সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
, ৩০ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ৩১ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত মেয়ে। পিতার বংশ: কুরাইশ বংশের বনু ‘আদী বিন কা‘ব শাখা। তিনি ও উনার সহোদর ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সম্মানিতা মাতা হযরত যয়নব বিনতে মাজ‘উন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন একজন সুপ্রসিদ্ধ সম্মানিতা ছাহাবিয়া। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছয় বছর পূর্বে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠাানিকভাবে সম্মানিত নবুয়ত মুবারক প্রকাশের ৫ বছর পূর্বে, হিজরতের ১৮ বছর পূর্বে, পবিত্র মাহে রজবুল হারাম শরীফ উনার ১৪ তারিখ, ইয়াওমুল আহাদ শরীফ (রোববার) তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সে সময় কুরাইশগণ পবিত্র কা’বা ঘর পূণঃর্নির্মানে ব্যস্ত ছিলো। (তাবাক্বাত, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
প্রাথমিক জীবন:
প্রথমে হযরত খুনায়স বিন হোজাফা আস-সাহমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। হযরত খুনায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফে “আছ-ছাবিকুনাল আউলানুন” অর্থাৎ প্রথম দিকের দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দারুল আরকামে যাওয়ার পূর্বেই তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হাবশায় দ্বিতীয় দলটির সাথে হাবশায় হিজরত করেন (তাবাকাত)।
এক সময় হাবশায় একটি খবর প্রচারিত হয় যে, পবিত্র মক্কা শরীফে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ সবাই দ্বীন ইসলাম কবুল করছে। এ খবর শুনে অনেকেই পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসেন। ফিরে এসে দেখেন খবরটি সঠিক নয়। তখন অনেকে পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করতে থাকেন। আর অনেকে পুনরায় হাবশায় ফিরে যান। হযরত খুনায়স বিন হোজাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ সময় পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসেন এবং এখানেই অবস্থান করতে থাকেন।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস উনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে বলা যায় যে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার পরিবার যখন দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন, তিনিও তখন দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরতের নির্দেশ মুবারক হলে তিনি ও উনার আহাল হযরত খুনায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা উভয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত মুবারক করেন। পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে উনারা কুবার বনু আমর ইবনে আওফ গোত্রের হযরত রিফা’য়া ইবনে আবদুল মুনজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে অবস্থান গ্রহণ করেন। (ইবনে হিশাম)।
হযরত খুনায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বদর জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন জিহাদে তিনি দেহের একাধিক স্থানে জখম প্রাপ্ত হন এবং পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে এসে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। হযরত উছমান ইবনে মাজউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাশে জান্নাতুল বাকীতে উনাকে দাফন মুবারক করা হয় (সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ:
হযরত খুনায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বদরের জিহাদ হতে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে এসে শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস উনার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট গেলেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম কোন উত্তর দিলেন না। অতঃপর তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করেন। এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আহলিয়া, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছালি শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। উনার বিছালী শান মুবারকে তিনি ছিলেন শোকাভিভূত। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন: এখন আমার বিবাহের কোন ইচ্ছা নেই।
এতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খেদমত মুবারকে হাজির হয়ে নিজের মনের বেদনা প্রকাশ করেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম উনার সাথে নিসবতু আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হবে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার অপেক্ষা উত্তম এক ব্যক্তির সঙ্গে, আর হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হবে হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম উনার অপেক্ষা উত্তম এক মহিলার সাথে। (উসুদুল গাবা)।
এখানে বিনতু রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বিনতু ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে, যেহেতু তিনি তখনও উম্মুল মু’মিনীন হননি।
অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নিজের জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব পাঠান। সেই অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় এবং অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে বিনতু রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, হযরত আন নুরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় (ইছাবা, উসুদুল গাবা)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় ৩য় হিজরী পবিত্র মাহে শা’বান শরীফ উনার ৪ তারিখ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার)। সেই সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’হ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ২১ বছর ২ মাস ২০ দিন (দৈনিক আল ইহসান শরীফ)।
এই নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাত হলে তিনি বলেন যে, আপনার মেয়ে সম্পর্কে আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আলোচনা মুবারক করতে শুনেছি। তখন আমার ধারণা হয়েছিল, হয়তো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সাথে নিসবাতুল আযীম হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন। সেজন্য আপনি যখন আপনার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তখন আমি চুপ ছিলাম। আমি কিছু বলিনি (বুখারী শরীফ)।
