাদুস সাকাফাতিল ইসলামিয়া (১৯৫৬), মাহাদুন নাহদাতিল আরাবিয়া (১৯৫৮) ইত্যাদি।
তাদের প্রচেষ্টায় চাদের মুসলমানের ধর্মীয় অবস্থার উন্নতি হলেও এখনো বহুসংখ্যক মানুষ ইসলামী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তবে সম্প্রতি দেশটির মুসলিম যুবকরা উচ্চশিক্ষার জন্য মিশর, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। ইসলামী শিক্ষার বিস্তারে কাজ করছেন তারা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বদলে যাচ্ছে রসায়নের শত বছরের পুরনো সূত্র
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাতাস থেকে সরাসরি পুষ্টি পেতে পারে মানবদেহ : গবেষণা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উৎপাদন বাড়াতে ছাঁটাই করা হয় চা গাছ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সর্দি-কাশি দূর করতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মধুর গুণাগুণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের যে গ্রামের জনসংখ্যা চারজন!
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ডাবের পানি খেলে শরীরে কি হয়? ডাবের পানির উপকারিতা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ধানের গোলা এখন কেবলই স্মৃতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
১০ হাজার ফুট ওপর থেকেও যেভাবে শিকার দেখতে পায় ঈগল
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ওজন আর রক্তচাপ কমায় বিটের রস! বাড়ায় স্মৃতিশক্তি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবালের সন্ধান মিললো প্রশান্ত মহাসাগরে
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্ট্রবেরি খেলে শরীরে যা ঘটে
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)