সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
, ১৪ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১২ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আবনা তথা মহাসম্মানিত ছেলে আওলাদ আলাইহিমুস সালাম এবং মহাসম্মানিতা বানাত তথা মহাসম্মানিতা মেয়ে আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন মোট আট (৮) জন। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ধারাবাহিকক্রম মুবারক অনুযায়ী উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন,
১. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম।
২. উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
৩. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুছ ছানী আলাইহিস সালাম।
৪. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম।
৫. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম।
৬. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম।
৭. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম।এবং
৮. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম।
সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি শুধু উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর অন্যান্য সকল মহাসম্মানিত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং মহাসম্মানিতা বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাউম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে ‘ঊলা’ বা প্রথমা। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে ‘ছানিয়াহ’ তথা দ্বিতীয়া। সুবহানাল্লাহ!
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ফযীলত মুবারক এক কথায়- তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশের ১০ বছর ৮ মাস ২১ দিন পূর্বে ২১শে জুমাদাল উখরা শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ বা’দ ফজর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ২৯ বৎসর পার হয়ে ৩০ বৎসর চলতে ছিলেন। আর উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ৪৪ বছর পার হয়ে ৪৫ বছর চলতে ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, দুনিয়ার কোনো কিতাবে উপরোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ নেই; বরং এটা আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা অভূতপূর্ব বেমেছাল শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ। সুবহানাল্লাহ! এর মাধ্যমেই প্রতিভাত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সাথে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কত বেমেছাল আখাচ্ছুল খাছ তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময় উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক থেকে বিশেষ সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,
دَخَلَ عَلَيْهَا اَرْبَعُ نِسْوَةُ عَلَيْهِنَّ مِنَ الْـجَمَالِ وَالنُّوْرِ مَا لَا يُوْصَفُ فَقَالَتْ لَـهَا اِحْدَاهُنَّ اَنَا اُمُّكِ حَضْرَتْ حَوَّاءُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ اٰسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِم عَلَيْهَا السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ كُلْثُوْمٌ عَلَيْهَا السَّلَامُ اُخْتُ حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ مَرْيَـمُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتُ عِمْرَانَ اُمُّ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ جِئْنَا لنلى مِنْ اَمْرِكِ
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য চারজন সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করলেন, উপস্থিত হলেন। উনাদের চেহারা মুবারক অত্যন্ত সুন্দর ও নূরানী। ছূরতান উনাদেরকে পরিচিত মনে হচ্ছিলো না। তখন উনাদের মধ্যে একজন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি আপনার সম্মানিতা আম্মাজান উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! অপরজন বললেন, আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আসিয়াহ বিনতে মুযাহিম আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! অপরজন বললেন, আমি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বোন হযরত কুলছূম আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! চতুর্থজন বললেন, আমি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান হযরত মারইয়াম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আমরা এসেছি আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য।” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে ‘উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বিষয়টা ফায়ছালা মুবারক করেন। অর্থাৎ তিনি কুদরতীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেয়া এবং সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা বানাত, লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সপ্তম দিনে উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেন এবং উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসমবা নাম মুবারক রাখেন ‘হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত লালন-পালন মুবারক:
আফদ্বলুন নিসা ওয়ান নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অর্র্থাৎ উনাদের সর্বাধিক সম্মানিত আদর-যতœ মুবারক-এ, সম্মানিত তত্ত্বাবধান মুবারক-এ লালিত-পালিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনিউনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সমস্ত খুছূছিয়াত মুবারক তথা বৈশিষ্ট্য মুবারক উনাদের অধিকারিণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ইলম মুবারক:
মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব,নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। শুধু সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল হওয়া ব্যতীত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাছাড়া তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে এবং উনার মহাসম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে সরাসরি সম্মানিত ইলম মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ছূরত মুবারক:
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছূরত মুবারক ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর, বেমেছাল বা তুলনাহীন। উনার মেছাল বা দৃষ্টান্ত মুবারক তিনি নিজেই। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সকল গুণ মুবারক-এ গুণান্বিত। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সম্মানিত মাক্বাম মুবারক-এ অনন্যা।” সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হুবহু নকশা মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রত্যেকেই সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার প্রায় অনুরূপ সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ত্ববীয়ত মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত জামালী ও সম্মানিত জালালী উভয় প্রকার শান মুবারক মিশ্রিত ছিলেন, তবে সম্মানিত জালালী শান মুবারক উনার কিছুটা প্রাধান্য ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ত্ববীয়ত মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত জামালী ও সম্মানিত জালালী উভয় প্রকার শান মুবারক মিশ্রিত ছিলেন, তবে সম্মানিত জালালী ত্ববীয়ত মুবারক উনার শান মুবারক বেশি প্রকাশ পেতেন।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত লিবাস মুবারক:
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত লিবাস মুবারক সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ رَاَيْتُ عَلـٰى حَضْرَتْ زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وَسَلَّمَ قَمِيْصَ حَرِيْرٍ سِيَرَاءَ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পূর্বে) আমি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অতি সুন্দর ডোরাকাটা, হালকা নকশাওয়ালা রেশমী পোশাক মুবারক পরিধান করা অবস্থায় দেখেছি।” সুবহানাল্লাহ! (নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুস্তাদরকে হাকিম)
সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُـمْ تَطْهِيْرًا.
অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩৩)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ:
সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল আছ ইবনে রবী’ ইবনে আব্দিল উয্যা ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুছাই ইবনে কিলাব আলাইহিমুস সালাম সালাম তিনি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার আপন বোন হযরত হালাহ বিনতে খুওয়াইলিদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার সম্মানিত আওলাদ। অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন খালাতো ভাই। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নসবনামা মুবারক পিতা ও মাতা উনাদের উভয়ের দিক থেকে উপরে যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নসবনামা মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে চতুর্থ পুরুষে যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নসবনামা মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত তিনি ছিলেন পূর্বমনোনিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহস সালাম হিসেবে সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি যাবতীয় উত্তম গুণাবলী মুবারক উনাদের অধিকারী ছিলেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ-এ অত্যন্ত সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব মুবারক হিসেবে সকলের মাঝে সুপরিচিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশেষ মজলিস মুবারক-এ আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানিয়ে দেন যে, হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি (মহান আল্লাহ পাক) আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশেষ মজলিস মুবারক-এ সুসম্পন্ন করেছি। সুবহানাল্লাহ! আপনিও উনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দুনিয়ার যমীনে সুসম্পন্ন করুন। সুবহানাল্লাহ! তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুষ্ঠানিকভাবে দুনিয়ার যমীনে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ: আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশের ৯ মাস ২০ দিন পূর্র্বে ২২শে জুমাদাল ঊলা শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ)। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ৯ বছর ১১ মাস ১ দিন অর্থাৎ প্রায় ১০ বছর। সুবহানাল্লাহ! সময়টি ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশের ৯ মাস ২০ দিন পূর্র্বে ২২শে জুমাদাল ঊলা শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ)। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এই আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা কত বেমেছাল সম্মানিত খুশি মুবারক প্রকাশ করেছেন তা কুল কায়িনাত কল্পনাও করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ!
আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ সম্মানিত হাদিয়া মুবারক:
আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ মহাসম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে এবং মহাসম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পক্ষ থেকে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সকল সম্মানিত হাদিয়া মুবারক দেয়া হয়েছিলো, সে সকল সম্মানিত হাদিয়া মুবারক উনাদের মধ্যে ইয়ামেনের প্রসিদ্ধ আকীক পাথরের একখানা হার মুবারকও ছিলো। এই সম্মানিত হার মুবারকখানা হাদিয়া মুবারক করা হয়েছিলো উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পক্ষ থেকে। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পক্ষ থেকে উনাকে একখানা সম্মানিত বাড়ী মুবারকও হাদিয়া মুবরক করা হয়েছিলো। যেই সম্মানিত বাড়ী মুবারক-এ উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশ পাওয়ার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা সর্বপ্রথম উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট প্রকাশ করেন। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনিই পুরুষ-মহিলা সকলের পূর্বে সর্বপ্রথম সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সাথে সাথে উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারাও সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অল্প সময়ের ব্যবধানে সংবাদ মুবারক পাওয়ার সাথে সাথে এসে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনারাই পুরুষ-মহিলা সকলের মাঝে সর্বপ্রথম সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اَوَّلُ مَنْ اَسْلَمَ وَاٰمَنَ فِـىْ خَلْقِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لَـمْ يَتَقَدَّمْهَا رَجُلٌ وَّلَا امْرَاَةٌ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الْاُوْلـٰى سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلْكُبْرٰى (حَضْرَتْ خَدِيـْجَةُ) عَلَيْهَا السَّلَامُ ثُـمَّ اَسْلَمَ وَاٰمَنَ بِنْتٌ مِّنْۢ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلنُّوْرُ الثَّانِيَةُ عَلَيْها السَّلَامُ وَاَسْلَمَ وَاٰمَنَ بِنْتٌ مِّنْۢ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلنُّوْرُ الثَّالِثَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَاَسْلَمَ وَاٰمَنَ بِنْتٌ مِّنْۢ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلنُّوْرُ الرَّابِعَةُ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءُ عَلَيْهَا السَّلَامُ ثُـمَّ اَسْلَمَ وَاٰمَنَ بِنْتٌ مِّنْۢ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلنُّوْرُ الْاُوْلـٰى عَلَيْهَا السَّلَامُ অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি জগতে সর্বপ্রথম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন ও সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার পূর্বে কোন পুরুষ মহিলা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেনি এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেনি। অতঃপর বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর খাইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
তাই আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উনারাই যেহেতু পুরুষ-মহিলা সকলের মাঝে সর্বপ্রথম সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেছেন। কাজেই, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ ঈমান আনবেন এবং যত নেক আমল করবেন, সমস্ত ফযীলত উনাদের সম্মানিত আমল নামা মুবারক-এ যেয়ে পৌঁছবে। সুবহানাল্লাহ! যদিও উনারা এ সমস্ত কিছুর মুহতাজ নন; তারপরেও সাধারণভাবে উনাদের সম্মানিত ফযীলত মুবারক বুঝতে সহজ হয়।” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া:
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন। এই সম্পর্কে সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَلْـحَارِثِ بْنِ الْـحَارِثِ الْغَامِدِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ لِاَبِـىْ مَا هٰذِهِ الْـجَمَاعَةُ قَالَ هٰؤُلَاءِ قَوْمُ ۨ اجْتَمَعُوْا عَلـٰى صَابِئٍ لَّـهُمْ قَالَ فَتَشَرَّفْنَا فَاِذَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو النَّاسَ اِلـٰى تَوْحِيْدِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالْاِيْـمَانِ بِهٖ حَتَّى ارْتَفَعَ النَّهَارُ فَتَصَدَّعَ عَنْهُ النَّاسُ وَاَقْبَلَتِ امْرَاَةٌ قَدْ بَدَا نَـحْرُهَا تَبْكِىْ تَـحْمِلُ قَدَحًا وَّمِنْدِيْلًا فَنَاوَلَتْهُ مِنْهَا فَشَرِبَ وَتَوَضَّاَ ثُـمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ اِلَيْهَا فَقَالَ يَا بُنَيَّةُ خَـمِّرِىْ عَلَيْكِ نَـحْرَكِ وَلَا تَـخَافِـىْ عَلـٰى اَبِيْكِ غَلَبَةً وَّلَا ذُلًّا فَقُلْتُ مَنْ هٰذِهٖ قَالُوْا هٰذِهٖ حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِبْنَتُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “হযরত হারিছ ইবনে হারিছ আল গ¦ামিদী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি উনার পিতার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ-এ গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একদল লোককে জড়ো হওয়া অবস্থায় দেখতে পেলেন। তখন তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনাকে বলেন, হে আমার সম্মানিত পিতা, কি কারণে লোকেরা এখানে জড়ো হয়েছে, এটা কিসের জামায়াত? জবাবে উনার পিতা বলেলন, একজন মহাসম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তিনি উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এই কারণে উনার সম্প্রদায়ের লোকজন উনার নিকট জমায়েত হয়েছে। তিনি বলেন, অতঃপর আমরা একটু উঁচু জায়গায় আরোহণ করে দেখতে পেলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত তাওহীদ মুবারক (لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ) এবং উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক ( مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) উনাদের দিকে আহ্বান মুবারক করছেন (তথা সম্মানিত কালিমা শরীফ- لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) উনার সম্মানিত দাওয়াত মুবারক দিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! লোকজন সেখানে দুপুর পর্যন্ত ছিলো। (তারা উনাকে কষ্ট দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছিলো এবং বিভিন্নজন বিভিন্ন এলোমেলো কথাবার্তা বলতেছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ!) এরপর লোকেরা চলে যেতে শুরু করলো। তখন একজন মহাসম্মানিতা মহিলা তিনি সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করতে করতে (সম্মানিত কান্না মুবারক করতে