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম তিনি হিজরী ৪৫ সনে পবিত্র শাবান শরীফ মাস উনার ১৩ তারিখ, ইয়াওমুল খামীস শরীফ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র মদীনা শরীফে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তখন ছিল হযরত মু‘য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনার খিলাফত কাল। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গভর্ণর ছিলেন তখন মারওয়ান, তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বহনকারী মুবারক খাটিয়া নিজ কাঁধে নিয়ে রওযা শরীফ পর্যন্ত পৌঁছে দেন। জান্নাতুল বাক্বীতে উনার পবিত্র রওজা শরীফ অবস্থিত। এখানে অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথেই উনার পবিত্র রওযা শরীফ। এ সময় উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৬৩ বছর ২৯ দিন।
(সূত্র: ইছাবা, আল-আ’লাম, সিয়ারু আলামিন নুবালা, দৈনিক আল ইহসান শরীফ)
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
সামগ্রিকভাবে সমস্ত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগনই অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার অধিকারী। পবিত্র সুরা আহযাবের ৬ নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে উম্মাহাতুল মু’মিনীন বলে উল্লেখ করেছেন, যেমন-
ألنَّبِيُّ أوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট নিজেদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। (পবিত্র সূরা আহযাব: আয়াত শরীফ ৬)
খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক এই পবিত্র আয়াত শরীফে উনাদেরকে أمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) এই সম্মানিত লক্বব মুবারকে উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মর্ম থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকল মু’মিন অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন উনাদের সকলেরই মহা সম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পুতঃপবিত্রা ও সুমহান চরিত্র মুবারকের অধিকারিণী করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব-উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন সেজন্য উনাদের আরেকটি লক্বব মুবারক হচ্ছেন أزواج مطهرات (আযওয়াজে মুত্বাহহারাত অর্থাৎ পুতঃপবিত্রা আহলিয়াগণ) অর্থাৎ উনাদের চরিত্র মুবারক সকল প্রকার কলুষ-মুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একদিক দিক দিয়ে সম্মানিত মহিলা ছাহাবী, অন্যদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বহহারাত, পবিত্র আহলু বায়ত শরীফ উনাদের সম্মানিত সদস্য। পবিত্র আহলু বায়ত শরীফ উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
إنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا -
অর্থ: হে আহলু বাইত শরীফগণ! খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে।
অর্থাৎ আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করেই তিনি সৃষ্টি করেছেন। উনারা নিজেরা শুধু পবিত্রই নন, বরং উনারা পবিত্রতা দানকারী, যা উনাদের সাওয়ানিহে উমরী মুবারক আলোচনা করলে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
সম্মানিত ও পবিত্র আহলু বায়ত শরীফ উনাদের মর্যাদা মর্তবার দিক থেকে কয়েকটি স্তর রয়েছেন। সর্ব-প্রথম এবং সর্বাধিক মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মহা সম্মানিত ও মহা পবিত্র হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম এবং মহা সম্মানিতা ও মহা পবিত্রা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম, কারণ উনারা হচ্ছেন সম্মানিত আহলু বায়ত শরীফ উনাদের মূল। এর পরেই হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম। অতঃপর হযরত আবনাউ রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এবং বানাতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং অতঃপর অন্যান্য আওলাদে রসুলগণ আলাইহিমুস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ! উনারা সকলই উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক ”মুতাহহার” ও ”মুতাহহির” অর্থাৎ সৃষ্টিগতভাবেই পবিত্র এবং সাথে সাথে পবিত্রতাদানকারীও বটে। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।
সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে জান্নাতে একসাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সেজন্য উনারা সকলই সর্বো”” মর্যাদা-মর্তবার অধিকারিনী। সেজন্যই খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক সুরা আহযাব শরীফ উনার ৫৩ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا أنْ تَنْكِحُوْا أزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أبَدًا
অর্থ: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তোমাদের কেউ বিবাহ করতে পারবে না।
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সুউচ্চ মর্যাদা, মর্তবা সম্পর্কে এই একই পবিত্র সুরা শরীফ উনার ৩২ নং আয়াত শরীফে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ
অর্থ: হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ হযরত উ¤মুল মুমিনীনগণ! আপনারা অন্যান্য নারীদের মত নন।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন অন্য কোন পুরুষ মানুষের মত নন, উনার সম্মানিতা আহলিয়াগণও অন্য কোন নারীর মত নন।
বর্তমানে কোন কোন নামধারী মুসলমান যেমন কোন কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করে থাকে, তেমন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরও শান মান নিয়েও ক্বীল ও ক্বাল করে থাকে। উনাদের জীবনের সংঘঠিত বিভিন্ন ঘটনাবলীকে সাধারণ মানুষের মানদন্ডে পরিমাপ করে থাকে। তাদের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ, যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عويـمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه و سلم قال ان الله اختارنى واختار لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة والناس اجـمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا
অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আমাকে এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খেদমতকারী এবং বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়বর্গ নিযুক্ত করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং সমস্ত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত। আর মহান আল্লাহ পাক তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না (তাবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)। নাউযুবিল্লাহ!
