দৈনন্দিন ৩২ বার পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করলেও মুসলমান কি পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ শুধু পাঠের মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে? ফিকির আর আমল কী অধরাই থাকবে?
, ০৩ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০২ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সম্পাদকীয়
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর নাযিল হয়েছে বরকতময় কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ। যে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইহা এমন একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যেন তারা উহার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহকে গভীরভাবে ফিকির করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।” (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
বাস্তবে সমাজ জীবনে সাধারণ মুসলমান তো বটেই, কার্যক্ষেত্রে আলিম দাবিদারদের মাঝেও পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে ফিকিরের প্রবণতা তথা এর হাক্বীক্বত উপলব্ধির চেতনা খুবই কম পরিলক্ষিত হয়। এই উদাসীনতার দিকে নির্দেশ করে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তারা কি পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে ফিকির করে না?” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
মূলত, এই উদাসীনতার ভিতরই যাতে পরিচালিত হতে না হয়, সেজন্য মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে “ইয়া তাফাক্কারুন, ইয়া তাদাব্বারুন, ইয়া কিলুন, তা’ক্বিলুন, ইয়াফক্বাহুন, তাফক্বাহুন, মুতাওয়াস্সিমীন” ইত্যাদি ফিকির সম্বলিত নির্দেশাবলী প্রদান করেছেন। যা কিনা আমাদের ফিকির করতে, সূক্ষ্ম চিন্তা করতে, আকল খাটাতে, বুদ্ধি খাটাতে, সমঝ হাছিল করতে, দূরদর্শিতার সাথে শ্রবণ করতে, সর্বোপরি চিন্তা-চেতনার জগতকে বিস্তৃত করার জন্য গভীরভাবে করে অনুপ্রাণিত। এ প্রেক্ষিতে কেবল পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ নিয়েই যদি আমরা ফিকির করি, তবে সে ফিকিরলব্ধ জ্ঞানই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, বিষয়বস্তুর আঙ্গিকে, গুরুত্বের বিচারে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ এক অনন্য মর্যাদাসম্পন্ন সূরা। পবিত্র কুরআন শরীফ আরম্ভ হয়েছে- পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ দ্বারা। অবতরণের দিক দিয়ে এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সংক্ষিপ্ত সারমর্ম। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অবশিষ্ট পবিত্র সূরা শরীফগুলো মূলত পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনারই বিস্তৃত ব্যাখ্যা। গুমরাহীর পথ ছেড়ে সিরাতুল মুস্তাক্বীমের পথে পরিচালিত হওয়াই সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মূলকথা। আর পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার মধ্যে সে বিষয়টিই দোয়ারূপে সন্নিবেশিত করা হয়েছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণরূপে।
পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়, প্রত্যেক নামাযের প্রত্যেক রাকাতে এ পবিত্র সূরা শরীফ পাঠ করার বাধ্যবাধকতা দেখে। একজন মুসলমান দৈনিক ৫ ওয়াক্ত ফরয নামাযের ১৭ রাকাতে ১৭বার, ৩ রাকাত ওয়াজিব নামাযে ৩বার এবং ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াকাদ্দাহ নামাযে ১২বার, এই মোট ৩২বার কম করে হলেও এ পবিত্র সূরা শরীফ পাঠ করে থাকে।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সর্বাধিক পঠিত সূরা হিসেবে সে দোয়া সারা মুসলিম জাহান উচ্চারণ করছেন প্রতিনিয়ত, অহরহ। মানুষের পক্ষ হতে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রার্থনা ও আবেদন-নিবেদন বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার শেষের তিনটি পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ভাষা হচ্ছে- “আমাদেরকে সরল পথ দান করুন, সে সমস্ত লোক উনাদের পথ, যাঁদেরকে নিয়ামত মুবারক দান করা হয়েছে। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।”
স্মর্তব্য, নিয়ামতপ্রাপ্ত ও গযবপ্রাপ্তদের বর্ণনা কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই রয়ে গেছে। যাঁদেরকে নিয়ামত মুবারক দেয়া হয়েছে, উনাদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “যাঁদের প্রতি মহান আল্লাহ্ পাক তিনি অনুগ্রহ মুবারক করেছেন, উনারা হচ্ছেন- হযরত নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ এবং সালেহীন।”
অপরদিকে গযবপ্রাপ্ত বলতে ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদেরকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সুতরাং ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের পথ পরিহার করে, হযরত নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ, ছালেহীনগণ উনাদের পথে পরিচালিত হওয়াই পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার কথা, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার শিক্ষা, যা কিনা আমরা প্রত্যহ দোয়া কুনুতেও উচ্চারণ করে থাকি- “ফাসিক-ফুজ্জারদের পথ থেকে বিরত রাখুন আল্লাহ্ পাক।”
