পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার ফযীলত ও আমল
, ৩০ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র ঈদুল ফিতর কি?
عِيْدٌ ঈদ’ এবং فِطْرٌ ‘ফিতর’ শব্দ দুটি আরবি, যার অর্থ হচ্ছে আনন্দ, খুশী, রোযা ভেঙে ফেলা ইত্যাদি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা ও ইবাদত-বন্দেগির পর বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ পবিত্র শাওয়াল শরীফ মাসের চাঁদের আগমনে রোযা ভেঙে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ শুকরিয়াস্বরূপ যে আনন্দ-খুশী পালন করেন- শরীয়তের পরিভাষায় তাই ‘ঈদুল ফিতর’।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার সূচনা:
ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দ কেন? এমনি এমনিতেই কি কেউ আনন্দিত হয়? না। মানুষ তখনই আনন্দিত হয় যখন আনন্দের কিছু ঘটে। পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলে আনন্দিত হয়; কঠিন কোনো কাজ সহজেই সমাপ্ত করতে পারলে আনন্দিত হয়। পুরস্কৃত হলে আনন্দিত হয়। আনন্দের জন্য তো কোনো কারণ থাকতে হবে! এক মাস রোযার পর এদিনে সেই সাধনার পুরস্কার হিসেবে ক্ষমাপ্রাপ্তিই সেই আনন্দের কারণ।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার সূচনা:
পবিত্র হাদীছ শরীফে বণির্ত হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَـقَالَ مَا هذَانِ الْيَوْمَانِ قَالُوْا كُنَّا نَـلْعَبُ فِيْهِمَا فِىْ الْجَاهِلِيَّةِ فَـقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَبْدَلَكُمُ اَللَّهُ بِـهِمَا خَيْـرًا مِنْـهُمَا يَوْمَ اَلْأَضْحَى, وَيَوْمَ اَلْفِطْرِ
হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন তখন তাদের দুইটি দিন ছিল যাতে তারা খেলাধুলা করতো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের এই দুইটি দিন কি? তারা বললো আমরা জাহিলিয়াতের যুগ থেকেই এই দুই দিন খেল তামাসা করি। তখন তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের ওই দুটি খেল তামাসার দিনের পরিবর্তে তার চেয়ে আরও উত্তম দুটি আনন্দের দিন দিয়েছেন। তাহলো ঈদুল আদ্বহা এবং ঈদুল ফিতর। (সুনানে নাসায়ী শরীফ, সুনানে আবু দাউদ শরীফ)
পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার সুন্নতসমূহ:
পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার নামাজ সম্পর্কে কিতাবে বণির্ত রয়েছে,
يستحب تعجيل صلاة الاضحي لتعجيل الاضحي. وفي عيد الفطر يؤخر الخروج قليلا
অর্থ: “নামাযের সময় হওয়ার পর পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার নামায সকাল সকাল আদায় করা মুস্তহাব। যাতে কুরবানী তাড়াতাড়ি করা যায়। আর পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার নামায একটু বিলম্ব করে আদায় করা মুস্তাহাব। ” (বাহরুর রায়িক ২য় খ- ২৮০ পৃষ্ঠা)
পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিনের সুন্নত হলো- (১) খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা, (২) গোসল করা, (৩) মিস্ওয়াক করা, (৪) সামর্থ অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা, (৫) আতর ও সুরমা ব্যবহার করা, (৬) নামাজের পূর্বে সদকাতুল ফিৎরা আদায় করা, (৭) পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার নামাজের পূর্বে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া (৮) তিন, পাঁচ বা বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা খুরমা খাওয়া, (৯) ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া (১০) এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, (১১) সকাল সকাল ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যাওয়া, (১২) ঈদের নামাজ ঈদগাহে গিয়ে পড়া। কোন কারণে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা সম্ভব না হলে জামে মসজিদে নামাজ আদায় করা (১৩) আস্তে আস্তে নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া-
الله اكبر الله اكبر- لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد
(১৪) শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিনের বর্জনীয় বিষয়সমূহ:
১. জামাতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা; ২. ঈদুল ফিতর উনার দিন সিয়াম পালন করা; ৩. বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন করা; ৪. নারী-পুরুষ একে অপরের বেশ ধারণ করা; ৫. নারীদের খোলামেলা অবস্থায় রাস্তাঘাটে বের হওয়া; ৬. গান-বাজনা করা, অশ্লীল সিনেমা ও নাটক দেখা; ৭. অযথা কাজে সময় ব্যয় করা; ৮. অপচয় ও অপব্যয় করা; ৯. আতশবাজি করা; ১০. ঈদের সালাত আদায় না করে কেবল আনন্দ-ফূর্তি করা ইত্যাদি।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার আমলসমূহ:
ইশার নামায, মক্ববুল মুনাজাত শরীফ: প্রস্তুত হয়ে পবিত্র ছলাতুল ইশা আদায়ের জন্য দরবার শরীফ আসা এবং সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে মক্ববুল মুনাজাত শরীফ এ অংশগ্রহণ করা।
বাদ ইশা থেকে ফযর: পবিত্র ঈদুল ফিতরে সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার রাতে ইবাদত করলে ক্বলব মরবে না: পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من قام ليلتي العيدين مـحتسبا لله تعالى لـم يـمت قلبه يوم تـموت القلوب
অর্থ: ঈদের রাত্রে যিনি একাগ্রচিত্তে নেকী ও সন্তুষ্টির আশায় মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত বন্দেগী করবেন, যখন সমস্ত ক্বলব মৃতবত হয়ে যাবে তখন তিনি ইতমিনান থাকবেন।
দোয়া কবুলের রাত: পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِـىْ خَـمْسِ لَيَالٍ اَوَّلُ لَيْلَةٍ مّنْ رَجَبَ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْلَةُ الْقَدْرِ الْـمُبَارَكَةِ وَلَيْلَتَا الْعِيْدَيْنِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে। ” (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলাতি)
ছদাকাতুল ফিতর: ছদাকাতুল ফিতর আদায় না করে থাকলে তাড়াতাড়ি পরিবারের সদস্য হিসাব করে পবিত্র ছদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন সাইয়্যিদুল আওকাত শরীফ বা সুবহে সাদিকের সময় ছদকাতুল ওয়াজিব হয়। যাকাত বাকী থাকলে সেটাও অবশ্যেই আদায় করতে হবে। তবে রমাদ্বান শরীফের মধ্যেই দিতে হবে। কারণ রমাদ্বান শরীফ মাসে দিলে ৭০ গুণ বেশি ফযীলত পাওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَرِيْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَوْمُ شَهْرِ رَمَضَانَ مُعَلَّقٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ وَلَا يُرْفَعُ اِلَّا بِزَكَاةِ الْفِطْرِ
অর্থ: “হযরত জারীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র রমাদ্বান মাস উনার রোযাগুলো আসমান-যমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে, ছদাক্বাতুল ফিত্র আদায় না করা পর্যন্ত উপরে উঠানো হয় না (অর্থাৎ ছদাক্বাতুল ফিত্র না দেয়া পর্যন্ত কবুল হয় না)। ” (আত তারগীব ওয়াত তারহীব মিনাল হাদীছিশ শরীফ ২য় খ- ৯৭ পৃষ্ঠা)
চুলে, দাড়িতে ও শরীরে জয়তুনের তেল মাখা: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلُوا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوا بِهِ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ
অর্থ: হযরত আবূ আসাইদ আল আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহূ উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যাইতুনের তেল খাও এবং গায়ে মাখো। কেননা উহা বরকতময় গাছ থেকে তৈরী। (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারেমী শরীফ)
বরই পাতার পানি দিয়ে গোসল করা: বরই পাতার নির্যাস মিশানো সুন্নতী বডিওয়াশ ব্যবহার করে গোসল করা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن قَيْسِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أُرِيدُ الإِسْلاَمَ فَأَمَرَنِي أَنْ أَغْتَسِلَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ
অর্থ: হযরত ক্বাসিম ইবনু আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে এলে তিনি আমাকে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীছ নং ৩৫৫)
ধুন্দলের ছোবরা এবং ঝামা পাথর ব্যবহার করা: গোসলে শরীর মাজার জন্য প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার সময় ধুন্দলের ছোবড়া ব্যবহার করা এবং পা ঘষার সময় ঝামা পাথর ব্যবহার করা সুন্নত।
সুন্নতি নতুন পোশাক পড়া: পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
অর্থ: হে বনী আদম! আপনাদের নিজেদের আবৃত করা ও সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে আমি পোশাক নাযিল করেছি। আর তাক্বওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম।
