সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (১)
, ১৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে এবং পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে, এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই। এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীনসহ চার মাযহাবের এমন একজন ইমাম মুজতাহিদ কোথাও কেউ এমন কথা বলেন নাই যে, “সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে ঈদ পালন করতে হবে ও রোযা শুরু করতে হবে”।
কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয় ও অস্ত স্থলের ভিন্নতাকে গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে, কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে ঈদ পালন করতে হবে ও রোযা শুরু করতে হবে। এবং নিজেরাও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ কোনটাই পালন করেন নাই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, শুধুমাত্র পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ পালন করাই কি সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্দেশ? যার কারণে শুধু এই দুইটাকেই সারা বিশ্বে একই দিনে পালন করার জন্য দাবি তোলা হচ্ছে। অথচ এ ধরনের নির্দেশিত ইবাদত আরো রয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত পবিত্র ছলাত আদায়, পবিত্র ছলাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করা, নির্দিষ্ট মাকরূহ সময়ে পবিত্র ইবাদত থেকে বিরত থাকা, নির্দিষ্ট সময়ে পবিত্র ঈদাইন উনার ছলাত আদায় করা, নির্দিষ্ট সময়ে পবিত্র কুরবানী করা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাহরী করা, নির্দিষ্ট সময়ে ইফতার শুরু করা ইত্যাদি। এ ধরনের হাজারো নির্দেশিত ইবাদতসমূহ আদায়ের ক্ষেত্রে একইদিনের দাবি না করে শুধু পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ পালন করতে সারাবিশ্বে একই দিনে দাবি করা, এটা এমন এক শ্রেণীর মুর্খ-গোমরাহ লোকদের গোমরাহী ও কুফরী বক্তব্য যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানগণ উনাদের পবিত্র ইবাদত বন্দেগীসমূহ নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এবং এরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মিথ্যা অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানগণ উনাদের মাঝে ফেৎনা সৃষ্টি করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায়।
মুর্খ-গোমরাহদের কতিপয় খোঁড়াযুক্তির সংক্ষিপ্ত জবাব:
“যে কারণে প্রতি বৎসর একই তারিখ ও বারে পবিত্র রোযা শুরু ও ঈদ পালন করা সম্ভব নয়, সেই একই কারণে সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করাও সম্ভব নয়”
সারা বিশ্বের প্রত্যেক অঞ্চল ও প্রত্যেক দেশের স্থানীয় সময় ভিন্ন ভিন্ন। তাই প্রত্যেক অঞ্চল ও দেশের লোকেরা তাদের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পবিত্র ছলাত আদায় করে, পবিত্র রোযা শুরু ও শেষ করে, পবিত্র ঈদসহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগী করে থাকে।
বলাবাহুল্য যে, যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সকল মানুষকে যদি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় তাহলে কোন মানুষ কি ভিন্ন দিনে ঈদ করবে? তখন সকলেই বলবে না। মূলতঃ স্থানগত দূরত্বের কারণেই সময়ের পার্থক্য হয় এবং দিনের পার্থক্য হয়। সময় ও দিনের পার্থক্যের মূল কারণ দূরত্ব। স্থানগত দূরত্ব না হলে সময়ের যেমন কখনো পার্থক্য হতোনা তেমনি দিনেরও কখনো কোথাও পার্থক্য হতোনা। অর্থাৎ যে কারণে সময়ের পার্থক্য হয়, সে কারণেই দিনের পার্থক্য হয়। যে কারণে সময়ের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য হয়, সে কারণেই দিনের পার্থক্য গ্রহণ করা ফরয।
মোট কথা: কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য হয় আর বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য হয়।
অন্যভাবে বলা যায় যে, কম দূরত্বের কারণে যদি একই দেশে ৩ মিনিট, ৫ মিনিট, ৭ মিনিট, ১০ মিনিট ইত্যাদি সময়ের পার্থক্য গ্রহণ করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পবিত্র রোযা উনার সাহরী ও ইফতারী এবং পাঁচ ওয়াক্ত ছলাতসহ অন্যান্য ইবাদত করা ফরয হয়। তাহলে বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য হওয়াতে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন।
