ইতিহাস
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
, ২ রা জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
আজকে বিশ্বের যে আধুনিক নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার পেছনে মূলত মুসলমানদেরই শতভাগ অবদান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সারা পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত করে দিয়ে সারা বিশ্ববাসীকে প্রকৃত সভ্যতার উপলব্ধি করিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দয়া, দান, ইহসান মুবারকে মুসলমানগণ সভ্যতার চরম শিখরে আরোহন করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো নগর সভ্যতা। পৃথিবীজুড়ে মুসলমান শাসনের পরিধি যতই বাড়ছিলো নগর সভ্যতার ব্যাপ্তি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।
উমাইয়া শাসনামলে স্থাপত্যশিল্পে উন্নতি হয়। আব্বাসীয় যুগ ছিল শিল্পে সমৃদ্ধির যুগ। আব্বাসীয় শাসক আল-মনসুর ঈসায়ী ৭৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করে ঐতিহাসিক বাগদাদ নগর। আবহাওয়া, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এবং সামরিক দিক দিয়ে অনুকূল পরিবেশের চিন্তা করে এ নগর নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদ, আবাসিক এলাকা, বিদ্যালয়, হাট-বাজার, পর্যাপ্ত রাস্তাঘাটের সমন্বয়ে গঠিত এ নগর। নগরের স্থাপত্য নিদর্শন ব্যতিক্রমধর্মী ও অনন্য ছিলো সে সময়।
স্পেনের মুসলিম সালতানাতের শাসক তৃতীয় আব্দুর রহমানের হাত দিয়ে কর্ডোবা শহরের নির্মাণ পূর্ণতা লাভ করে। তার সময়কার কর্ডোবা শহরের পরিধি ছিল সাড়ে সাত মাইল এবং প্রশস্ত দুই মাইল। মোট পাঁচ অংশে বিভক্ত, মধ্যস্থলে ছিল প্রাচীর বেষ্টিত দুটি প্রাসাদ, ২১টি শহরতলি। তথ্য মতে, কর্ডোবা শহর, শহরতলি এবং মদিনাতুল জাহারার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ছিল ১০ মাইল। গৌরবোজ্জ্বল দিনে এখানে পাঁচ লাখ লোকের বসবাস ছিল এবং বিভিন্ন ধরনের গৃহের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৩ হাজার। এ ছাড়া তিন হাজার মসজিদ, ৩০০ সাধারণ হাম্মামখানা, হাসপাতাল, বিদ্যালয় ও অন্যান্য ইমারতসহ প্রায় ৬০ হাজার ইমারত ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। রাতে রাস্তার পাশের আলোকবাতিতে অধিবাসীরা ১০ মাইল পথ অতিক্রম করতে পারত।
গ্রানাডা বিজযের পর মুহাম্মদ ইবনে নাসর তার আবাসন ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে ঐতিহাসিক আল-হামরা প্রাসাদ নির্মাণ করেন। যা গ্রানাডা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের আস-সাবিকা পাহাড়ের ওপর অবস্থিত।
আজকের বিশ্ব উন্নত হাম্মামখানা সমৃদ্ধ। যা অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি। তবে আগে এমন ছিল না। ইউরোপের অন্ধকার যুগে এসবের ব্যবস্থাই ছিলো না। দ্বীন ইসলামপূর্ব সভ্যতার মানুষ ঠিকমতো গোসল পর্যন্ত করত না। পানি ব্যবহার জানত না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা তাদের কানে তেমন পৌঁছেনি। বিপরীতে মুসলমানগণ ছিলেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা তথা পবিত্রতার ধারক বাহক।
যুগে যুগে মুসলমানরা হাম্মানখানার আধুনিকায়ন করেছে। কর্ডোবায় মুসলমানরা ৯০০ গণগোসলখানা তৈরি করেন। ইবনে বতুতা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বাগদাদ শরীফের হাম্মামখানাগুলো ছিল অত্যধিক ঐশ্বর্যম-িত। দর্শকদের কাছে প্রতীয়মান হয়, এটি কালো মার্বেল পাথরে তৈরি। প্রতিটি শোবার ঘরে একটি মার্বেলের বেসিন ছিল। যার সঙ্গে দুটি পাইপ সংযুক্ত ছিল। একটি দিয়ে গরম পানি, অন্যটি দিয়ে ঠা-া পানি প্রবাহিত হতো। তিনি আরো বলেন, ‘বাগদাদের মতো এত ভালো হাম্মামখানা আমি কখনো দেখিনি।
সম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুসরণের মাধ্যমে মুসলমানগণ সবসময়ই মেহমানদারী অত্যন্ত পছন্দ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনামলে তাঁবু স্থাপনা ও সরাইখানা অধিক পরিমাণে নির্মাণ হয়েছিল। বাগদাদের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছিল মুসাফিরখানা। সেখানে শৌচাগার, হাম্মামখানা, খাবারের যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল। মুসাফিরখানাগুলো সালতানাতের অধীনে পরিচালিত হতো। তখনকার সময়ের ভ্রমণকারীদের বর্ণনায় এগুলোর কথা পাওয়া যায়।
-মুহম্মদ শাহ জালাল
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)