তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, সুলত্বানুল আরিফীন, কুতুবুল আলম ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম
, ১২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, সুলত্বানুল আরিফীন, কুতুবুল আলম ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হিজরী ১৩৫২ সনে (১৯৩৪ খৃ.) চাঁদপুর জেলার (বৃহত্তর কুমিল্লা) অন্তর্গত নানুপুর গ্রামে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম শাহছূফী মুহম্মদ আহমদ উল্লাহ মুনশী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সম্মানিত মাতা উনার নাম আয়িশা খাতুন রহমতুল্লাহি আলাইহা। সম্মানিত মাতা পিতা উনারা উভয়ে অত্যন্ত পরহিজগার ও আল্লাহওয়ালা ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বয়স যখন ৬/৭ বৎসর তখন উনার সম্মানিত আব্বাজান তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ লাভ করেন। সম্মানিত পিতা উনার বিছাল শরীফ উনার সময় উনারা সাত ভাই ও এক বোন ছিলেন। তিনি ছিলেন ভাইদের মধ্যে ষষ্ঠ অর্থাৎ উনার বড় আরো পাঁচ ভাই এবং উনার ছোট এক ভাই ছিলেন।
পবিত্র ইলম অর্জন:
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি স্থানীয় মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং সব সময় কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন। তিনি ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে তাফসীর বিভাগ ও ফিকাহ বিভাগে কামিল পরীক্ষায় (মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী) প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন (অর্থাৎ ডাবল টাইটেল পাশ করেন)। তিনি ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার রিসার্চ স্কলারও ছিলেন। অতঃপর তিনি মাদ্রাসা আলীয়াতে তাফসীরের অধ্যাপনা করতে থাকেন। সুদীর্ঘ ২৭ বৎসর মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালন করার পর অবসর প্রাপ্ত হন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র ইলমে তাছাওউফ অর্জন:
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ফুরফুরা শরীফের মাদারজাদ ওলী, সুলাতানুল আরেফীন, হযরত মাওলানা শাহ ছুফী নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ন’হুযূর ক্বিবলা) উনার মুবারক হাতে মুরীদ হয়ে তরীক্বতের সবক্ব মশক্ব করতে থাকেন। বাইয়াত হওয়ার পর থেকে সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি কঠোর রিয়াজত মাশাক্কাত সহকারে তরীকতের শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকেন। হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে সম্মানিত খিলাফত মুুবারক প্রদান করেন। ফুরফুরা শরীফের তৎকালীন গদীনশীন পীর, কাইয়ূমে যামান, হযরত মাওলানা শাহ ছুফী মুহম্মদ আবদুল হাই ছিদ্দিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনাকে সম্মানিত খিলাফত মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!
তা’লীম তরবিয়ত:
প্রথম দিকে সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খানকাহ শরীফ ছিলেন লোহারপুল মসজিদের দোতালায়। প্রতি ইয়াওমুল আহাদ বা রোববার আছর নামায উনার পর থেকে যিকিরের হালকা শুরু হতো। লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ মাগরিব নামায উনার পর থেকে ইশা পর্যন্ত যিকির-আযকার হতো। যিকির শেষে মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি কিছু ওয়াজ নছীহত করতেন।
লোহার পুল মসজিদের অনতিদূরে (মসজিদের দক্ষিন-পশ্চিম পার্শে) একটি বাড়ীতে তিনি স্বপরিবারে অবস্থান মুবারক করতেন।
হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খুলাফা ও মুরীদানদের মধ্যে সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন বাংলাদেশে প্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ খলীফা। যখন উনার সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং চতুর্দিক থেকে আলিম ফাজিল, ইংরেজী শিক্ষিত অসংখ্য লোক উনার মুরীদ হতে লাগলেন তখন উনার অনেক পীরভাই উনাকে ঈর্ষার চোখে দেখতে লাগলেন। এজন্য সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মাঝে মাঝে আফসোস করে বলতেন: তারা কেন আমাকে ঈর্ষা করে আমি জানি না। মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান তাকে দেন, সকলকে দেন না। তিনি প্রায়ই বলতেন: আল্লাহ পাক জিসকো চাহতা, ছপ্পর ফাড়কে দেতা। তিনি শুকরিয়া স্বরূপ বলতেন, আমি আমার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার থেকে যেসব নিয়ামত মুবারক লাভ করেছি, তা গণনা ও হিসাব করে শেষ করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হজ্জ পালন:
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র হজ্ব সমাপন করেছিলেন। হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তন করে বিভিন্ন বিচিত্র অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: “পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মসজিদে হারামে (বায়তুল্লাহ শরীফে) প্রত্যেক নেক কাজের ছওয়াব পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের তুলনায় এক লক্ষ গুণ বেশী এবং পবিত্র মদীনা শরীফে মসজিদে নববী শরীফে পঞ্চাশ হাজার গুণ বেশী। সেই হিসাবে এ উভয় স্থানে এক রাকায়াত নফল নামায পড়লে যথাক্রমে এক লক্ষ রাকায়াত ও পঞ্চাশ হাজার রাকাত নফল নামাযের ছওয়াব হয়। ফরয নামাযের ফযীলত সকল নামাযের উপরে। সেই জন্য আমি হজ্জে গেলে এই উভয় স্থানে অন্যান্য নফল নামায অপেক্ষা উমরী ক্বাযা বেশী বেশী আদায় করেছি, যাতে এই নামায ফরযের পরিপূরক হয়। ” সুবহানাল্লাহ!
দান্দান মুবারক শহীদ:
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যখন পবিত্র উহুদের ময়দানে যান, ভাবাবেগে আত্মহারা হয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ সেখানে মুনাজাত করতে থাকেন। মনে মনে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজী পেশ করেন: আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার হাবীব, আমাদের প্রাণের আঁকা, এই উহুদের ময়দানে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রক্তেরঞ্জিত হয়ে ছিলেন। উনার পবিত্র দান্দান মুবারক শহীদ হন। আমি জানিনা কোন্ দাঁত মুবারকটি উনার শহীদ হয়েছিলেন। হযরত উয়ায়েস আল করণী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আপনার হাবীব উনার মুহব্বতে উনার সমস্ত দাঁত মুবারকগুলি নিজ হাতে উপড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতে পারেননি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন্ দাঁত মুবারকটি শহীদ হয়েছিলেন। আমি আপনার হাবীব উনার একজন দুর্বল উম্মত। আপনার মেহেরবাণী দ্বারা হয়ত আমাকে জানিয়ে দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন দাঁত মুবারকটি শহীদ হয়েছিলেন, নতুবা উনার যে দাঁত মুবারকটি শহীদ হয়েছিলেন, আমার সেই দাঁতটি ছিন্ন করে দিন। মুনাজাতের মধ্যে এইভাবে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করতে থাকলে, উনার মুখ মুবারক থেকে একটি কাঁচা দাঁত উনার হাতের মধ্যে পড়ে যায়। সে দাঁত মুবারকটি তিনি উহুদের ময়দানে দাফন করে দেন। সুবহানাল্লাহ!