অপরদিকে, পবিত্র কুরআন শরীফে সাহরী ও ইফতারীকে এবং পবিত্র হাদীছ শরীফে পবিত্র রোযাকে একই ধরনেরই আম বা শর্তহীন নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও বিরোধীরা শুধু صوموا (ছূমূ) শব্দ দ্বারা রোযাকে আম নির্দেশ প্রচার করে, সারাবিশ্বে একই দিন দাবি করে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফে সাহরী ও ইফতারীকে একই আম শব্দ كُلُوا وَاشْرَبُوا তোমরা সাহরী খাও ও পান করো এবং পবিত্র ইফতারী করাকে أَتِمُّوا তোমরা পূর্ণ করো এই শব্দগুলির আম নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উক্ত আম শব্দগুলির আম নির্দেশ অনুসারে তারা সারাবিশ্বে একই সময়ে পবিত্র সাহরী ও ইফতারী করার দাবি করে না। যার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, তারা একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু ও পবিত্র ঈদ পালনের নামে মুসলমানদের পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ উনাকে নষ্ট করার কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
সাহরীর সময়ের সম্পর্ক হলো ছুবহে ছাদিক ও ছুবহে কাযিবের সাথে। সারাবিশ্বে একই সময়ে ছুবহে কাযিব ও ছুবহে ছাদিক উদয় হয়না ও অস্ত যায়না। তা সত্ত্বেও তারা ছুবহে কাযিব ও ছুবহে ছাদিক অর্থাৎ ফজরের উদয়স্থলের ভিন্নতাকে মান্যকরে সারাবিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পবিত্র ফজর উনার ছলাত আদায় করে। অথচ পবিত্র ঈদ ও রোযার ক্ষেত্রে চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতাকে অস্বীকার করে। এটাই হলো তাদের মুনাফিক্বীর প্রমাণ।
তাদের আরেকটি খোঁড়াযুক্তি হলো: যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে পূর্বে কেউ একই দিনে ঈদ করতে পারেন নাই, এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন সমস্যা নাই। সে কারণে বর্তমানে একই দিনে করতে হবে।
এটা তাদের খোঁড়াযুক্তি ও বানানো মিথ্যা দাবি। কেননা যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা বা ওজরের কারণে উনারা করতে পারেন নাই, এমন ধরনের কথা উনাদের কেউ কোথাও কোনদিনও বলেন নাই। এগুলো তাদের মনগড়া ও ভিত্তিহীন গোমরাহী উক্তি।
পূর্ববর্তীগণ উনাদের একই দিনে ঈদ করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন সমস্যা ছিলনা, তার প্রমাণ:
ধরে নিলাম পবিত্র রোযা শুরু হয়েছে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার এক তারিখে, তাহলে সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ করতে গেলে উনাদেরকে ২৯ বা ৩০শে রমাদ্বান শরীফ উনার পূর্বে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ প্রেরণ করতে হবে। তাই ২৮ বা ২৯ দিনে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ প্রেরণ করাটা সর্বকালেই সহজ ও সম্ভব ছিল।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যামানায়ও ২৯ বা ৩০শে রমাদ্বান শরীফ উনার পূর্বে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ প্রেরণ করাটা অবশ্যই সম্ভব ছিল। যা হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ তার অকাট্য প্রমাণ। অর্থাৎ শাম অঞ্চলের চাঁদ দেখার সংবাদ পবিত্র মদীনা শরীফে পবিত্র ঈদুল ফিতরের অনেক পূর্বেই পৌঁছে ছিলো, তা সত্ত্বেও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীগণ একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করেন নাই। বরং উনারা ভিন্ন দিনে ঈদ পালন করার দ্বারা প্রমাণ করলেন যে, ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ করা ও রোযা পালন করাটাই মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্মানিত নির্দেশ মুবারক। যা পালন করা ফরয।
উক্ত বিষয়টি স্পষ্ট করেই হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলে দিলেন-
فَلَا نَزَالُ نَصُوْمُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلَاثِيْنَ اَوْ نَرَاهُ
অর্থ: আমরা পবিত্র রোযা রাখতে থাকবো যতক্ষণ না ৩০ দিন পূর্ণ হয় অথবা যতক্ষণ না নতুন চাঁদ আমরা নিজেরা দেখব।
অর্থাৎ তিনি একা রাখবেন না বা দেখবেন না, বরং তিনিসহ সকল মদীনাবাসীগণ একদিন পর পবিত্র ঈদ পালন করবেন। যার কারণে পবিত্র দ্বীন ইসলামে বলা হয়-
اِخْتِلَافُ الْمَطَالِعِ لَمُعْتَتَرٌ
অর্থাৎ নতুন চাঁদ উদয়ের ক্ষেত্রে দেখার ভিন্নতা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।
সে কারণে অবশ্যই ভিন্ন দিনেই পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। নচেৎ পবিত্র ঈদ ও রোযা কোনটাই আদায় হবেনা বরং অসময়ে পবিত্র ঈদ ও রোযা পালন করা জায়িয মনে করার কারণে কুফরী হবে। এবং অসময়ে পবিত্র ঈদ ও রোযা পালনকারীরা ফেৎনাবাজ ও মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে এবং মুরতাদের অন্যান্য হুকুমও তাদের উপর বর্তাবে।
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)