একটি বিভ্রান্তিকর প্রচারণার দলিলভিত্তিক জবাব:
হিজরী ৭ম শতাব্দীর ভারতের রতন আল হিন্দী কি ছাহাবী ??? (৩)
, ০৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কে এই রতন আল হিন্দী?
নামটা অনেকের কাছে অপরিচিত মনে হলেও ৭ম হিজরী শতক পরবর্তী সময়ে এটা বড় ফিতনার কারণ ছিলো। যে কারণে হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ ৩য় খন্ড ৪৬৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-
حتى نبغ بالهند بعد خمس مائة عام بابا رتن، فادعى الصحبة، وآذى نفسه، وكذبه العلماء، فمن صدقه في دعواه، فبارك الله في عقله، ونحن نحمد الله على العافية
সর্বশেষ ছাহাবীর ইন্তেকালের পাঁচশ বছর পর বাবা রতন নামে এক ব্যক্তি হিন্দুস্তানে আত্মপ্রকাশ করলো এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছে বলে দাবি করলো। এতে সে নিজেকে লজ্জিত করলো। উলামায়ে কিরামগণ তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলেন। এরপরও যে ব্যক্তি তাকে সত্য মনে করে আমরা শুধু তার আক্বল-বুদ্ধির জন্য দুআ করতে পারি। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে আমাদেরকে (এ ধরনের ভ্রান্ত দাবি করা থেকে) নিরাপদ রেখেছেন সেজন্য আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর আদায় করি। ’
হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত কিতাবে আরো লিখেন-
رتن الهندي، شيخ كبير، من أبناء التسعين. تجرأ على الله، وزعم بقلة حياء أنه من الصحابة، وأنه ابن ست مائة سنة وخمسين سنة، فراج أمره على من لا يدري. وقد أفردته في (جزء) ، وهتكت باطله، بلغني أنه توفي في حدود سنة اثنتين وثلاثين وست مائة، وأن ابنه محمودا بقي إلى سنة تسع وسبع مائة، فما أكثر الكذب وأروجه!
রতন হিন্দী। বয়োবৃদ্ধ এক ব্যক্তি। সে মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে দুঃসাহসিকতা প্রদর্শন করেছে। নির্লজ্জ হয়ে সে নিজেকে ছাহাবী দাবি করেছে। দাবি করেছে তার বয়স সাড়ে ছয়শ বছর। তার এই দাবি অজ্ঞ লোকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আমি একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা লিখেছি। তাতে তার বাতিল দাবিগুলো খ-ন করেছি। বলা হয়, তার মৃত্যু হয়েছে ৬৩২ হিজরীর দিকে। তার ছেলে মাহমুদ নাকি ৭০৯ হিজরী পযন্ত জীবিত ছিল। হায়! কি কঠিন মিথ্যা! এই মিথ্যার আবার কি প্রচার। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ২২/৩৬৭- জীবনী নম্বর ২৩১)
হযরত ইমাম ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব ‘জামিউল মাসানীদি ওয়াস সুনান’ ৩/৩৭৬ লিখেন-
أما رتن الهندي فادعي له صحبة في حدود الست مائة، ورووا عنهُ نُسخة موضوعة لا أصل لها، ولا وجود لهذا المذكور بالكلية، بل هو شيء افتعله بعض الجهّالة
ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে রতন হিন্দী সম্পর্কে দাবি করা হয়েছে যে, সে নাকি ছাহাবী। লোকেরা তার থেকে একটি জাল পুস্তিকাও বর্ণনা করেছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। বাস্তবে ঐ ব্যক্তিরই কোনো অস্তিত্ব¡ নেই। এসব কিছু মূর্খ লোকদের রটনা মাত্র।
হযরত সালাহুদ্দীন আলাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৭৬১ হিজরী) তিনি লিখেন-
كما قد أولع كثير في هذه الأزمان بحديث رتن الهندي الذي ادعى الصحبة وأنه عاش إلى نحو الست مائة والخمسين. ولعله لا وجود له البتة. ووضعت عليه هذه الأحاديث.
وإن كان له وجود وقد ادعى مثل ذلك، فهو كذاب قطعاً لا يستريب أحد من علماء أهل الأثر في ذلك.
বর্তমান সময়ের অনেকে রতন হিন্দীর ঘটনাকে আলোচনার বিষয় বানিয়ে নিয়েছে; যে নাকি ছাহাবী হওয়ার দাবি করেছে। আরো দাবি করেছে, সে নাকি সাড়ে ছয়শ বছর ধরে বেঁচে আছে। সম্ভবত বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। এসব ঘটনা তার সম্পর্কে বানানো হয়েছে। আর যদি বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব¡ থেকে থাকে এবং সে এমন দাবি করে থাকে তাহলে তো সে নিশ্চিত মিথ্যুক। সুন্নাহ সম্পর্কে অভিজ্ঞ কোনো আলেম এ বিষয়ে কোনো সন্দেহে পড়তে পারে না। (তাহকীকু মুনীফির রুতবাহ লিমান সাবাতা লাহু শারীফুস সোহবাহ ৫৯ পৃষ্ঠা)
এছাড়া হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত যয়নুদ্দীন ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত নাসিরুদ্দীন দিমাস্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাজদুদ্দীন ফাইরোযাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শামসুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অনেক মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা রতন আল হিন্দীর ছাহাবী হওয়ার দাবিকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রমাণ করেছেন।
শুধু তাই না হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি রতন লালের ছাহাবী হওয়ার বিষয়টা মিথ্যা প্রমাণ করতে একটি স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেন, যার নাম দেন كسر وثن رتن ‘কাসরু ওয়াসানি রতন’।
সুতরাং প্রমাণ হলো, সাতশ হিজরী শতকের ভারতীয় রতন আল হিন্দীকে ছাহাবী বানানো চরম মিথ্যাচার ও মূর্খতার পরিচায়ক। সেই সাথে হাদীছ শরীফের বিরোধিতা ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার বিরোধিতার নামান্তর। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
-আল্লামা খাজা মুহম্মদ নূরুদ্দীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)