এইগুলি মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন মুবারকগুলোর অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬)
আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা: পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَتْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُكَّةٌ يَتَطَيَّبُ مِنْهَا
অর্থ: হযরত আনাস ইবনু মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি উত্তম আতরদানি ছিল, তিনি তা হতে সুগন্ধি মুবারক ব্যবহার করতেন। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীছ নং ৪১৬২)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ لَـمْ يَكُنِ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـمُرُّ فِي طَرِيْقٍ فَيَتْبَعُهٗ اَحَدٌ اِلَّا عَرَفَ اَنَّهٗ سَلَكَهٗ مِنْ طِيْبِهٖ
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে রাস্তায় গমন করতেন সে রাস্তা উনার সুগন্ধে সুরভিত হয়ে যেতেন, উনার পিছনে গমনকারী ব্যক্তি সহজে অনুভব করতে পারতো যে, এ রাস্তা দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গমন করেছেন। ” সুবহানাল্লাহ! (তারিখুল কবীর ১/৩৯৯, ‘আলামুন নুবুওওয়াহ ১/১৬৩)
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ حُبِّبَ إِلَيَّ مِنْ الدُّنْيَا النِّسَاءُ وَالطِّيبُ وَجُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন -“তোমাদের দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে আজওয়াজে মুত্বাহহারাত ও খোশবুকে প্রিয় করা হয়েছে। আর নামাযকে করা হয়েছে আমার চক্ষুশীতলকারী। ” (আহমাদ শরীফ- ১২২৯৩, নাসাঈ শরীফ- ৩৯৩৯, হাকেম- ২৬৭৬, সহীহুল জামে- ৩১২৪)
বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া:
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَغْدُوْ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتّى يَأْكُلَ تَـمَرَاتٍ وَ يَـــأْكُلَهُنَّ وِتْراً
অর্থ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজে বের হতেন না কয়েকটি খেজুর না খেয়ে। তিনি সাধারনত বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারী শরীফ)
ঈদের জামায়াতের উদ্দেশ্যে ঈদগাহের দিকে রওয়ানা দেয়া: মহাসম্মানিত রাজারবাগ দরবার শরীফে রওয়ানা দেয়া। অত:পর তাকবীরে তাশরীক পড়তে পড়তে ঈদগাহের দিকে রওয়ানা দেয়াالله اكبر الله اكبر- لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد
ঈদের দিন এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করা খাছ সুন্নত।
ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘোষণা নিয়ে রোযাদারের বাসস্থানে প্রত্যাবর্তন: হযরত আল আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঈদুল ফিতরের দিন সকালে সকল হযরত ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান এবং মুসলমানগণ উনাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, হে মুসলিমগণ! আপনারা দয়ালু প্রতিপালক উনার দিকে এগিয়ে আসুন। উত্তম প্রতিদান ও বিশাল সাওয়াব প্রাপ্তির জন্য এগিয়ে আসুন। আপনাদের রাত্রিবেলার নামাযের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, আপনারা সে নির্দেশ মেনে নামায পড়েছেন। আপনাদেরকে দিনগুলোতে রোযা রাখতে বলা হয়েছিল, আপনারা সে নির্দেশও পালন করেছেন, এক মাস রোযা রেখেছেন। গরীব-দুঃখীরদের পানাহারের মাধ্যমে নিজ প্রতিপালককে আপনারা পানাহার করিয়েছেন। এখন নামায পড়ার মাধ্যমে সেগুলোর প্রতিদান ও পুরস্কার গ্রহণ করুন। ঈদের নামায পড়ার পর হযরত ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাঝে একজন ঘোষণা দেন, শুনুন, নামায আদায়কারীগণ! আপনাদেরকে মহান রব্বুল আলামীন তিনি মাফ করে দিয়েছেন, সকল গুনাহ থেকে মুক্ত অবস্থায় নিজ নিজ আবাসে ফিরে যান। আর শুনুন! এ দিনটি হচ্ছে পুরস্কার প্রদানের দিন। আকাশে এ দিনের নামকরণ করা হয়েছে ‘পুরস্কারের দিন’ সুবহানাল্লাহ! (আল মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হাদীছ শরীফ নাম্বার- ৬১৭ ও ৬১৮)।
ঈদের দিন রোযাদারকে ক্ষমা ঘোষণা: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ঈদের দিন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাঝে রোযাদারদের নিয়ে ফখর করে বলেন, ‘হে ফেরেশতাগণ, আমার কর্তব্যপরায়ণ মাহবূব বান্দার বিনিময় কী হতে পারে? যারা আদেশ পালন করেছে?
