সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ আ’শার আলাইহাস সালাম
, ১৬ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৭ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُهٗ اُمَّهٰتُهُمْ.
অর্থ: মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট তাঁদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাতা আলাইহিন্নাস সালাম।” (সুরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
এই পবিত্র আয়াত শরীফে দু’টি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বাধিক প্রিয়। উনাকে সমস্ত কিছু হতে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করতে হবে। মনে প্রাণে উনাকে মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে মেনে নিতে হবে। উনার মুবারক শানে বিন্দু হতে বিন্দুতম মুহব্বত ও আদবের ঘাটতি হলে ঈমানদার থাকা সম্ভব হবেনা। দ্বিতীয়ত, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরও সব কিছু থেকে বেশি মুহব্বৎ করতে হবে। এবং উনাদেরকে মহাসম্মানিতা মাতা হিসেবে মেনে নিতে হবে। উনাদের মুবারক শানেও বিন্দু পরিমাণ বেয়াদবী করলে ঈমানহারা ও লা’নতগ্রস্ত হয়ে চির জাহান্নামী হতে হবে। কাজেই, কথাবার্তা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, বলাবলি, লেখা-লেখিসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমগ্র জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের জীবনী মুবারক জানা, মুবারক শানে সর্বোচ্চ আদব রক্ষা করা এবং প্রকাশ করা সকলের জন্যই ফরযে আইন বা অত্যাবশকীয়।
উল্লেখ্য যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন মোট ১৩ জন। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার মুবারক ধারাবাহিকক্রম অনুযায়ী সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন ১৩তম। ।
পরিচিতি মুবারক
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নাম মুবারক হযরত মাইমূনাহ আলাইহাস সালাম। তিনি বনু হিলাল গোত্রে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক হযরত হারিছ বিন হাযান আলাইহিস সালাম। সম্মানিতা মাতা উনার নাম মুবারক হযরত হিন্দা বিনতে আওফ আলাইহাস সালাম। (তাবাক্বাত, আনসাবুল আশরাফ)
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার পূর্ব নাম মুবারক ছিলেন হযরত র্বারা আলাইহাস সালাম। উনার এই নাম মুবারক পরিবর্তন করে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম রাখেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের খালা ছিলেন।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার পূর্ব আহালের নাম আবু রুহম বিন আবদুল উয্যা এবং তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া হযরত উম্মুল ফদ্বল লুবাবা আল-কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার আপন বোন ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (উসুদুল গাবা)
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, সুলত্বানুন নাছীর, আল ক্বউইউল আউওয়াল, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বইয়ূমুযযামান, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত নবুওয়ত প্রকাশের ৩১ বছর পূর্বে পবিত্র মাহে রজবুল হারাম শরীফ উনার ৩ তারিখ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদুল আইয়াম শরীফ অর্থাৎ পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পবিত্র মক্কা শরীফে তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার দু’টি শাদী মুবারক হয়েছিলেন। প্রথম আহাল উনার সাথে উনার জুদাই হয়ে যায়। দ্বিতীয় আহাল আবু রুহম ইবনে আবদুল উয্যা ৭ম হিজরীতে ইনতিকাল করেন। আবু রুহমের ইনতিকালের পর ৭ম হিজরী সনের পবিত্র মাহে জিলক্বদ শরীফ উনার ১৬ তারিখ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল অযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বাযায়-উমরা পালন করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে তাশরীফ আনয়ন করেছিলেন। উমরা আদায়ের পর পবিত্র মদীনা শরীফে ফেরার পথে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে ১০ মাইল দূরে সারাফ নামক মনযিলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশ্রাম মুবারক গ্রহণ করেন।
হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার একটি বর্ণনায় জানা যায়, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র উমরা আদায়কালীন সময় পবিত্র মক্কা শরীফে। তিনি পবিত্র উমরা পালন উপলক্ষে তিন দিন সেখানে অবস্থান করেন।