পাগড়ী মুবারক লাভ:
তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফে পবিত্র রওজা পাক যিয়ারতে যান, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নিজের পবিত্র হাতে হুযূর ক্বিবলা উনার মাথায় পাগড়ী মুবারক পরিয়ে দেন। সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এক আশিক্ব মুরীদ (উনার নাম জনাব মনসুর ছাহেব; তিনি তখন সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন) উনার সঙ্গে ছিলেন। জনাব মুজিবুর রহমান ছাহেব (যিনি হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ ছিলেন এবং পরে যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন)-উনার বর্ণনা অনুযায়ী মনসুর ছাহেব এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছিলেন।
পবিত্র খানকা শরীফ স্থানান্তর:
১৯৭৬ ঈসায়ী সনের অক্টোবর মাসে হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি গেন্ডারিয়া লোহারপুল মসজিদ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে যাত্রাবাড়ীতে একটি নুতন বাড়ীতে খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। এ বাড়ীর জায়গা ছিল যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে একটু পশ্চিমে মেইন রোডের পাশে।
অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা:
তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যাত্রাবাড়ীতে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার পাগলা বাজারের সন্নিকটে একটি বিরাট মহল্লা তিনিই নামকরণ করেছেন “শাহী মহল্লা” হিসেবে। সেখানে তিনি সাধারণ কবরস্তান, মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে মসজিদ সংলগ্ন উনার পারিবারিক কবরস্তান রয়েছে। সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মাযার শরীফও এই পারিবারিক কবরস্তানেই রয়েছেন।
রিয়াজত-মাশাক্কাত:
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মুরীদগণকে সব সময় রিয়াজত মাশাক্কাতের জন্য উৎসাহ দিতেন। তিনি বলতেন: আগের যামানায় বড় বড় ওলী আউলিয়া হয়েছেন, এখন আর হতে পারবে না, এটা কোন কথা নয়। যে চেষ্টা করবে সেই লাভ করবে। হযরত বড় মুরশীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, এই সমস্ত মহান বুযুর্গগণ অপেক্ষা বড় ওলীআল্লাহ আর কেউ হতে পারবেন না, এই ধরণের কথা কোথাও লেখা নেই। তিনি মনে করতেন চেষ্টা তদবীর ও মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ রহমত হলে উনাদের অপেক্ষাও বড় ওলীআল্লাহ হওয়া সম্ভব। সুবহানাল্লাহ!
তিনি সব সময় মুরীদগণকে উচ্চ সাহস দিতেন। তিনি বলতেন: ইমামতি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত। সুতরাং নামাযের ইমামতি করতে ভয় করতে নেই। তিনি বলতেন: আমাদের সিলসিলা হক সিলসিলা। আমার পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা (ন’হুযূর ক্বিবলা) তিনি সুলতানুল আরেফীন। কাজেই যাঁরা উনার খাদিম এবং কায়িম মুকাম উনাদের শানও অতি উর্দ্ধে। সুবহানাল্লাহ!
দ্বীনী কাজে ব্যস্ততা:
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত কর্মব্যস্ত জীবন অতিবাহিত করেছেন। তিনি যখন মাদ্রাসা আলীয়ায় শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত ছিলেন, তখন একদিকে মাদ্রাসা আলীয়ার দায়িত্ব, অপরদিকে মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব, আবার মুরীদ মুতাকিদদের তা‘লীম তালকীন, যিকির আযকার, বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ নছীহত, লোকের বিভিন্ন তদবিরে, যেমন, তাবিজ, ঝাড়-ফুঁক, বাইয়াত করা, ইত্যাদির জন্য প্রতি দিন শত শত লোকের সঙ্গে সাক্ষাত উনার দৈনন্দিন জীবনের রুটিন ছিল। কারণ কর্মব্যস্ততা এত বেশী ছিল যে, পাঁচ মিনিট সময় বেশী ব্যয় করার অবকাশ ছিল না।
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হিজরী ১৪১৫ সনে, ১২ই জিলকদ শরীফ, ইয়াওমুল খামীস রোজ বৃহি®পতিবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে (১৩ই এপ্রিল, ১৯৯৫ ঈসায়ী) পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
তিন মাস পরেও পবিত্র জিসিম মুবারক অক্ষত:
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তিন মাস পরে উনার পবিত্র মাযার শরীফের অভ্যন্তরে পানি উঠে যায়। উনার মুরীদগণের মধ্যে কেউ কেউ স্বপ্নে দেখেন, তিনি উনার জিসিম মুবারককে আরো উঁচূ করে কবরস্থ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। অনেক বাদ-প্রতিবাদের পরে উনার পবিত্র মাযার শরীফ উম্মুক্ত করা হয়। দেখা গেল উনার কাফন মুবারক সহ জিসিম মুবারক অবিকৃত আছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার মাথা মুবারকের দিক থেকে এক অপূর্ব আতরের সুঘ্রাণ আসতে থাকে। সুবহানাল্লাহ! উনার এক আশিক্ব মুরীদ উনার হাঁটুর নিচের কাফনের কিয়দাংশ উম্মোচন করেন। দেখা গেল উনার জিসিম মুবারক হলুদ বর্ণ তৈলাক্ত অবস্থায় অবিকৃত আছেন, যা চিকচিক করছিলেন। তিন মাস পরেও এর কোন বিকৃতি ঘটেনি। অতঃপর পবিত্র মাযার শরীফকে আর একটু উঁচূ করে উনার জিসিম মুবারক রাখা হয়। উনার মাযার শরীফ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে পাগলা বাজার এলাকায় শাহী মহল্লায় অবস্থিত। নিকটে একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা ও একটি সাধারণ লোকদের কবরস্থান রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত খুলাফা ও মুরীদান:
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অনেক মুরীদ মুতাকিদ রয়েছেন এবং অনেক খলীফা এখনও বর্তমান আছেন। তবে উনার খাছ ও প্রধান খলীফা হচ্ছেন রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীকত, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, ইমামে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, জাব্বারিউল আউয়াল, ক্বাবিউল আউয়াল, আস-সাফফাহ, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা, হযরত ইমামুল উমাম আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
উনার মুবারক উসীলাতেই সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সিলসিলা ও শান মান এখনও যমীনে টিকে আছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। ইনশাআল্লাহ।
সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যত খলীফা ও মুরীদ রয়েছেন, তাদের মধ্যে উনার সাথে সবচেয়ে বেশী গভীর সুসম্পর্ক ছিল রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথেই। আর বর্তমানেও উনার সাথে রয়েছে পরিপূর্ণ রূহানী নিসবত বা সম্পর্ক। যা কেবল তাছাওউফে পূর্ণতাপ্রাপ্ত লোকদের পক্ষেই বুঝা ও অনুধাবন করা সম্ভব।
ব্যক্তিগত যোগ্যতা, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত চূড়ান্ত পর্যায়ের আদব-কায়দা, খাছ ইলমে লাদুন্নী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের হুবহু অনুসরণ ও দায়িমী তায়াল্লুক তথা অতুলনীয় ইলম, আমল ও ইখলাছে সন্তুষ্ট হয়ে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সম্মানে উনাকে নাম ধরে না ডেকে ‘শাহ ছাহিব’ বলে সম্বোধন করতেন। সুবহানাল্লাহ!
এমনকি সুলত্বানুল আরিফীন ঢাকা যাত্রাবাড়ি শরীফ উনার মহাসম্মানিত শাইখুল মাশায়েখ হযরত মুরশীদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সন্তুষ্ট হয়ে একথাও বলেছিলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি আমার জন্য উল্লেখযোগ্য কি করেছেন? আমি বলবো, হে মহান আল্লাহ পাক! যামানার মুজাদ্দিদ ও লক্ষ্যস্থল আপনার খাছ ওলী রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে রেখে এসেছি। ” সুবহানাল্লাহ!
জীবনের শেষ দিকে তিনি প্রায়ই রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রশংসা করতেন। একদা তিনি প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, “আমার শাহ ছাহেব হচ্ছেন রসূলে নোমা, তিনি যে কোন সময় যে কোন লোককে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার ঘটিয়ে দিতে পারেন। ” সুবহানাল্লাহ!
তিনি প্রায়শঃই স্বীয় মুরীদ-মু’তাকিদদের লক্ষ্য করে বলতেন, “সাবধান! তোমরা কেউ কখনো আমার শাহ ছাহেব উনার সাথে বেয়াদবি করবেনা। যে ব্যক্তি উনার সাথে বেয়াদবি করবে সে অবশ্যই হালাক হয়ে যাবে। ” সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ অসংখ্য অগণিত প্রশংসা তিনি নিজ যবান মুবারকে করেছেন, সেসবের অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী আজও বিদ্যমান রয়েছেন। যে কারণে যাত্রাবাড়ীর অনেক মুরীদ বর্তমানে রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে পুনরায় বাইয়াত গ্রহণ করেছেন ও করছেন। সুবহানাল্লাহ!
-আলহাজ্জ ছূফী সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)