বলাবাহুল্য, উম্মাহ্কে এই আদর্শের আলোকে পথ চলার উদ্দীপনা জাগানোর দায়িত্ব নীতিগতভাবে বর্তায় আলিম সমাজের উপর। কিন্তু যুগৎপৎভাবে আশ্চর্যজনক এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তথাকথিত আলিম সমাজ সে অনিবার্য কাজটিতে কেবল ব্যর্থই হচ্ছে না, সাথে তারা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মসজিদে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ আওড়িয়ে, দোয়া কুনূত পড়ে মঞ্চে উঠে তারাই তার খিলাফ করছে। নিয়ামতপ্রাপ্তদের পথ চাইলেও তারা অনুসরণ করছে গযবপ্রাপ্তদের পথ। হযরত নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ, ছালেহীনগণের পথ নয়; বরং গণতন্ত্র, নির্বাচন, টিভি চ্যানেল, স্যাটেলাইট চ্যানেল ইত্যাদি করে তারা অনুসরণ করছে- ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের পথ, হরতাল করে কাট্টা মুশরিক-হিন্দুর পথ।
সঙ্গতকারণেই তাই বলতে হয়, আজ যেসব ওলামা নামধারী ব্যক্তি গণতন্ত্র, নির্বাচন, হরতাল, টিভি চ্যানেল, ছবি, বেপর্দা-বেহায়া, হারাম ক্রিকেট ইত্যাদির পথ ধরে চলছে, তারা মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আদর্শ, এমনকি পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার শিক্ষা থেকেও মাহরূম। অর্থাৎ সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ তো অবশ্যই, এমনকি প্রতিনিয়ত পঠিত সূরা, পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার ফিকির করতেও রয়েছে তাদের অবহেলা, অনীহা-অনিচ্ছা। যাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তারা কি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সম্পর্কে গভীর ফিকির করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে?”
মূলত, তাদের অন্তরে সত্যিই তালা লেগে গেছে, মহর পড়ে গেছে। সুতরাং সত্যের খাতিরে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার নির্দেশে, পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার শিক্ষায় আমাদেরকে অন্তরে মহরবিশিষ্ট এসব নামধারী উলামাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে তাদের মুখালিফ ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীর সংস্পর্শে চলতে হবে। যাঁদের মর্তবা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান, “যারা অন্ধ ও চক্ষুষ্মান, তারা কি কখনো সমান হতে পারে?”
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দ্রব্যমূল্যের আগুনে ঝলসে যাচ্ছে মানুষ। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে জনসাধারণ। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের রকমফের চটকদার কথার পরিবর্তে এক্ষনি মূল্যস্ফীতিকে সংকুচিত করে দেশবাসীকে বাঁচাতে হবে ইনশাআল্লাহ।
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৭ হাজার ৮০০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদের দেশে কয়লার ঘাটতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ কেন? বিগত মাফিয়া সরকারের পথ থেকে সরে এসে কয়লা উত্তোলন শুরু করুন।
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গঃ মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও অপব্যবহার।
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়, তাপ মুক্তি নিরাপদ ফল-সবজি প্রাপ্তি, পরিবেশ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ হোক একটুকরো বাগান
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৪০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বন্ধ হয়েছে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করলে ইনশাআল্লাহ ঘুরে দাঁড়াবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুদি দোকান, স্টেশনারি দোকান, শপিং মল, পার্লার, সুপার শপ সবখানেই ভেজাল কসমেটিক্স। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবহারকারীরা। সরকারের কঠোর নজরদারী ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দেশের ৪ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকে। অথচ দেশে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় হয় প্রায় ৯০ কেজি। বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আজ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২৮শে রবীউছ ছানী শরীফ! সাইয়্যিদাতুনা উম্মুর রদ্বাআহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ, আখু রসূলিল্লাহ মিনার রদ্বাআহ সাইয়্যিদুনা হযরত মাসরূহ্ আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। সুবহানাল্লাহ!
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিক্ষা খাতে পতিত সরকারের বাজেটে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়নি শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে- শিক্ষা উপকরণের দাম কমিয়ে বর্তমান সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে ইনশাআল্লাহ
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শব্দ দূষণ এখন শব্দ সন্ত্রাস ও নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। নারিকেল দ্বীপ নয় শব্দ দূষণে বিপর্যস্থ ঢাকাকে উপযোগী করার জন্য ঢাকার জনযট সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন’ ৩৯ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৬ গুণ উৎপাদন বাড়ছে মাছের, তবুও নাগালে নেই দাম
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাটক-সিনেমার মাধ্যমে মুসলিম প্রজন্মকে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরকালের কথা স্বরণ করে মুসলিম উম্মাহকে বিধর্মীদের এসব ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)