করতে) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এক পাত্র পানি মুবারক ও একটি রুমাল মুবারক নিয়ে অতি দ্রুততার সাথে সেই দৃশ্যপটে উপস্থিত হলেন। তিনি সেখানে এতো বেকারার ও ব্যতিব্যস্ত অবস্থায় উপস্থিত হলেন যে, যার কারণেউনার সম্মানিত ওড়না মুবারক কিছুটা সড়ে গিয়েছিলো (তিনি তখন নিজেকে যথাযথভাবে আবৃত করতে পারেননি)। তারপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পানি মুবারক ও রুমাল মুবারক পেশ করেন। অতঃপরনূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত পাত্র মুবারক থেকে পানি মুবারক পান করলেন এবং ওযূ মুবারক করলেন। (আর রুমাল মুবারকখানা দিয়ে সম্মানিত নূরুর রহমত মুবারক বা সম্মানিত মুখম-ল মুবারক ও হাত মুবারক মুছলেন।) অতঃপর তিনি উনার সম্মানিত সির বা মাথা মুবারক উনার দিকে উত্তোলন করে এ কথা মুবারক বললেন,
يَا بُنَيَّةُ خَـمِّرِىْ عَلَيْكِ نَـحْرَكِ وَلَا تَـخَافِـىْ عَلـٰى اَبِيْكِ غَلَبَةً وَّلَا ذُلًّا
“হে আমার মহাসম্মানিতা প্রিয়বানাত আলাইহাস সালাম! আপনি সম্মানিত ঘোমটা মুবারক দিন এবংআপনি আপনার সম্মানিতওড়না মুবারক দিয়ে নিজেকে আবৃত করুন। আর আপনার মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এতো অধিক চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন। অবশ্যই অবশ্যই আপনার মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কামিয়াবী মুবারক প্রকাশ পাবেন এবং কাফির-মুশরিকরা আপনার মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে কাফির-মুশরিকরা কস্মিনাকালেও সফল হতে পারবে না এবং অবশ্যই অবশ্যই তারা লাঞ্ছিত হবে।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত হারিছ গ¦ামিদী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম। ইনি কে? লোকজন বললো, তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত, লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৩/৪৩৩, আল আহাদ ওয়াল মাছানী ৫/১৫৯, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৪৩৬, জামিউল আহাদীছ ২৩/২১৩)
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল মুহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক মুবারক:
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের মাঝে ছিলো বেনযীর, বেমেছাল মুহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক মুবারক। উনাদের সেই সম্মানিত সম্পর্ক মুবারক উনার গভীরতা প্রকাশ পায়- যখন কুরাইশরা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলো তখন। সুবহানাল্লাহ!
যখন কুরাইশরা অনুভব করলো যে, কোনো পরিকল্পনা করেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার দাওয়াত মুবারক থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। তখন তারা নতুন পরিকল্পনা করলো। কুরাইশরা বলে উঠলো, তোমাদের সর্বনাশ হোক! তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতাবানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে নিজেদের ছেলেদের বিবাহ করিয়ে উনার দুশ্চিন্তা নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিয়েছো। নাঊযুবিল্লাহ! তোমরা যদি উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের থেকে নিজেদের ছেলেদেরকে বিচ্ছন্ন করে নাও, তাহলে তিনি উনাদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের মধ্যে অনেকে এ কথা সমর্থন করে বললো, এ তো চমৎকার যুক্তি। নাঊযুবিল্লাহ! তারা দল বেঁধে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললো, “আপনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং উনাকে উনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছে দিন। উনার পরিবর্তে আপনি আপনার পছন্দমত কুরাইশদের যে কোনো সুন্দরী নারীকে বিবাহ করতে পারবেন।” নাঊযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সাথে আবূ লাহাবের দুই পুত্র উতবা এবং উতাইবার আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয়েছিলো। যেহেতু তখন উনাদের সম্মানিত বয়স মুবারক অল্প ছিলো, তাই উনারা তাদের ঘরে তাশরীফ মুবারক নেননি। একই প্রস্তাব আবূ লাহাবের দুই পুত্র উতবা এবং উতাইবার নিকটও দেয়া হয়েছিলো। তারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া থেকে মাহরূম হয়ে গিয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি দৃঢ়তার সাথে কুরাইশদের এ ধারণা বাতিল করে দিলেন। তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তা হয় না। আমি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কস্মিনকালেও বিচ্ছিন্ন হতে পারবো না। উনার পরিবর্তে আমাকে সমস্ত মহিলাদেরকে দিয়ে দিলেও আমার পক্ষে তা কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উম্মু আবীহা, আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলাআলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার কতোবেমেছাল মুহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জবান মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরআলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা:
