হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনাসমূহের দাঁতভাঙ্গা জাওয়াব-৩
, ০৪ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত ও মর্যাদা:
এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমমর্যাদা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের কোন উম্মতই লাভ করতে পারবে না। কেননা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কালামুল্লাহ শরীফ অধ্যায়ন করেন। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক পরবর্তী উম্মতের জন্য মনোনীত এবং ঘোষিত হয়েছেন আদর্শ পথপ্রদর্শক এবং সত্যের মানদ-রূপে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের উনারাই প্রথম সূত্র। পরবর্তী উম্মত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা, ভাষ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিচয় মুবারক, ইলিম মুবারক, পবিত্র আদর্শ মুবারক দ্বীন ইসলামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উনাদেরই মাধ্যমে লাভ করেছেন। সুতরাং, প্রতিষ্ঠিত ঐক্যমত উপেক্ষা করা বা এর স্বকীয়তা বিনষ্ট করার অর্থই হলো ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হওয়া।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি মুহব্বত রাখা, উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। উনাদের ইত্তিবা বা অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, উনাদের সমালোচনা করা, নাক্বিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণই কুফরী। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা কুফরী ও গোমরাহী।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّار
“একমাত্র কাফিররাই উনাদের প্রতি অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।” (পবিত্র সূরা ফাত্হ্ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
এ পবিত্র আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ غَاظَ أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ كَافِرٌ
“যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়ায ফী শরহে শিফা লি ক্বাযী আয়ায)
অতএব, প্রত্যেককেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে, উনাদেরকে মুহব্বত ও যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করতে হবে এবং উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না, উনাদের কোনরূপ সমালোচনা করা যাবে না ও উনাদেরকে নাক্বিছ বা অপূর্ণ বলা যাবে না। কারণ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ প্রমাণ করে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে এবং সর্ব বিষয়ে সুক্ষাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ অনুকরণ করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো-
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, একদিন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত নূরুল ফখর মুবারক অর্থাৎ না’লাইন শরীফ বা সেন্ডেল মুবারকসহ মসজিদে নামায আদায় করছিলেন, এমন সময় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার না’লাইন শরীফে নাপাকী রয়েছে।” তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি না’লাইন শরীফ খুলে ফেললেন। সাথে সাথে উপস্থিত সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও না’লাইন খুলে ফেললেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “এ হুকুম আপনাদের জন্য নয়, এটা আমার জন্যে খাছ।”
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যা করতে দেখতেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাই করতেন। আর তিনি যা বর্জন করতেন, উনারাও তা বর্জন করতেন। কখনো কি ও কেন প্রশ্ন করতেন না। যেমন, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও স্বর্ণের আংটি বানিয়ে ব্যবহার করা শুরু করলেন।
পরবর্তীতে স্বর্ণ ব্যবহার পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ হারাম হওয়ার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আংটিটি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, “আমি আর কখনও এটা ব্যবহার করবো না।” তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই উনাদের আংটিগুলো খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।
এটাই ছিল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণের নমুনা। এ রকম হাজারো ঘটনা মুবারকের দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। অথচ সেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বুযুর্গী-সম্মান, ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে অনেকেই বেখবর।
-সংকলিত
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)