আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৪)
, ২৫ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
উল্লেখ্য যে, কোন রাবীকে প্রত্যাখ্যাত করতে হলে তার কারনও স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। রাবী নির্ভরযোগ্য নয় এটুকু বললেই হবে না। কেন গ্রহনযোগ্য নয় তার উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য কারন বলতে হবে। হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উছূল বর্ণনা করেছেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহনযোগ্য নয়। মতভেদ, ভুলবশত মতপার্থক্য হতে পারে। কারো কারো কাছে একজন রাবী ছিক্বাহ অপর জনের কাছে ছিক্বাহ নয়। এ কারনে জারাহ করা হলে তার কারন উল্লেখ করা আবশ্যক।
হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারকে একটা ঘটনা আছে যেটা উল্লেখ করলে বুঝতে সহজ হবে। উল্লেখ্য, একবার কোনো এক ব্যক্তি এক রাবীর ব্যাপারে জারাহ বা অভিযোগ করলো। তখন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, জারাহ করার কারন কি? সে ব্যক্তি বললেন, আমি তাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখেছি। এতে তার কাপড়ে নাপাক লেগে যাওয়া স্বাভাবিক। আর সে নাপাক কাপড়ে নামায পড়ে থাকে, এ অবস্থায় তার আদালত বা দ্বীনদারী রইলো কিভাবে? হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তুমি কি তাকে সেই কাপড়ে নামায পড়তে দেখেছো? সে বললো, না। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এধরনের জারাহ সম্পূর্ণ বাতিল। আর ঐ ব্যক্তিতো কোন ওজরের জন্যও দাঁড়িয়ে পেশাব করতে পারে। (আল কিফায়া ১০৮ পৃষ্ঠা)
আর এ কারনে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قال الحافظ ابن كثير:" بخلاف الجرح فإنه لا يقبل إلا مفسراً لاختلاف الناس فى الأسباب الـمفسقة فقد يعتمد الجارح شيئاً مفسقاً فيضعفه، ولا يكون كذلك فى نفس الأمر أو عند غيره، فلهذا اشترط بيان السبب فى الجرح
অর্থ: হাফিয ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ফাসিক সাব্যস্তকারী কারন সমূহের ক্ষেত্রে বহুজনের বহুমত রয়েছে। অনেক সময় একজন জারাহকারী একটা বিষয়কে ফাসিক সাব্যস্তকারী কারন মনে করে। অথচ বাস্তবে তা সেরকম নয়। এ কারনে জারাহ-এর বেলায় সকলের ঐক্যমতে কারন দর্শানো আবশ্যক। (শরহে ইখতিছারু উলুমিল হাদীছ ১ খন্ড ২৪৭ পৃষ্ঠা)
কোনো জারাহই গ্রহন করা হবে না যতক্ষন না তার কারন বর্ণনা করা হবে। কেননা অনেক সময় জারাহকারী এমন বিষয়কেও জারাহর কারন মনে করেন যা মূলত জারাহ করার মত দোষ নয়। (শরহে মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ ১ খন্ড ১৪০ পৃষ্ঠা)
কোনো একজন রাবীর ব্যাপারে কোন ইমাম প্রশংসা করেছে, তখন সে রাবীর ব্যাপারে ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহনযোগ্য নয়। হাফিযে হাদীছ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে রাবীকে কোন একজন ইমামও ছিক্বাহ বলেছেন সে রাবীর ব্যাপারে কেউ জারাহ করলে তা গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষন না সে তার কারণ ব্যাখ্যা করে। (তাদরীবুর রাবী)
কোন রাবীর আদালত ও নির্ভরযোগ্যতা সাবস্ত্য হওয়ার পর তার ব্যাপারে কোন জারাহ ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হবে না যতক্ষণ না এর সুস্পষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করা হবে। (ফতহুল মুগীছ ১৩০ পৃষ্ঠা)
বিভিন্ন জন বিভিন্ন অবস্থান থেকে জারাহ করেছেন, যেমন এ বিষয়ে হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেউ কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে জারাহ করেছেন, আবার কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দিতামূলক মনোভাব থেকে জারাহ করেছেন, কেউ কেউ নিজের চাইতে বড় ব্যক্তিকে জারাহ করেছেন। এর সবই অগ্রহণযোগ্য। (মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ৪৪৬ পৃষ্ঠা)
আরো বর্ণিত আছে, দুইজন সমকালীন আলিম উনাদের পারস্পারিক জারাহ বা দোষারোপ গ্রহণযোগ্য হবে না, যতক্ষন না তার দলীল পেশ করা হবে। (ফতহুল মুগীছ ৪৮৪ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শেষে বা কোন রাবী উনার নামের পাশে শুধুমাত্র
هذا حديث ضعيف فلان ضيعف فلان ليس بشى
(অমুক হাদীছ শরীফ দ্বয়ীফ, অমুক রাবী দ্বয়ীফ, অমুক অপরিচিত) লিখে দিলেই হবে না, বরং ব্যাখ্যা থাকতে হবে কোন কারনে জারাহ করা হলো।
হযরত আব্দুল হাই লাখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিষয়ে বলেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ-এর চাইতে তা’দীলই অগ্রগণ্য। (যফারুল আমানী ২৮১ পৃষ্ঠা)
যেমন, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো কোনো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে হযরত আবু রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্জন করেছেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উস্তাদ ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শুধু মু’তাজিলা বলেই ক্ষান্ত হননি বরং মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করতেও নিষেধ করেছেন। (সিয়ারু আলামীন নুবালা ২২/৪৫৬, তারীখে বাগদাদ ২/১৩)
ইমাম হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম খলিক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জহমিয়া বলেছেন। (ওয়াফাতুল আইয়ান ২/৯১)
ইমামে আযম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা জারাহ করেছেন, ইমাম হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইবনে হাজম রহমতুল্লাহি আলাইহি মাজহুল বলেছেন। এমনিভাবে ইমাম হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইবনে যী’ব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম হযরত শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইবনে মঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্বয়ং তার ছাত্র জারাহ করেছেন। কিতাব খুলে এসব জারাহ দেখে কি ঐ সমস্ত পৃথিবী বিখ্যাত ইমাম ও মুহাদ্দিছ উনাদের বাদ দিয়ে দিতে হবে? তাহলে কি পৃথিবীতে ফিৎনা সৃষ্টি হবে না? কাফিররা এটাই চায় । তারা মুসলামান উনাদের মাঝে ইখতিলাফ সৃষ্টি করে উরারফব ধহফ ৎঁষব কায়িম করতে চায়। আর একারনে তারা ওহাবী সালাফীদেরকে এই কাজের জন্য নিয়োজিত করেছে।
মূলকথা হলো, জারাহ দেখেই কাউকে পরিত্যাগ করা যাবে না। এ বিষয়ে হযরত ইবনে জরীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন-
ومن ثبتت عدالته لم يقبل فيه الجرح وما تسقط العدالة بالظن
অর্থ: সূতরাং যার আদালত ন্যায়পরায়নতা প্রমাণিত হয়েছে, তার বিষয়ে কারো জারাহ বা সমালোচনা গ্রহণনযোগ্য হবে না। শুধুমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে তার আদালত বা ন্যায়পরায়নতা বিলুপ্ত হবে না। (মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ১/৪২৯) (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)