পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪০)
, ১৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
স্বর্ণ-রৌপ্য ও নগদ টাকার সম্মানিত যাকাত
সাধারণভাবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও টাকা-পয়সা ইত্যাদি নিছাব পরিমাণ এক বছর কারো মালিকানাধীনে থাকলে, তার উপর যাকাত ফরয হয়।
স্বর্ণের সম্মানিত যাকাত : এ প্রসঙ্গে ফিকাহর কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
لَيْسَ فِىْ مَا دُوْنَ عِشْرِيْنَ مِثْقَالًا مِّنَ الذَّهَبِ صَدَقَةٌ فَاِذَا كَانَتْ عِشْرِيْنَ مِثْقَالًا وَ حَالَ عَلَيْهَا الْـحَوْلُ فَفِيْهَا نِصْفُ مِثْقَالٍ.
অর্থ : “২০ মিছকাল অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা কম পরিমাণ স্বর্ণের সম্মানিত যাকাত ওয়াজিব হয় না। অতএব, কারো কাছে যদি ২০ মিছকাল অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ এক বছর অধীনে থাকে তাহলে অর্ধ মিছকাল অর্থাৎ ৪০ ভাগের ১ ভাগ স্বর্ণ সম্মানিত যাকাত দিতে হবে।” (মুখতাছরুল কুদূরী, আল হিদায়া)
রৌপ্যের সম্মানিত যাকাত : এ প্রসঙ্গে ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
لَيْسَ فِىْ مَا دُوْنَ مِائَتَىْ دِرْهَمٍ صَدَقَةٌ فَاِذَا كَانَتْ مِائَتَىْ دِرْهَمٍ وَ حَالَ عَلَيْهَا الْـحَوْلُ فَفِيْهَا خَمْسَةُ دَرَاهِمٍ.
অর্থ : “রৌপ্য (এর মূল্য) ২০০ দিরহামের কম অর্থাৎ সাড়ে ৫২ তোলার কম হলে তার সম্মানিত যাকাত দিতে হবে না। ২০০ দিরহাম অর্থাৎ সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য এক বছর মালিকের অধীনে থাকলে তখন এতে ৫ দিরহাম তথা ৪০ ভাগের ১ ভাগ হিসেবে তথা শতকরা ২.৫ ভাগ হিসেবে সম্মানিত যাকাত দিতে হবে।” (মুখতাছরুল কুদূরী, আল হিদায়া)
বর্তমানে সোনা ও রূপায় কোনটি নিছাব হিসেবে উত্তম : সম্মানিত যাকাত যে সময়ে ফরয হয় সে সময়ে ২০ মিছকাল অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের মূল্য ২০০ দিরহাম অর্থাৎ সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্যের সমান ছিল বিধায় সোনা ও রূপা উভয়টিই নিছাবের মূল সূত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই এ সূত্রানুসারে উভয়ের যে কোন একটির মূল্য ধরলেই চলবে। তবে বর্তমানে যেহেতু রূপার মূল্য সোনার মূল্য অপেক্ষা অনেক কম। তাই সতর্কতা ও পরহেযগারী হলো কম মূল্যটি অনুযায়ী নিছাব গ্রহণ করা। অর্থাৎ সোনা ও রূপা উভয়টির মধ্যে যেটাকে নিছাব হিসেবে গ্রহণ করলে গরীবের উপকার হয় সেটাকেই নিছাব হিসেবে গ্রহণ করা উত্তম ও তাক্বওয়ার অন্তর্ভুক্ত।
এতে একদিকে যেমন সম্মানিত যাকাতদাতার (ইবাদাতকারীর) সংখ্যা বাড়বে অন্যদিকে গরীবের বেশি উপকার হবে; যা সম্মানিত যাকাত, ছদাকাত ও ইনফাকের মৌলিক চাহিদা। এটাই ইমাম ও মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের গ্রহণযোগ্য মত। (মুখতাছরুল কুদূরী, আল হিদায়া)
খাদযুক্ত সোনা-চান্দির সম্মানিত যাকাত আদায়ের বিধান : সোনা-চান্দির মধ্যে খাদ থাকলে এবং সোনা-চান্দির পরিমাণ বেশি হলে উহাকে সোনা-চান্দি হিসাবেই যাকাত দিতে হবে, যদি উহা নিছাব পরিমাণ হয়।
আর যদি নিছাব পরিমাণ না হয়, তবে উহার মূল্য হিসাব করে অন্যান্য মালের সাথে মিলিয়ে নিছাব পূর্ণ হলে যাকাত আদায় করতে হবে।
যদি সোনা-চান্দি কম হয় ও খাদ বেশি হয় এবং উভয় মিলে যদি এক নিছাব বা তার চেয়ে বেশি হয়, তবুও যাকাত দিতে হবে।
খাদযুক্ত সোনা-চান্দি এত কম হয় যে, উভয় মিলেও এক নিছাব হয়না কিন্তু উহার দ্বারা ব্যবসা করা হয়, তবে উহা ব্যবসার মালের নিছাব হিসাবে হলে যাকাত দিতে হবে। অন্যথায় যাকাত দিতে হবেনা। (দুররুল মুখতার)
বিভিন্ন ক্যারেটের স্বর্ণের সম্মানিত যাকাত আদায়ের বিধান : যাকাত দাতার নিকট যে ক্যারেটের স্বর্ণ রয়েছে, সে ক্যারেটের স্বর্ণের মূল্য অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে। একাধিক ক্যারেটের স্বর্ণ থাকলে সে অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে যাকাত আদায় করতে হবে।
আহ্লিয়ার সম্পদ বা অলঙ্কারের যাকাত কে দিবে?
আহাল-আহ্লিয়ার সম্পদ একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হলেও মালিকানা যদি ভিন্ন হয় তাহলে অবশ্যই প্রত্যেককে তা পৃথকভাবে সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে। আহ্লিয়ার যদি অলঙ্কারও হয়। তা থেকেই তাকে সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَقِمْنَ الصَّلٰوةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكٰوةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ ۚ
অর্থ : “আর আপনারা (মহিলারা) সম্মানিত নামায কায়িম করুন ও সম্মানিত যাকাত আদায় করুন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের আনুগত্য করুন।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
তবে আহলিয়ার অলঙ্কার ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকলে সেক্ষেত্রে আহালের পক্ষ থেকে আহ্লিয়াকে প্রদানকৃত হাত খরচের টাকা থেকে বাঁচিয়ে বা কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে হলেও সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে। আহ্লিয়ার অলঙ্কারের যাকাত আহ্লিয়ার পক্ষ থেকে আহাল আদায় করলেও সম্মানিত যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)