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবাকে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল স্ত্রী জাতীর উপরে স্থান দিয়ে উনাদেরকে পৃথকভাবে সম্মান দান করেছেন। উনাদের ব্যাপারে কোনরূপ চু-চেরা করার সুযোগ নেই।
সামগ্রিকভাবে সকল উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সুমহান মর্যাদা এবং অনুপম বৈশিষ্ট্যের অধিকারিনী এবং সম্মানিতা। তবে উনাদের প্রত্যেকেরই পৃথকভাবে কিছু কিছু খাছ খাছ বৈশিষ্ট্য রয়েছেন। বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। তিনি বলতেন,
إنها إبنة أبيها
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম তিনি সত্যিই উনার পিতা উনার মেয়ে অর্থাৎ উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় তিনি ছিলেন দৃঢ়মনা এবং সংকল্পে অটল। সুবহানাল্লাহ!
একদিন হযরত ফারুকে আযম আলম আলাইহিস সালাম রাতের বেলায় রাতের বেলায় নগর পরিভ্রমণে বের হয়ে এক মহিলাকে করুন ভাবে কছীদা আবৃত্তি করতে শুনেন। হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উক্ত মহিলাকে জিজ্ঞেস করেন: তোমার কি হয়েছে? মহিলা বললেন: কয়েক মাস থেকে আমার আহাল আমার থেকে দূরে রয়েছেন। উনাকে কাছে পাওয়ার অনুভূতি আমার মধ্যে তীব্র হয়ে উঠেছে। অতঃপর হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার নিকট গিয়ে বলেন: আমি আপনার নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চাই। এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন। মেয়েরা তাদের আহাল থেকে কতদিন দূরে থাকলে আহালকে কাছে পাওয়ার অনুভূতি তীব্র হয়ে উঠে। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম তিনি লজ্জায় মাথা নত করে ফেলেন। হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম বলেন: মহান আল্লাহ পাক সত্য প্রকাশের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম হাতের ইশারায় ৪ মাস বুঝিয়ে দেন। অতঃপর হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম ফরমান জারী করেন: কোন সৈনিককে যেন চার মাসের অধিক আটকে রাখা না হয়। (কানযুল উম্মাল, হায়াতুছ ছাহাবা)।
দ্বীনী বিষয় সমূহে যে উনার গভীর জ্ঞান ছিল, বিভিন্ন ঘটনা থেকে তা জানা যায়। একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন: আমি আশা করি, বদর ও হুদায়বিয়ার অংশগ্রহণকারীগণ জাহান্নামে যাবে না। তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম বললেন, মহান আল্লাহ পাক তো ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَ إنَّ مِنكم إلا واردها –
অর্থ: তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে সেখানে (জাহান্নামে) পৌঁছবে না। (পবিত্র সুরা মরিয়ম শরীফ, আয়াত শরীফ ৭১)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন ইরশাদ মুবারক করেন: হাঁ, তা ঠিক। তবে এ কথাও মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেছেন-
ثم ننجى الذين انقوا و نذر الظالمنين فيها جثيا
অর্থ: অতঃপর আমি পরহেজগার লোকদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিব। (সুরা মরিয়ম শরীফ, আয়াত শরীফ: ৭১-৭২)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার মধ্যে ইলম সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ দেখে তিনি উনাকে বিভিন্ন বিষয়ে ইরশাদ মুবারক করতেন।
তৃতীয় হিজরীর মাহে শাবান শরীফ থেকে ১১ হিজরীর মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক পেয়েছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র ছোহবত মুবারক ও তত্ত্বাবধানে থেকে তিনি যেভাবে তা’লীম ও তরবিয়ত পেয়েছেন। পরবর্তীতে সুদীর্ঘকাল সেইভাবে উম্মতের তালীম ও তরবিয়তে তিনি ব্যাপৃত ছিলেন।
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করার পর উনারা সমস্ত উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সমস্ত মহিলা জাতির শিক্ষা দীক্ষা এবং হেদায়েতের কেন্দ্রস্থল ছিল সম্মানিত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফসমূহ। এমনকি বড় বড় পুরুষ ছাহাবীগণও অনেক কঠিন মাসয়ালা সমাধান করার জন্য উনাদের খেদমতে তশরীফ আনতেন।
হাদীছ শরীফ বিশারদগণের মতে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার থেকে সংকলিত হাদীছ শরীফের সংখ্যা ৬০টি। তবে যেহেতু তিনি বিশিষ্ট সম্মানিত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের একজন ছিলেন, উনার মুবারক আচার ব্যবহার, চাল-চলন সবই হাদীছ শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের অন্তর্ভূক্ত।