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের নিকট যেই জবাব দিয়েছেন তাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুবই সন্তুষ্ট মুবারক হয়েছিলেন। যা তিনি পরবর্তীতে প্রকাশ করেছেন। যখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আবূ জেহেলের কন্যাকে নিসবতে আযীম শরীফ দিতে চেয়েছিলো, তখন তা আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট জানতে পেরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুতবা মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেছিলেন,
اَمَّا بَعْدُ اَنْكَحْتُ حَضْرَتْ اَبَا الْعَاصِ بْنَ الرَّبِيْعِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَحَدَّثَنِـىْ وَصَدَقَنِـىْ وَاِنَّ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِضْعَةٌ مِّنِّـىْ وَاِنِّـىْاَكْرَهُ اَنْ يَّسُوْءَهَا وَاللهِ لَا تَـجْتَمِعُ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِنْتُ عَدُوِّ اللهِ عِنْدَ رَجُلٍ وَّاحِدٍ فَتَرَكَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ الْـخِطْبَةَ.
অর্থ: “আমি আমার মহাসম্মানিতা বানাত, উম্মু আবীহা আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর ইবনে রবী আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিয়েছি। তিনি আমার সাথে প্রশংসনীয় আচরণ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি পরম সত্যবাদী এবং এমন একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক, যিনি উনার কথা মুবারক রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! নিশ্চয়ই আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার সম্মানিত গোশত মুবারক উনার একখানা টুকরো মুবারক। আমি উনার কষ্ট বরদাশত করতে পারি না। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহাস সালাম তিনি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রুর কন্যা একই ব্যক্তির নিকট থাকতে পারে না। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ ইত্যাদি)
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মরণ মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ক্বাছীদা শরীফ পাঠ:
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি বেমেছাল মুহব্বত মুবারক করতেন। উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হিজরত মুবারক করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক রাখেন, তখন তিনি উনার জুদায়ীর কারণে অত্যন্ত দুঃখে-কষ্টে কালাতিপাত করতে থাকেন। একদা তিনি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার পাশ দিয়ে সিরিয়া যান, তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মরণ মুবারক-এ একখানা সম্মানিত ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন এভাবে,
ذَكَرْتُ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ لَمَّا وَرَدْتُّ اَرَمَا....
فَقُلْتُ سَقْيًا لِّشَخْصٍ يَّسْكُنُ الْـحَرَمَا
بِنْتُ الْاَمِيْنِ جَزَاهَا اللهُ صَالِـحَةٌ
.......وَّكُلُّ بَعْلٍ سَيُثْنِىْ بِالَّذِىْ عَلِمَا
অর্থ: “যখন আমি আরামা নামক স্থানে এসে পৌঁছি, তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্মরণ হয়। আমি বললাম, যিনি সম্মানিত হেরেম শরীফ বসবাস করছেন, আপনি উনাকে সজীব রাখুন, উনাকে পানি পান করিয়ে ধন্য করুন। অর্থাৎ উনার কাছ থেকে আমার পানি মুবারক পান করতে ইচ্ছা হলো। আল আমীন তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার,উম্মু আবীহা, আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলাআলাইহাস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম বদলা হাদিয়া করুন। তিনি ছিলেন একজন ছালিহা তথা মহাসম্মানিতা নেককার মহিলা। প্রত্যেক আহাল তথা স¦ামী উনার আহলিয়াহ সম্পর্কে যা ভালো জানেন তাই প্রশংসা মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৪, আর রওদ্বুল উনফ ৩/১০৩, যখায়েরুল উক্ববা ১/১৬০, ‘উয়ূনুল আছার ২/৩৬৪, তারীখে দিমাশক্ব ৩/৪৫৪ ইত্যাদি)
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি:
