ইতিহাস পুনঃপাঠ: দাঙ্গায় হিন্দু পুলিশের ভূমিকা
, ১৪ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস

ভারতে প্রায়শই নানা অজুহাতে উগ্রবাদী হিন্দুদের দ্বারা মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। এসব দাঙ্গায় হিন্দু পুলিশের বিরুদ্ধেই আসে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। তবে এটা নতুন নয়, পূর্ব থেকেই প্রশাসনে থাকা বিধর্মীরা যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তার নমুনা আমরা ইতিহাস ঘাটলেও দেখতে পাই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- ১৯৪৭-এ ভারত যখন স্বাধীন হয়েছিল, তখন ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণহারে মুসলিম নিধন শুরু হয়েছিল দেশটিকে মুসলিম মুক্ত করার উদ্দেশ্যে। বাংলা, পাঞ্জাব ও দিল্লিতে হিন্দু ও শিখরা ভয়াবহ মুসলিম নিধন শুরু করেছিলো, যার নজির ইতিহাসে বিরল। সেই দাঙ্গায় হিন্দু পুলিশ বাহিনী পালন করেছিলো মূল দাঙ্গাকারীর ভূমিকা।
এ প্রসঙ্গে শৈলেশ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘দাঙ্গার ইতিহাস’ গ্রন্থের ৭১-৭৩ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ করা হয়েছে- “দিল্লিতে যা ঘটে তার পিছনে শহরের তাবৎ হিন্দু ও শিখ জনসাধারণের নৈতিক সম্মতি ছিল আর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নৈতিক সম্মতিরও বেশি কিছু ছিল এসব ঘটনা ঘটার পেছনে। ...দাঙ্গার শেষ পরিণতি হলো-তিন চারদিন পর ঐ অঞ্চলে একজন মুসলমানের চিহ্ন রইলো না। ...শিখ, হিন্দু পুলিশ ও সেনাবাহিনীরা মিলিতভাবে মুসলমানদের দিল্লি থেকে উৎখাত করে। ”
‘দাঙ্গার ইতিহাস’ গ্রন্থের ১০০-১০২ পৃষ্ঠায় ভারতের জামশেদপুর দাঙ্গা প্রসঙ্গে উল্লেখ রয়েছে-
“জামশেদপুর ভারতের প্রখ্যাত শিল্পাঞ্চল। ১৯৭৯ সালে শুরু হয় দাঙ্গা-হাঙ্গামা। ...পুলিশ দাঙ্গা থামাবে কী, উল্টো তাদের একটি বড় অংশ দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে মুসলিম নিধন, পীড়ন ও তাদের ধনসম্পত্তি বরবাদের কাজে মত্ত হয়ে উঠলো। ”
১৯৮০ সালে ১৩ই আগস্ট ঈদুল ফিতরের দিন। ভারতের উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ ঈদগাহ ময়দানে পুলিশ নিরাপত্তা দেয়ার নামে অবস্থান করে ঈদগাহর প্রবেশদ্বারে। পুলিশের যোগসাজশে ঈদগাহে নামায চলাকালীন সময়ে দলিত হিন্দুরা তাদের বস্তি থেকে একটি শূকর এনে ছেড়ে দেয় নামাযরত মুছল্লিদের মাঝে। পুলিশি পাহারা সত্ত্বেও নামাযের মধ্যে শূকরের মতো নাপাক পশু ঢুকে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মুসলমানগণ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এই সুযোগে পঞ্চাশ হাজার মুসল্লির উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে হিন্দু পুলিশবাহিনী। অনেকের সাথে ছিল তাদের শিশুসন্তান। বোঝা’ই যাচ্ছে কি পরিমাণ রক্ত ঝরেছিল সেদিন মোরাদাবাদে।
১৯৯০’র হাসিমপুরা গণহত্যার ইতিহাসও উল্লেখযোগ্য। উত্তরপ্রদেশের সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর হিন্দু সদস্যরা পঞ্চাশজন মুসলিম যুবককে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলিবর্ষণ করে। খালের পানিতে ফেলে দেয়া সেসব লাশগুলো পরবর্তীতে ভেসে উঠে।
১৯৮৯ সালে ভাগলপুরের দাঙ্গায় পুলিশের এক এ.এস.আই.-এর নেতৃত্বে লোগিয়ান গ্রামে ১০৮ জন মুসলমান শহীদ করা হয়, যাদের মৃতদেহ গুম করতে সেগুলো মাটিতে পুঁতে তার উপর রাতারাতি ফুলকপি ক্ষেত তৈরি করা হয়। (তথ্যসূত্র: গোলাম আহমাদ মোর্তজা রচিত ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়, বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন, কলকাতা, পৃষ্ঠা ২৬-২৮)
এদিকে ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি হিন্দুদের পরিকল্পিত গোধরা কা-ের পর সংঘটিত গুজরাট দাঙ্গায় পুলিশের সাম্প্রদায়িক ভূমিকা পুলিশই স্বীকার করতে বাধ্য হয়। গুজরাটের সেই মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় হাজার হাজার মুসলমান শহীদ হয়েছিলো। তৎকালীন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সঞ্জীব ভাট সুপ্রিম কোর্টে দেয়া হলফনামায় বলেছিলো, “দাঙ্গার সময় দাঙ্গাবাজ হিন্দুদের না ঠেকাতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলো মুখ্যমন্ত্রী মোদি। মোদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়, হিন্দুরা মুসলমানদের প্রতি যেন তাদের ক্ষোভ মেটাতে পারে, পুলিশকে সে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ” এমন স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য সঞ্জীব ভাটকে পরবর্তীতে পুলিশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। (সূত্র: দ্যা টাইমস অব ইন্ডিয়া, ১৯/৮/২০১৫; দ্যা হিন্দু ১৯/৮/২০১৫)
ভারতীয় হিন্দু পুলিশদের মুসলিমবিরোধী ভূমিকার উদাহরণ দিয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করা যাবে।
-মুহম্মদ আনু মিয়া।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মোগল সেনাপতির ডায়েরী প্রকাশ ও বিধর্মীদের প্রচারিত মিথ্যা ইতিহাস ফাঁস
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলিম কর্তৃক অমুসলিম-বিধর্মীদের ক্ষমতায়িত করার করুণ পরিণতি
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস পাঠ: পবিত্র মসজিদের উপর উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের ধারাবাহিকতা
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শুধু স্পেন কিংবা বাগদাদ থেকে নয়, ভারতবর্ষ থেকেও মুসলমানদের লাইব্রেরীর কিতাবাদি লুট করেছিল ব্রিটিশরা
১৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৩)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শের আলী খান আফ্রিদী: ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া একজন মুসলিম বীর
০৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১২)
০১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক হিসেবে ‘কুস্তি’ লড়াইকে যেভাবে ধরে রেখেছিলো উসমানীয়রা
২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফতকালের একটি ঘটনা
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইংল্যান্ড কত সম্পদ এ অঞ্চল থেকে লুট করেছিলো?
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফির-মুশরিকদের আসল চরিত্র
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
শাসক আকবরের যে আমল কখনো কোনভাবেই নষ্ট হয়নি এবং হয় না
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)