ক্বাদিরিয়া সিলসিলার আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের জীবনী মুবারক
হযরত শায়েখ আবুল হাসান হাক্কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বিলাদত শরীফ: ৪০৯ হিজরী (১০১৭ খ্রিস্টাব্দ) বিছাল শরীফ: ৪৮৬ হিজরী (১০৯২ খ্রিস্টাব্দ) বয়স মুবারক: ৭৭ বছর
, ৪রা রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৬ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ৫ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ১৮ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পরিচিতি:
উনার নাম মুবারক হযরত আলী বিন মুহম্মদ বিন জা’ফর আল-হাক্কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত শায়েখ আবুল ফাররাহ মুহম্মদ তারতুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতে বাইয়াত ছিলেন। তিনি উনার নিজের যামানায় কাশফ ও কারামত সম্পন্ন শায়েখ ছিলেন। হিজরী ৪৮৬ সনের মুহররমুল হারাম শরীফ মাসে তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। (সফিনাতুল আওলিয়া)
অন্যান্য ঘটনাবলী:
উনার নাম মুবারকের ব্যাপারে অনেক মত-বিরোধ দেখা যায়। তবে যেহেতু অধিকাংশ লোকের ঐক্যমত এই যে উনার নাম আলী বিন মুহম্মদ, সুতরাং ইহাই উনার আসল নাম ধারণা করা যায়। উনার কুনিয়াত বা উপনাম আবুল হাসান। উনার নসব শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে গিয়ে মিলে। (জিকরে হাসান, আল্লামা গোলাম দস্তগীর, তাজকিরায়ে মাশায়েখে ক্বাদেরিয়া বারকাতিয়া রিজভিয়া)
হিজরী ৪০৯ সনে (১০১৭ খ্রিস্টাব্দে) আব্বাসীয়া খলীফা আল-কাদীর বিল্লাহ্র সময় হাক্কার নামক স্থানে তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। হাক্কার মুসেলের নিকটবর্তী একটি গ্রামের নাম। সেজন্যই উনাকে হাক্কারী বলা হয়ে থাকে। (ওয়াফায়াতুল আ’লাম, মাসালিকুছ ছালেকীন, তাজকিরায়ে মাশায়েখে ক্বাদেরিয়া বারকাতিয়া রিজভিয়া)
উনার তা’লীম ও তারবীয়ত সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনে খালিকান লিখেছেন যে, তিনি উনার যামানার শ্রেষ্ঠতম ওলামা ও মাশায়েখদের দরবার শরীফে গিয়ে পরিপূর্ণ আদবের সঙ্গে ইলমে জাহির ও ইলমে বাতেন হাছিল করেন। মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও অন্যান্য ইলিমে তিনি পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেন।
তিনি হযরত শায়েখ আবুল আলা মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গেও সাক্ষাত করেন এবং উনার নিকট থেকে মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ শ্রবণ করেন। তিনি হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহানী ফয়েজ প্রাপ্ত হন। এমনকি উনার যামানায় তিনি শায়খুল ইসলাম হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি ছিলেন উনার সময়ের এক অনন্য-সাধারণ আলিম, ফাযিল। (আদ দুররুল মুনাজ্জিম ফী মানাকিবে গাউছে আ’যম, তাজকিরায়ে মাশায়েখে ক্বাদেরিয়া বারকাতিয়া রিজভিয়া)
হযরত শায়েখ আবুল হাসান হাক্কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন তরীক্বতের ইমাম, হাক্বীক্বতের গুপ্ত ভেদে পূর্ণ জ্ঞানী, সম্মানিত শরীয়ত উনার পূর্ণ পাবন্দ। তিনি প্রথমে উনার বুযূর্গ পিতা হযরত শায়েখ মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবতে থাকেন। পরে হযরত শায়েখ আবুল ফাররাহ মুহম্মদ তারতুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতে বাইয়াত হন। তিনি উনার একজন বিশিষ্ট খলীফা ছিলেন। তিনি একজন অসামান্য রুহানী শক্তি সম্পন্ন ওলী ছিলেন। তিনি মুরীদগণকে অতি অল্প সময়ে মনজিলে মকসুদে পৌঁছে দিতেন। হযরত শায়েখ আবূ সাঈদ মুবারক মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শায়েখ আবুল হাসান হাক্কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারই হাতে বাইয়াত হন এবং উনার খিদমতে ১৮ বছর অতিবাহিত করেন, আবার তিনি ছিলেন গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।
তিনি উনার যামানার ইলমে শরীয়ত ও তরীক্বতের ইমাম থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত ইবাদত গুজার ছিলেন। এই ব্যাপারে সকল ঐতিহাসিক একমত যে, তিনি সব সময় “ছায়েমুদ্দাহর” (সর্বদা রোযাদার) এবং “ক্বিয়ামুল লাইল” (সর্বদা রাত্রি জাগরণ করে ইবাদতকারী) ছিলেন। প্রতি তিন দিন পর পর তিনি খাদ্য গ্রহণ করতেন। আর উনার “ক্বিয়ামুল লাইল” -এর অবস্থা এইরূপ ছিলো যে, তিনি ইশার নামাযের পরই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শুরু করতেন এবং তাহাজ্জুদ নামাযের পূর্বেই দুই খতম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পড়া হয়ে যেত।
আনওয়ারে ছুফিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে যে, তাহাজ্জুদ নামায পর্যন্ত তিনি দশ খতম মহাসম্মানিত কুরআন শরীফ পড়া শেষ করতেন। সুতরাং দেখা যায় তিনি ইশার নামাযের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাযের সময় পর্যন্ত অনবরত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন। (আনওয়ারে ছুফিয়া, মাসালিকুস সালেকীন, তাজকিরায়ে মাশায়েখে ক্বাদেরিয়া বারকাতিয়া রিজভিয়া) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












