হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-৫১)
, ১৮ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ভিত্তি বা প্রধান ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) পবিত্র কলিমা শরীফ বা ঈমান, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব (৫) পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা।” অতঃপর পুরুষদের জন্যে ৬ষ্ঠ ফরয হচ্ছে হালাল কামাই করা। আর মহিলাদের জন্যে ৬ষ্ঠ ফরয হচ্ছে পর্দা করা। যা ফরযে আইন। পঞ্চম হিজরী সনে পবিত্র যিলক্বদ শরীফ মাসের ৮ (আট) তারিখ পর্দা ফরয করা হয়। তাই উক্ত মাসের আট তারিখ দিবসটিকে ‘বিশ্ব পর্দা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে পর্দার আহকাম
মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার বহু স্থানে পর্দা করার ব্যাপারে সরাসরি নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে পর্দা ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।
এক.
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
অর্থঃ- “আয় মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার মহাসম্মানিত হযরত আযওয়াজে মুতহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে ও মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে এবং মু’মিনগণের আহলিয়া বা স্ত্রীগণকে বলুন, উনারা যেন উনাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেন। এতে উনাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে উনাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ-৫৯)
এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যে, যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে, তখন যেন ওড়না কিংবা চাদর টেনে স্বীয় মুখম-ল আবৃত করে। আর চলাফেরার সুবিধার্থে যেন শুধু এক চোখ খোলা রাখে । [ফাতহুল বারী : ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪/
দুই.
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا
অর্থঃ- তোমরা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং উনাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়া এবং উনার বিদায় বা বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার আযওয়াজে মুতহ্হারাত অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারো জন্য জায়িয নয়। মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ- ৫৩)
এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দার হুকুমের বাইরে নয়। হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের আমল মুবারক তাই প্রমাণ করে। এখানে একটি বিষয় স্মরণযোগ্য যে, এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যেহেতু পর্দার হুকুমকে খোদ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এমনকি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের জন্যও অধিকতর পবিত্রতার উপায় বলা হয়েছে, সেহেতু উম্মতের কারো জন্যই এই হুকুমের বাইরে থাকার সুযোগ নেই।
তিন.
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
অর্থঃ- “(আমার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব-মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মু’মিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অধিক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে মহান আল্লাহ পাক তিনি তা অবহিত রয়েছেন। (আমার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব-মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) ঈমানদার নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে; তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছাসত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ/ ৩০,৩১)
উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে পুরুষ ও মহিলা উভয়কে পর্দার আদেশ করা হয়েছে। তাছাড়া দ্বিতীয় পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত اِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا অর্থাৎ ‘সাধারণত যা প্রকাশ হয়ে থাকে' এর অর্থ হচ্ছে কাপড়। যা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। (তাফসীরে তাবারী ১৮ : ১১৯)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রদত্ত এই ব্যাখ্যা অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখম-লসহ সমগ্র দেহ আবৃত রাখা আবশ্যক ।
চার.
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ
অর্থ: নারীরা যেন তাদের বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখে। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ- ৩১)
এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথম শ্রেণির মুহাজির নারীদের প্রতি দয়া করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন তখন উনারা নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করেছিলেন। (বুখারী শরীফ)
পাঁচ.
وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: নারীরা যেন তাদের গোপন আবরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে তওবা করো, অবশ্যই তোমরা সফলকাম হবে।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ/ ৩১)
এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ থেকে জানা যায় যে, যেসব পোশাক পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে তা থেকে বিরত থাকা ঈমানদার নারীর কর্তব্য। তাই পরপুরুষকে নূপুরের আওয়াজ শোনানোর উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ নিষেধ। শুধু তাই নয়, এতে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, যেসব কাজ, ভঙ্গি ও আচরণ এর চেয়েও বেশি আকৃষ্ট করে তাও নিষিদ্ধ । মুসলিম নারীদের জন্য এটি মহান আল্লাহ পাক উনার এক মহান শিক্ষা।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)