সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (২৪)
হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত অনুশোচনায় নাযিল হলো আয়াত শরীফ
, ১৬ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১১ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন ‘মুস্তাদয়াফীন’ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু তিনি ‘আস্ সাবিকুনাল আউওয়ালুন’ উনাদের মাঝে অন্যতম। উনার সবচাইতে গর্বিত পরিচয় হলো- ইসলামের জন্য ঈমানদীপ্ত আত্মত্যাগের মাধ্যমে সর্বপ্রথম শাহাদাতবরণকারী মহিলা ছাহাবী হযরত সুমাইয়া বিনতে খিয়াত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার আওলাদ তিনি। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা-পিতা ভাই প্রায় একই সময়ে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর উনাদের উপর কাফির-মুশরিকরা এমন নারকীয় লোমহর্ষক অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছিল যা ভাষায় প্রকাশ করা অত্যন্ত দূরূহ ব্যাপার।
একবার কুরাঈশ কাফিররা হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পানিতে ফেলে এমনভাবে ডুবিয়ে রেখেছিল যে, উনার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়েই যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে কাফিররা উনার জবান মুবারক থেকে একটি ব্যতিক্রম কথা বের করে নিল। যে কথা তিনি স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় কস্মিনকালেও বলতে পারতেন না। এরপর যখন উনাকে ছেড়ে দেয়া হলো, তখন তিনি ব্যতিক্রম কথাটি উচ্চারণের জন্য মারাত্মক অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলেন এবং ব্যাকুল চিত্তে অস্থির-পেরেশান হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুদ দারাজাত মুবারকে (ক্বদম মুবারক) হাযির হলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার এমন উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দুর্দশা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার কি হয়েছে? তখন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার মুখের কথার সাথে কি তখন অন্তঃকরণের মিল ছিল? তিনি বললেন, আমার অন্তরে সর্বাবস্থায় পূর্ণ ঈমান বিরাজ করছে। এ কথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নূরুল মাগফিরাত মুবারক (হাত মুবারক) দিয়ে উনার চোখের পানি মুছে দিলেন এবং সান্ত¡না দিয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন- এতে কোন অসুবিধা নেই।
অতঃপর হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত অনুশোচনায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ফায়ছালায় স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন। যা পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে কুফরী করে; যা করতে বাধ্য করা হয় অথচ উনার অন্তরের অন্তঃস্থলে ঈমানে পরিপূর্ণ’ (সেই ব্যক্তিকে এজন্য কোন জবাবদিহীর মুখোমুখি হতে হবে না)। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
‘কাফির মুশরিকরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের প্রতি এমন অত্যাচার নির্যাতন করতো, যা অনেক সময় বরদাশ্তের সীমা অতিক্রম করে যেত- এ অবস্থায় পড়ে কেউ যদি সাময়িক কোন ব্যতিক্রম কিছু করতেন তবে উনাদের অপারগ মনে করা হতো। ’
হযরত সাঈদ ইবনে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক প্রশ্নের জাওয়াবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এমনটিই মন্তব্য করেছিলেন।
তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা হুবহু হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বেলায় প্রযোজ্য হতে দেখা যায়। নিজের মাতা-পিতাকে লোমহর্ষক নির্যাতনে শহীদ হতে দেখলেন, তাতেও তিনি ঈমানের উপর অটল দৃঢ়চিত্ত ছিলেন। সীমাহীন নির্যাতনে অপারগ হয়ে মুখে কিছু ব্যতিক্রম করলেন এতেও উনার ঈমানদীপ্ত অনুশোচনা যেন উপচে পড়লো।
এমন ঈমানদীপ্ত তীব্র অনুশোচনায় তিনি দগ্ধ হতে লাগলেন যা দূর করতে নাযিল হলো আয়াত শরীফ। সর্বাবস্থায় সবকিছুর চেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অন্তরকে ঈমানদীপ্ত রঙে সমুজ্জল রাখার নজীর স্থাপন করলেন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু; যা প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানকেও হাছিল করতে সচেষ্ট থাকা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি উম্মাহকে এমন ঈমানদীপ্ত রঙে রঙ্গিন করার জন্য অনুক্ষণ নিয়োজিত। তাই সকলের উচিত অন্তরের অন্তঃস্থলে ঈমানের জ্যোতিকে তাজা-পাকাপোক্ত করার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করা।
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)