কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা:
শহীদি জিসিম মুবারক উনার পাশে সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম
(মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণাগার থেকে প্রকাশিত “কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস” নামক কিতাব থেকে সংকলিত)
, ১০ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৯ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ০২ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি গিয়ে সম্মানিত ভাই উনার রূহ মুবারকবিহীন, মস্তক মুবারকবিহীন জিসিম মুবারক দেখে সম্মানিত ভাই উনার নিথর জিসিম মুবারক জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, ভাইজান! আপনি তো আমাদেরকে যালিমদের হাওলা করে চলে গেলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার শহীদি জিসিম মুবারক কারবালার যমীনে পড়ে রইলো। যেসব লোকেরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার শহীদি জিসিম মুবারক দাফন করেছিলেন, উনারা বলেছেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক উনার মধ্যে ৩৪টি বর্শার ছিদ্র, ৪০টি তলোয়ারের আঘাত এবং ১২১টি তীরের জখম ছিল।
হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি নিজের সম্মানিত ভাই উনার শহীদি জিসিম মুবারক উনার পাশে বিভোর হয়ে পড়ে রইলেন; এদিকে হযরত সখিনা আলাইহাস সালাম তিনি উনার আম্মাজান হযরত শহরবানু আলাইহাস সালাম উনার থেকে জোর-জবরদস্তি করে নিজেকে মুক্ত করে কারবালার ময়দানের দিকে অঝোর নয়নে ক্রন্দনরত অবস্থায় ছুটে আসলেন এবং চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ফুফু! আপনি কোথায়? আমার আব্বু তিনি কোথায়?
ভাতিজির আওয়াজ শুনে ফুফু ডাক দিলেন, বেটি! এদিকে আসুন! আপনার মযলূম ফুফু আপনার আব্বু উনার জিসিম মুবারক উনার পাশে বসে আছেন। হযরত সখিনা আলাইহাস সালাম তিনি যখন নিজের আব্বাজান উনাকে দেখলেন, তখন প্রথমে চিনতে পারলেন না। কারণ উনার সমস্ত জিসিম মুবারক রক্তে রঞ্জিত ছিল এবং মস্তক মুবারক জিসিম মুবারক থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। হযরত সখিনা আলাইহাস সালাম তিনি আব্বাজান উনার মস্তকবিহীন জিসিম মুবারক উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।
হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি হযরত সখিনা আলাইহাস সালাম উনার হাত মুবারক টেনে ধরে বললেন, মা হযরত সখিনা আলাইহাস সালাম! উঠুন, আমি আপনাকে তাঁবুতে দিয়ে আসি। আমার ভাই আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে সান্ত¡না দেয়ার জন্য। তিনি জোর করে হযরত সখিনা আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার বুক মুবারক থেকে ছাড়িয়ে তাঁবুতে নিয়ে গেলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম ও উনার অন্যান্য সঙ্গী-সাথী উনাদের শহীদি জিসিম মুবারক কারবালার ময়দানে পড়ে রইলো।
ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি ও তার বাহিনীরা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে মনে করেছিল যে, তারা বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তাদের এমনই পরাজয় হয়েছে যেমনটি পৃথিবীর ইতিহাসে আর কারো হয়নি। কারণ তারা চিরতরের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত মুবারক ও জান্নাত থেকে বঞ্চিত।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার পরিবারের অন্যান্য সঙ্গী-সাথী উনারা শোকে পাথর হয়ে এক রাত সেখানেই অবস্থান করলেন। রাতের বেলায় যখন সবাই শুয়ে পড়লেন, তখন রাতের গভীর নির্জনে একাকী হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি স্বীয় মুখ মুবারকে পর্দা ফেলে তাঁবু থেকে বের হয়ে কারবালার প্রান্তরের দিকে রওয়ানা হলেন। দেখলেন, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বাগানের জান্নাতী ফুল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মস্তক মুবারকবিহীন নূরানী জিসিম মুবারক কারবালার প্রান্তরেই পড়ে রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নয়নের মণি, কলিজার টুকরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার নিষ্প্রাণ জিসিম মুবারক নূরে ঝকমক করছে।
অন্যান্য সম্মানিত সঙ্গী-সাথী উনাদের শহীদি জিসিম মুবারকও কারবালার ময়দানে পড়ে রয়েছে। ছবর ও ধৈর্যে অটল থাকা সত্ত্বেও অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন। কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়জনদের সকলকে এক পলক করে দেখে সবশেষে আবার প্রিয়ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক উনার পাশে এসে মাটিতে বসে পড়লেন। উনার মস্তক মুবারকবিহীন নূরানী জিসিম মুবারক দেখে কিছুতেই আর নিজেকে থামাতে পারছিলেন না। অনেক কষ্টে কোন রকমে নিজেকে সংবরণ করে শুধু বললেন, “হে আমার ভাইজান! আমরা অসহায়, অপারগ, ভিন দেশের মুসাফির। পবিত্র মদীনাতুল মুনাওওয়ারা শরীফ অনেক দূর। আমরা কিভাবে ওখানে আপনার খবর পৌঁছাবো? আমরা কিভাবে আপনাদের দাফন মুবারক করবো?”
অতঃপর পবিত্র মদীনাতুল মুনাওওয়ারা শরীফ উনার দিকে মুখ করে হাত মুবারক তুলে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রিয় দৌহিত্র সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মস্তক মুবারকবিহীন সম্মানিত জিসিম মুবারকসহ অন্যান্যদের শহীদি জিসিম মুবারক কাফন-দাফন বিহীন রক্তে রঞ্জিত অবস্থায় কারবালার প্রান্তরে পড়ে রয়েছে। ”
এভাবে দোয়া করে বুক ভরা বেদনা নিয়ে তিনি তাঁবুতে প্রত্যাবর্তন করেন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)