তৃতীয় দিনে হুয়ায়তিব ইবনে আবদিল উয্যাসহ আরো কয়েকজন কুরাইশ ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে দেখা করে বলে, হুদায়বিয়ার চূক্তি অনুযায়ী আপনার অবস্থানের মেয়াদ আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে আরো অল্প কিছু সময় অবস্থান করলে তোমাদের এমন কি অসুবিধা হবে? ইতিমধ্যে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার সাথে আমার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে ওলীমা মুবারক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারতাম। আর তোমরাও ওলীমা মুবারক উনার খাবারে শরীক থাকতে পারতে? তারা বলল: যেহেতু সময় শেষ হয়ে গেছে, সেহেতু কি করে অবস্থান মুবারক করবেন। অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বেরিয়ে এসে পবিত্র “সারাফ” নামক স্থানে একটি তাঁবুতে অবস্থান মুবারক করতে থাকেন। এই পবিত্র স্থানেই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম মুবারক তাশরীফ আনয়ন করেন এবং উনাদের সাক্ষাত মুবারক হন। সুবহানাল্লাহ! (সীরতে ইবনে হিশাম)
বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছিলেন: হযরত মায়মুনা বিনতুল হারিছ আলাইহাস সালাম উনার আহাল ইন্তিকাল করেছেন। আপনি উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে গ্রহণ করলে উত্তম হবে? অতঃপর জাহেরীভাবে অর্থাৎ ছুরতান সম্মানিত চাচা উনার বাহ্যিক অনুরোধ রক্ষার্থে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নির্দেশে অর্থাৎ পবিত্র ওহী মুবারক অনুযায়ী নিছবতে আযীম শরীফ সম্পন্ন করেন। যা ছিলেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বশেষ নিসবাতুল আযীম শরীফ। পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলেন ৫০ বছর ৪ মাস ১৩ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ্্ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার মুবারক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মুবারক বর্ণনা করতে গিয়ে উনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় তিনি বলেন-
إِنَّـهَا كَانَتْ مِنْ أَتْقَانَا لِلّهِ وَ أَوْصَلُـنَا لِلرِّحْمِ
অর্থ: আমাদের মধ্যে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সবচেয়ে বেশী ভয় করতেন এবং সবচেয়ে বেশী আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতেন। (তাবাক্বাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা)
সম্মানিত শরীয়ত উনার আদেশ নিষেধের ব্যাপারে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। এ ব্যাপারে কোন রকম নমনীয়তা উনার মধ্যে ছিল না। একবার উনার এক নিকট আত্মীয় উনার সাথে দেখা করতে আসে। তার মুখ থেকে মদের গন্ধ আসছিল। তিনি লোকটিকে শক্তভাবে ধমক দেন। তাকে তিনি বলে দেন: তুমি আর কখনও আমার নিকট আসবে না। (তাবাক্বাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা)
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম তিনি নারী জাতীর আদর্শ ছিলেন। দ্বীন সংক্রান্ত বিষয়ে এবং আখলাকে ইছলাহী অর্জনের জন্য তিনি নারী সমাজকে সব সময় নছীহত মুবারক করতেন। একবার এক মহিলা অসুস্থ অবস্থায় মান্নত করেন যে, যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সুস্থ করেন, তবে তিনি পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফে গিয়ে নামায আদায় করবেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। তখন তিনি মান্নত পূর্ণ করার জন্য বায়তুল মুকাদ্দাসে যাবেন, এ উদ্দেশ্যে তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম উনার নিকট বিদায় নিতে আসেন। তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম তিনি উনাকে বুঝালেন যে, পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে নামায আদায়ের ছাওয়াব অন্য যে কোন মসজিদের চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশী।
সুতরাং তুমি সেখানে না গিয়ে এখানেই অবস্থান কর এবং পবিত্র মসজিদ নববী শরীফে নামায আদায় করলেই তোমার মান্নত পূর্ণ হবে। অতঃপর উক্ত মহিলা উনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং উনার নছীহত অনুযায়ী কাজ করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত)
প্রকৃতপক্ষে সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ কায়িম মাকাম। কাজেই উনাদের মুবারক কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, আচার-ব্যবহার সবই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত। মুহাদ্দিছে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা ৪৬ বা ৭৬ বলা হয়েছে।