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, আয় বারে ইলাহী, পূর্ণরূপে পুরস্কার দান করাই তো তার প্রতিদান। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হযরত ফেরেস্তা আলাইহিস সালাম! আমার বান্দারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব (রোযা-নামায) পালন করেছে। অত:পর দোয়া করার জন্য বের হয়েছে অর্থাৎ ঈদগাহে গমন করেছে। আমার ইজ্জতের, জালালিয়তের, দয়া-বড়ত্ব ও উচ্চ মাকামের কসম আমি অবশ্যই তাদের দোয়া কবুল করব অত:পর বলেন তোমরা ফিরে যাও অর্থাৎ বাড়ীতে যাও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের গুনাহগুলিকে নেকীতে পরিবর্তন করে দিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন অত:পর তারা বাড়ী ফিরে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে। সূবহানাল্লাহ! (বায়হাকি শরীফ: ৩/৩৪৩)।
তাবারুক খাওয়া: মহাসম্মানিত তাবারুক গ্রহণ করা। পরিবার পরিজনের জন্য পবিত্র আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র থেকে শাহী তাবারুক, সুন্নতী খাবার নিয়ে যাওয়া। প্রিয়জনের জন্য উপহার সামগ্রী হাদিয়া নিয়ে যাওয়া।
মাটির পাত্রে খাবার খাওয়া সুন্নত: পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-“নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক আনলেন। সে সময় ‘চুলার উপর (মাটির) ডেকচি’ ফুটছিল। তিনি সকালের খাবার আনতে বললে উনার কাছে রুটি ও ঘরের কিছু তরকারী আনা হল। তিনি বললেন, আমি কি গোশ্ত দেখিনি? উনারা বললেনঃ হ্যাঁ (গোশ্ত রয়েছে) ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!”
হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম দরজা বন্ধ করে কান্না করেছেন: অনুরূপ নিজের আমলের কথা চিন্তা করা, তওবা-ইস্তেগফার, কান্নাকাটি করা।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلٰى حَضَرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَوْمَ الْعِيْدِ قَدْ اَغْلَقَ الَبَابَ عَلى نَـفْسِه وَهُوَ يَبْكِىْ فَقُلْتُ يَا اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَتَبْكِىْ وَالنَّاسُ فِـىْ فَرْحٍ فَـقَالَ لَوْ عَلِمَ فَارِحُوْنَ مَا فَارِحُوْا ثُـمَّ جَعَلَ يَبْكِىْ يَـقُوْلُ وَاِنْ كَانُوْا مِنَ الْمَقْبُوْلِيْنَ فَلْيَفْرَحُوْا وَاِنْ كَانُوْا مِنَ الْمَتْرُوْدِيْنَ فَلْيَبْكُوْا فَاِنِّـىْ لَا اَدْرِىْ مِنَ الْمَقْبُوْلِيْنَ اَنَا اَمْ مِنَ الْمَتْرُوْدِيْنَ
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি সম্মানিত ঈদের দিন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হুজরা শরীফ তাশরীফ মুবারক নিলাম। তিনি নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে বসে কাঁদতেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি বললেন- হে হযরত আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনি ঘরে বসে বসে কাঁদতেছেন আর মানুষতো বাহিরে খুশি প্রকাশ করতেছে। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- যারা খুশি প্রকাশ করতেছে তারা যদি জানতো কেনো তারা খুশী প্রকাশ করতেছে এটা বলে তিনি পুনরায় কাঁদতে থাকলেন। অত:পর তিনি বললেন, তারা যদি মকবুল হয়ে থাকে তাহলে তারা খুশি প্রকাশ করুক। আর যদি তারা মকবুল না হয়ে থাকে তাহলে তারা যেন কান্নাকাটি করে। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার তো জানা নেই আমি কি মকবুল হয়েছি নাকি বিতারিত হয়েছি। নাউযুবিল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)