হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হিকমত এবং ঈমানদীপ্ত অভিযান
, ০৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৮ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে পারস্য বিজয়ের জন্য যে অভিযান পরিচালিত হয়, তার সেনাপতি এবং দায়িত্বশীল হিসেবে মনোনীত হন দ্বীন ইসলাম উনার বীর সিপাহসালার হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
সে সময় পারস্যের শাসক ছিলো ইয়াজদ গের্দ এবং তার প্রধান সেনাপতি ছিল রুস্তম। হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম ফৌজ নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং কাদেসিয়া নামক স্থানে অবস্থান নিলেন। সেখান থেকে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার দিক নির্দেশনা মুতাবিক পারস্য শাসক এবং তার সেনাপতি রুস্তমের কাছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত নিয়ে একটি প্রতিনিধি দলকে পাঠালেন।
পারসের শাসক পূর্ব থেকে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি এবং শক্তিমত্তার দ্বারা প্রতিনিধি দলকে প্রভাবান্বিত করতে চাইলো। এমনকি অনেক ধন-সম্পদের লোভ দেখিয়ে বললো- আপনারা এসব নিয়ে স্বদেশে চলে যান। মুসলিম প্রতিনিধি দল তার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে বললেন- আপনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করুন অথবা জিজিয়া মেনে নিন, নতুবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। পারস্যের শাসক এমন দ্যর্থহীন প্রস্তাব শুনে রেগে গিয়ে বললো, আমি আপনাদের কোন শর্তই মানি না, আমার সেনাপতি রুস্তম আসছে, সে আপনাদের সকলকে কাদেসিয়ার রণাঙ্গনে পরাজিত করবে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিস্তারিত অবগত হয়ে মুসলিম বাহিনীকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন এবং সবার মাঝে জজবাপূর্ণ ঈমানদীপ্ত খুৎবা মুবারক দিলেন। উনার ঈমানদীপ্ত খুৎবা মুবারকে মুসলিম বাহিনীর ঈমানদীপ্ত জজবা বিশাল আকার ধারণ করলো। আল্লাহু আকবার তাকবীর মুবারকে মুসলিম বাহিনী বীরদর্পে পারস্য বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। পারস্য বাহিনী এত অধিক হাতীর পাল নিয়ে এসেছে যাতে করে প্রথম দিন মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা থেকে বিরত থাকলেন। পরদিন হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নির্দেশনা মুতাবিক মুসলিম বাহিনী বিশেষ হিকমত অবলম্বন করলেন। মুসলিম বাহিনীর উটগুলোকে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলা হলো। এতে করে উটগুলো হাতীর চেয়ে বিশাল বড় আজব ভয়ঙ্কর আকৃতিতে রূপান্তর হলো। পারস্য বাহিনীর সমুদয় ঘোড়াগুলো মুসলিম বাহিনীর মাঝে এমন আজব প্রাণী দেখে প্রাণভয়ে দিকবিদিক পালাতে থাকে।
তৃতীয় দিন হস্তীবাহিনী নিয়ে পারস্য বাহিনী ফের অগ্রসর হয়। এদিন হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঘোষণা করে দিলেন, ‘যে করেই হোক এই হস্তিবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। তাহলেই বিজয়ের পতাকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে।’ তিনি বিশিষ্ট তিন বীর মুজাহিদকে এ কাজের জন্য বিশেষভাবে নিযুক্ত করলেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে উনাদেরই একজন বীর বিক্রমে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে শ্বেতবর্ণের একটি হাতীর শুঁড়ের উপর এমনভাবে তরবারীর আঘাত হানলেন যাতে হাতীটির শুঁড় ছিন্ন হয়ে গেল। বিকট আর্তনাদ করে হাতিটি পলায়ন করলো। তার দেখাদেখি বাকি সব হাতিগুলো একযোগে পালিয়ে গেল। এতে মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর শক্তি সাহস নব উদ্যেমে জেগে উঠলো। মুজাহিদ উনাদের তাকবীর ধ্বনিতে কাদেসিয়ার রণপ্রান্তর কেঁপে উঠলো।
পারস্য সেনাপতি রুস্তম রনাঙ্গনের পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করতে লাগলো। এ সময় সে একটি পরীখা তথা খালের মধ্যে লাফিয়ে পড়লো, যাতে সাতরিয়ে পালাতে পারে। কিন্তু একজন বীর মুজাহিদ লাফিয়ে পড়ে রুস্তমের পা ধরে টানতে টানতে উঠিয়ে নিলেন এবং তরবারীর প্রচ- আঘাতে তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন। রুস্তমের মৃত্যুর সাথে সাথে পারস্য বাহিনী পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে পালাতে শুরু করলো। অবশেষে কাদেসিয়ার ময়দানে পারস্য শাসকের অহংকার, বাহাদুরী শ্রেষ্ঠত্বের কবর রচিত হলো। মুসলিম বাহিনী বরাবরের মতো এবারো সুদূরপ্রসারী ইতিহাসখ্যাত বিজয় অর্জন করলেন। (সুবহানাল্লাহ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মসজিদ নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার অশ্লীলতাই হারাম
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)