নারী ও পুরুষদের মধ্যে যাঁরা উনার নিকট থেকে হাদীছ শরীফ শুনেছেন এবং বর্ণনাও করেছেন, উনাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হামযা ইবনে আবদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাফিয়া বিনতে আবী উবায়দা রহমতুল্লাহি আলাইহা (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া), হযরত মুত্তালিব ইবনে আবী ওয়াদায়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত উম্মু মুবাশশির আল-আনছারিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত আবদুর রহমান ইবনে হারিছ ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ছাফওয়ান ইবনে উমাইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ছাওয়া আল-খুযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হযরত আল-মুসাইয়্যিব ইবনে রাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল-মাজলায রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আরো অনেকে (তাহযীবুত তাহযীব, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হিফাজতকারী হিসাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে থাকাকালীন সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ কিতাব আকারে এককভাবে সংকলিত ছিলোনা। প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথক পৃথক ভাবে অনেকের নিকট অংশ বিশেষ লিখিত ছিল। তাছাড়া ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অনেকেই হাফেজে কুরআন ছিলেন বিধায় তখন কিতাব আকারে এককভাবে লিখিত সংকলনের প্রয়োজন উনারা বোধ করেননি।
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে ইয়ামামার জিহাদে যখন অনেক হাফেজে কুরআন শাহাদতবরণ করেন, তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ শংকিত হন এবং লিখিতভাবে সম্পূর্ণ কুরআন পাক এককভাবে সংকলন করে রাখার প্রয়োজন বোধ করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং হাফেজে কুরআনগণ সমভিব্যাহারে উনাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি সংকলন প্রস্তুত করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফের পরে এই পবিত্র সংকলনটি খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত থাকে। অতঃপর উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর তা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার নিকট পৌঁছে।
উল্লেখযোগ্য যে, এই সংকলনটি পবিত্র কুরআন শরীফ কুরাইশ ভাষায় যেভাবে নাযিল হয়েছিল ঠিক সেভাবে সংকলিত হয়েছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পর যখন তা বিভিন্ন গোত্রে পৌঁছে তখন কুরাইশ ভাষায় উচ্চারণ পদ্ধতি বিভিন্ন স্থানীয় লোকদের অনেকের নিকট কঠিন বোধ হয়, কারণ সকল গোত্রের ভাষা বিশুদ্ধ কুরাইশ ভাষার উচ্চারণ পদ্ধতি অনুযায়ী ছিল না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণ লোকদের সুবিধার জন্য সাময়িকভাবে বিভিন্ন গোত্রীয় উচ্চারণ পদ্ধতিতে পবিত্র কুরআন পাক পাঠের অনুমতি দিয়েছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে যখন ইসলামী রাষ্ট্র বিশাল আকারে সম্প্রসারিত হয়, তখন বিভিন্ন স্থানের কুরআন পাক পাঠের পদ্ধতিতে প্রচুর তারতম্য দেখা দেয়।
পরিশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজ্মা অর্থাৎ সম্মিলিত অভিমত অনুযায়ী শুধু কুরাইশ ভাষায় নাযিলকৃত পাঠ পদ্ধতি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অতঃপর কুরাইশ ভাষার উচ্চারণ পদ্ধতিতে যে বিশুদ্ধ সংকলনটি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত ছিল, তা তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট অর্পণ করেন। অতঃপর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এই সংকলনটিই মূল কপি’ হিসাবে গৃহীত হয় এবং সর্বত্র প্রচারিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে তিনি উনার ভাই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নির্দেশ দিয়ে যান, যেন উনার সমস্ত অর্থ স¤পদ গরীব-দুঃখীদের মধ্যে দান করে দেয়া হয়। উনার নির্দেশ মুবারক কার্যকর করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে এবং পরবর্তী জীবনে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম তিনি প্রচুর ইবাদত-বন্দেগী করতেন। সবসময় রোযা রাখতেন এবং প্রতিনিয়তই রাত জেগে নামায আদায় করতেন। হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্পর্কে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছেন: সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম তিনি অতি মাত্রায় রোযা পালনকারিণী এবং রাতের বেলায় খুব বেশী ইবাদতকারিণী। (তাবাকাত)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামিন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবিয়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম একজন সৎকর্মশীলা নারী। (আনসাবুল আশরাফ)
উনার সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি রোযা অবস্থায় বিছালী শান মুবারক লাভ করেন। (তাবাকাত) সুবহানাল্লাহ!
(সূত্রসমূহ: ইবনে সা’দ, সিয়ারু আলামিন নুবালা, উসুদুল গাবা, ইছাবা, হায়াতুছ ছাহাবা, আল-আ’লাম, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)
-সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত বিবি শা’ওয়ানাহ রহমতুল্লাহি আলাইহা
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)