হিজরী ৭ম সন থেকে হিজরী ৫১ সনে উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত প্রায় ৪৪ বছর উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে তিনি আম জনসাধারণের মধ্যে এবং খাছভাবে আম-মহিলাগণের মধ্যে তা’লীম তরবিয়তে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ
হিজরী ৫১ সনে যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে হজ্জ পালন করতে গমন করেন। হজ্জ পালন শেষে তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখটি ছিলেন পবিত্র মাহে যিলহজ্জ শরীফ উনার ১৯ তারিখ, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদুল আইয়াম শরীফ অর্থাৎ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৯৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইয়াযীদ ইবনে আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্্ আ’শার আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে উনার মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশিত হয়। মারিদ্বী শান যখন খুব প্রকট হয়, তিনি বললেন: আমাকে তোমরা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বাইরে নিয়ে যাও, পবিত্র মক্কা শরীফে আমার বিছাল শরীফ হবে না। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেছেন: পবিত্র মক্কা শরীফে আমার বিছাল শরীফ হবে না। তখন লোকগণ উনাকে বহন করে “সারাফ” নামক স্থানে সেই গাছটির নিকট নিয়ে যান, যেখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে একটি তাঁবুতে নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর উনার মুবারক খেদমতে তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছিলেন। অতঃপর ঐ স্থানটিতেই উনার বিছালী শান মুবারক হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশে এখানেই উনার দাফন মুবারক সুসম্পন্ন হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার জানাযার নামায পড়ান। (সীরতে ইবনে হিশাম, খাছায়েছুল কুবরা)
যখন উনার পবিত্র জিসিম মুবারক খাটিয়ায় উঠানো হয়, তখন হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম বললেন: সাবধান! ইনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আযওয়াজুম মুত্বহহারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্যতম। ইনি সমস্ত মু’মিনদের মহাসম্মানিতা মাতা। খুব বেশী ঝাঁকি দিবেন না, খুব আদবের সাথে নিয়ে চলবেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত)
মূলত, আফদ্বালুন নাস ওয়া নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের আলোচনা মুবারক শুরু হবে কিন্তু শেষ করার সীমানা কারোরই জানা নেই। তথাপি উনাদের শান মুবারকে সর্বোচ্চ আদব প্রকাশ ও সর্বাধিক হুসনে যন পোষণ করতে হবে। উনাদেরকে নিজের মাল, জানসহ সমস্ত কিছু হতে বেশি মুহব্বত করতে হবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনভাবেই উনাদের শান মুবারকে বিন্দু হতে বিন্দুতম আদব ও হুসনে যনের খিলাফ করা যাবেনা। আর উনাদের পবিত্র সাওয়ানেহে উমরী মুবারক জেনে ইবরত-নসীহত হাসিল করত উনাদের মুবারক শানে বিশুদ্ধ আক্বীদাহ পোষণ করে উনাদের মুবারক ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ এবং নেক দৃষ্টি ও নিসবত মুবারক হাসিল করতে হলে সুলত্বানুন নাছীর, আল ক্বউইউল আউওয়াল, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বইয়ূমুযযামান, ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারকে সকলকে অবশ্যই আসতে হবে এবং উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত রাজারবাগ শরীফ সুন্নতী জামে মসজিদে প্রতিদিন বাদ মাগরিব অনুষ্ঠিত অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল শুনতে হবে। একইভাবে ছহিবাতু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ক্বায়িম-মাক্বামে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারকে মহিলাদেরকে অবশ্যই আসতে হবে এবং উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ঢাকা রাজারবাগ শরীফস্থ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা মাদরাসায় প্রতিদিন বাদ যুহর অনুষ্ঠিত ফালইয়াফরহূ তা’লীমী মাহফিল শুনতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম উম্মাহকে এ ব্যাপারে তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)