অপ্রচলিত কৃষি উৎপাদনে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। দূর হতে পারে আমদানিনির্ভরতা। পাম চাষের মাধ্যমে সম্ভব সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার তেল রফতানি। এক পার্বত্য চট্টগ্রামই হতে পারে ২য় মালয়েশিয়া কিংবা দ্বিতীয় ইন্দোনেশিয়া।
, ২৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৭ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০১ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মন্তব্য কলাম
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলক পাম চাষে সফলতার দেখা পাওয়া গেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছে, বাংলাদেশে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে বাণিজ্যিক পাম চাষ। তাই রাস্তা কিংবা রেললাইনের কাছে, পতিত ও অনাবাদি জমি পাম চাষের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছে, এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বড় প্রকল্প নেয়া জরুরি। যাতে যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ল্যাব স্থাপন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাম চাষ, তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করা যায়। এতে ভোজ্য তেলের আমদানিনির্ভরতা কমবে। রফতানি করেও আয় করা সম্ভব বৈদেশিক মুদ্রা।
প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, আমাদের দেশে দৈনিক গড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন এবং বছরে ২১ লক্ষ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। যার সিংহভাগই আমাদের আমদানী করতে হয়। এর আনুমানিক মূল্য হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে পামগাছ চাষে সার্বিকভাবে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র।
দেশের ২২ লাখ টন ভোজ্যতেলের বর্তমান চাহিদা মেটাতে মাত্র তিন কোটি পাম গাছের উৎপাদন প্রয়োজন। কিন্তু যদি পরিবার প্রতি ৫টি করে পাম গাছ রোপণ করে তাহলে প্রতি বছর আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাম তেল রপ্তানী করা সম্ভব। আর তা যদি নাও হয় তাহলে এক পার্বত্য চট্টগ্রামই দেশের তেলের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবে। বরং কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে পারে দ্বিতীয় মালয়েশিয়া কিংবা দ্বিতীয় ইন্দোনেশিয়া।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অনাবাদি পাহাড়-টিলায় পাম গাছ চাষের মাধ্যমে তরল সোনা উৎপাদনের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে অদূর ভবিষ্যতে ভোজ্য তেল বা পাম অয়েল উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রাম হবে ‘দ্বিতীয় মালয়েশিয়া’। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক পাম বাগান গড়ে উঠেছে।
পার্বত্যাঞ্চলের মাটি এবং আবহাওয়া পামচাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে অভিমত দিয়েছে কৃষি বিজ্ঞানীরা। তারা জানিয়েছে, পাহাড়ের মাটিতে পামচাষের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উপাদান রয়েছে। এখানকার আবহাওয়া, তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সব কিছু পামচাষের জন্য খুবই উপযোগী। পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার একর জায়গা অনাবাদি পড়ে থাকা টিলায় পরিকল্পিতভাবে ব্যাপকহারে পামচাষ করে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার পূরণ করা সম্ভব। এতে ভোজ্য তেল আমদানির বিদেশী নির্ভরতা থাকবে না। পামচাষের মাধ্যমে ভোজ্য তেল উৎপাদন করে পশ্চাৎপদ পার্বত্যাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নতি শুধু নয়, গোটা দেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যেতে পারে।
তথ্যাবিজ্ঞ মহলের অভিমত, ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি বন বিভাগের মাধ্যমেও পার্বত্য এলাকায় পরিবেশবান্ধব পামচাষ সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। মালয়েশিয়ার ফেল্ডা প্লান্টেশনের পাম সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত গবেষক জানিয়েছে, পামচাষের জন্য বাংলাদেশের তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও আবহাওয়া মালয়েশিয়ার চেয়েও উন্নত। এ সুযোগ কাজে লাগানো গেলে পাম অয়েল উৎপাদনে মালয়েশিয়াকেও পেছনে ফেলে দিতে পারে বাংলাদেশ। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানায়, পাম গাছ রোপণের তিন-চার বছরের মধ্যে ফল দেয়া শুরু করে। একটি গাছ টানা ৬০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এক কাঁদিতে ফল হয় ৪০ থেকে ৮০ কেজি। আর বছরে আট থেকে ১০ কাঁদি ফল ধরে। চার-পাঁচ বছর বয়সী একটি গাছের ফল থেকে বছরে ৪০ কেজি পাম তেল পাওয়া যায়। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২০-১৫০ চারা রোপণ করা যায়।
এদিকে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামই নয় ঠাকুরগাঁও, নওগাঁসহ গোটা বাংলাদেশই পাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ইতোমধ্যে জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক পাম বাগান। নওগাঁ জেলায়ও পাম চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নওগাঁ সদরসহ মান্দা, ধামইরহাট এবং রানীনগর উপজেলায় ইতোমধ্যে কমপক্ষে ২০-২৫টি পাম বাগান গড়ে উঠেছে।
এছাড়াও বাংলাদেশের অনাবাদি জমি এবং সড়কপথ, রেলপথ ও গ্রামীণ জনপথগুলোকে পাম চাষের আওতায় আনা যায়। এক্ষেত্রে একটি বেসরকারি সংস্থা ইতিমধ্যেই দেশের ৪০টি জেলার ২১৩টি থানায় বিভিন্ন উদ্যোক্তার মাঝে নগদে ও কিস্তিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ পাম অয়েল চারা গাছ রোপন করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে আরো ১ লক্ষ ২০ হাজার চারা রোপন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এত বড় একটি সম্ভাবনাময় খাতকে শুধু কিছু এনজিও’র উপর ছেড়ে দিলেই হবে না। মূলতঃ সরকারকেই সার্বিক দায়িত্ব নিতে হবে।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌর ভবন চত্তর, মসজিদ মাদরাসা ও এতিমখানায় এবং সব সম্ভাব্য স্থানেই পাম চাষের বিপ্লব ঘটাতে হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে যে অবস্থা চলছে, তার মূল সমাধান হলো, দ্রব্যমূল্য কমাতে হলে কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে এই খাতের। কৃষকদের বিনা সুদে ঋণের সুবিধা দিতে হবে এবং এটা হওয়া উচিত সরাসরি কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে। কোনো এনজিও’র মাধ্যমে নয়।
স্বল্প খরচে শুধুমাত্র সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পাম গাছ চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল আমদানী নির্ভরতার বিপরীতে পাম তেল রপ্তানীকারক দেশ হিসাবে বিশ্ব বাজারে স্থান করে নিতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ঘটিয়ে দারিদ্রতা মুক্ত হয়ে খোদ বাংলাদেশই রফতানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে। ইনশাআল্লাহ!
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)