ব্যবসা-বাণিজ্যের অভিজ্ঞতা এবং আমানতদারীর জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি বিখ্যাত ছিলেন। হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “অর্থ-বিত্ত, আমানতদারী ও ব্যবসায়ী হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার গণ্যমান্য মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবর্গ উনাদের অন্যতম ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ মাসে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের ১৭০ উটের একটি বাণিজ্য কাফিলা নিয়ে সিরিয়া যান। বাণিজ্য শেষে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ প্রত্যাবর্তনকালে পথে কাফিলাটি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছে, তখন এই সংবাদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পেশ করা হয়। তিনি ১৭০ জন সদস্যের একটি বাহিনীসহ হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে তাদের পশ্চাদগমনের জন্য প্রেরণ করেন। ঈশ নামক স্থানে উভয় কাফিলা মুখোমুখি হন। মুসলিম বাহিনী কুরাইশ কাফিলার বাণিজ্য সম্ভারসহ সকল লোককে বন্দি করেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার কোনো ক্ষতি করা হয়নি।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি কাফিলার এই পরিণতি দেখে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ চলে যান এবং সেখানে পৌঁছে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিরাপত্তা মুবারক ত্বলব করেন। উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে নিরাপত্তা মুবারক দিলেন। অন্য কেউ কিছু জানলেন না।
ভোরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ-এ ফজর নামাযে দাঁড়ালেন। তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুলন্দ আওয়াজ মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করলেন,
اَيُّهَا النَّاسُ اِنّـِــىْ قَدْ اَجَرْتُ حَضْرَتْ اَبَا الْعَاصِ بْنَ الرَّبِيْعِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَلَمَّا سَلَّمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ صَلَاتِهٖ قَالَ اَيُّهَا النَّاسُ هَلْ سَـمِعْتُمْ مَّا سَـمِعْتُ. قَالُوْا نَعَمْ. قَالَ اَمَا وَالَّذِىْ نَفْسُ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهٖ مَا عَلِمْتُ بِشَىْءٍ مِّـمَّا كَانَ حَتّٰى سَـمِعْتُ مِنْهُ مَا سَـمِعْتُمْ اِنَّهٗ يـُجِيْرُ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ اَدْنَاهُمْ. ثُـمَّ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلـٰى حَضْرَتْ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَ اَىْ بُنَيَّةُ اَكْرِمِىْ مَثْوَاهُ.
অর্থ: “হে লোক সকল! আমি হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে নিরাপত্তা মুবারক দিয়েছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত নামায মুবারক শেষ করলেন, তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি যা শুনেছি, আপনারাও কি তা শুনেছেন? উনারা সমস¦রে বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তা শুনেছি। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যাঁর কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার সম্মানিত প্রাণ মুবারক উনার কসম, এ বিষয়টি আগে আমাকে জানানো হয়নি।
আমি আপনাদের মতোই এই মাত্র তা শুনলাম। নিশ্চয়ই একজন সাধারণ মুসলমানেরও অধিকার রয়েছে এরূপ নিরাপত্তা প্রদান করার। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখলেন। অতঃপর তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে আমার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহাস সালাম! আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানজনক ব্যবহার মুবারক করুন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৫, আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৯/৯৫, মু’জামুল কাবীর ১৬/২৮২, সিরাতুল হালবীয়া ৩/১৭৬, ইবনে হিশাম ৩/২০৯, যখায়েরুল উক্ববাহ ১/১৫৯ ইত্যাদি)
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজি মুবারক পেশ করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার আটককৃত বাণিজ্য পণ্য, মাল-সম্পদ ফেরত দেয়ার জন্য।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিতে পারতেন এবং কেউ তা অস¦ীকার করতেন না। কিন্তু তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন,
اِنَّ هٰذَا الرَّجُلَ مِنَّا حَيْثُ قَدْ عَلِمْتُمْ وَقَدْ اَصَبْتُمْ لَهٗ مَالًا فَاِنْ تُـحْسِنُوْا وَتَرُدُّوْا عَلَيْهِ الَّذِىْ لَهٗ فَاِنَّا نُـحِبُّ ذٰلِكَ وَاِنْ اَبَيْتُمْ فَهُوَ فَـىْءُ اللهِ الَّذِىْ اَفَاءَ عَلَيْكُمْ فَأَنْتُمْ اَحَقُّ بِهٖ
অর্থ: “আমার মধ্যে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে যে সম্মানিত সম্পর্ক মুবারক সেটা আপনাদের জানা রয়েছে। আপনারা উনার বাণিজ্য সম্ভার, মাল-সম্পদ আটক করেছেন। আপনারা যদি ভালো মনে করেন, তাহলে উনার যা আটক করেছেন, তা উনাকে ফেরত দিন। এটা আমাদের নিকট খুবই পছন্দনীয় হবে এবং এতে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হবো। সুবহানাল্লাহ! আর আপনারা রাজি না হলে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ হিসেবে সেটা আপনারা ভোগ করতে পারেন। আপনারাই সেই মালের অধিক হক্বদার।” তখন উনারা সমস¦রে বললেন,
يَا رَسُوْلَ اللهِ بَلْ نَرُدُّهٗ عَلَيْهِ.
“ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!বরং অবশ্যই আমরা উনার সমস্ত মাল-সম্পদ ফেরত দিবো।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৩/২৬২, আল মু’জামুল কাবীর ১৬/২৮৮, সীরতে হালবীয়া ৩/১৭৬, ইবনে হিশাম ৩/২০৯, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৬/৮৩ ইত্যাদি)
অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সমস্ত মাল-সম্পদ ফেরত দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক:
এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ثُـمَّ احْتَمَلَ اِلـٰى مَكَّةَ فَاَدّٰى اِلـٰى كُلِّ ذِىْ مَالٍ مِّنْ قُرَيْشٍ مَّالَهٗ مِـمَّنْ كَانَ اَبْضَعَ مِنْهُ ثُـمَّ قَالَ يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ هَلْ بَقِىَ لِاَحَدٍ مِّنْكُمْ عِنْدِىْ مَالٌ لَّـمْ يَأْخُذْهُ قَالُوْا لَا فَجَزَاكَ اللهُ خَيْرًا فَقَدْ وَجَدْنَاكَ وَفِيًّا كَرِيـْمًا قَالَ فَاِنّـِـــىْ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُـحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَمَا وَاللهِ مَا مَنَعَنِـىْ مِنَ الْاِسْلَامِ عِنْدَهٗ اِلَّا تَـخَوُّفًا اَنْ تَظُنُّوْا اَنِّـىْ اِنَّـمَا اَرَدْتُّ اَخْذَ اَمْوَالِكُمْ فَلَمَّا اَدَّاهَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اِلَيْكُمْ وَفَرَغْتُ مِنْهَا اَسْلَمْتُ ثُـمَّ خَرَجَ حَتّٰى قَدِمَ عَلـٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম (উনাকে উনার বাণিজ্য সম্ভার, মাল-সম্পদ ফেরত দেয়া হলে,) তিনি উনার সমস্ত ধন-সম্পদ নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে গেলেন। তিনি সেখানে যেয়ে কুরাইশদের প্রত্যেকের মাল-সম্পদ বুঝিয়ে দিলেন। এরপর তিনি কুরাইশদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে আমার নিকট সম্পদ পাবে, অথচ সে তা গ্রহণ করেনি? তারা সমস¦রে বললো যে- না, এমন কেউ নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আপনি একজন ওয়াদা পূরণকারী এবং সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি তখন বললেন, তোমরা শুনে রাখো, আমি এখন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলাম। এই বলে, তিনি উনার সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করে পাঠ করলেন,
فَاِنّـِـــىْ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُـحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার আবদ তথা হাবীব এবং রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ!
এরপর তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হওয়ার পর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ থেকে একটি মাত্র বিষয় আমাকে নিবৃত্ত রেখেছে। আর তা হচ্ছে, তখন আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলে তোমরা বলতে যে, তোমাদের মাল-সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি। এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এ বিষয় থেকে উত্তমভাবে মুক্ত করেছেন। তোমাদের সমস্ত পাওনা আমি বুঝিয়ে দিয়েছি। তাই এখন আমি প্রকাশ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করছি।
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সেখান থেকে বের হয়ে সম্মানিত হিজরত মুবারক করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ)
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বায়াত গ্রহণ করেন এবং প্রকাশ্যে সম্মানিত ঈমান আনেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা তা দেখে তাকবীর মুবারক দেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার অনেক প্রশংসা মুবারক করেন, সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও অত্যন্ত সন্তুষ্ট মুবারক হন, খুশি মুবারক প্রকাশ করেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার অনেক ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর স¦য়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবরক নেন এবং উনাকে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অবস্থান মুবারক করার অনুমতি মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, পূর্বের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফই বহাল ছিলো। নতুন করে আর সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ পড়ানো হয়নি। এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ এবং একমাত্র গ্রহণযোগ্য অভিমত। কেননা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি পূর্ব থেকেই ঈমানদার ছিলেন। তবে ঈমান মুবারক প্রকাশ করেছেন পরে। সুবহানাল্লাহ!
উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠতম মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ خَيْرُ بَنَاتِـىْ اُصِيْبَتْ فِـىَّ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার শ্রেষ্ঠ বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আমার সম্মানার্থে তিনি অনেক সম্মানিত তাকলীফী শান মুবারক (কষ্ট মুবারক) গ্রহণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর ১৬/২৯০, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৫/৮০, মা’রিফাতুছ ছাহাবা লি আবী নাঈম ২২/২২২, মাজমাউয যাওয়াদি ৯/৩৪১ ইত্যাদি)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
هِيَ أَفْضَلُ بَنَاتِي أُصِيبَتْ فِيَّ
অর্থ: “সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার শ্রেষ্ঠ বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আমার সম্মানার্থে তিনি অনেক সম্মানিত তাকলীফী শান মুবারক (কষ্ট মুবারক) গ্রহণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব ৪/৩১৮)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি প্রকাশ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর উম্মু আবীহা আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায় দেড় বছর দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হাজির হওয়ার জন্য রওয়ানা মুবারক হন। পথিমধ্যে উনার উপর আক্রমণ চালালে তিনি উটের পিঠ থেকে যমীনে তাশরীফ মুবারক নেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি পাথরের উপর তাশরীফ মুবারক নেন, যার কারণে প্রচ- আঘাত মুবারক গ্রহণ করেন। তিনি তখন হামেলা শান মুবারক-এ ছিলেন। আঘাতের কারণে উনার একজন মহাসম্মানিত আওলাদ তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং উনার অনেক নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) প্রবাহিত হন। এর ফলে তিনি দীর্ঘ দিন সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং এই সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায়ই ৮ম হিজরী সনের ৮ই মুহাররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফইশরাকের ওয়াক্তে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এই কারণে সীরত বিশারদগণ উনাদের কেউ কেউ উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সম্মানিত মাক্বাম মুবারক উনাকে সম্মানিত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত গোসল মুবারক:
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু আতিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনারা সকলেই উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক-এ শরীক ছিলেন। হযরত উম্মু আতিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি বলেন, আমি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক-এ সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছিলাম।নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স¦য়ং নিজে সম্মানিত গোসল মুবারক উনার নিয়ম মুবারক বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রথমে তিন বা পাঁচবার প্রত্যেক সম্মানিত অঙ্গ মুবারক ধৌত করবেন । অতঃপর কর্পূর মুবারক লাগাবেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত কাফন মুবারক-এ সম্মানিত বরকতময় চাদর মুবারক প্রদান:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মে আতিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনাকে বলেন যে, সম্মানিত গোসল মুবারক সম্পন্ন করে আমাকে জানাবেন। গোসল মুবারক শেষে উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ জানানো হলে তিনি উনার একখানা সম্মানিত চাদর মুবারক দেন এবং বলেন, এটা সম্মানিত কাফন মুবারক উনার সাথে পরিধান করাবেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন্ন করা হয়।
সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক এবং সম্মানিত ও পবিত্র রওযা শরীফ-এ রাখা:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স¦য়ং নিজে সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক পড়ান এবং তিনি নিজে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে উনার লখতে জিগার উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র রওযা শরীফ-এ রাখেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক-এ উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে শোকের চিহ্ন মুবারক ভেসে উঠে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে অনেক সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করেন এবং উনার জন্য সম্মানিত দোয়া মুবারক করেন, “আয় বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুশকিল আসান করুন, কষ্ট দূর করুন, উনার সম্মানিত ও পবিত্র রওযা শরীফ উনার সংকীর্ণতা প্রশস্ত করুন।” সুবাহানাল্লাহ! ৩০ বছর ৬ মাস ১৭ দিন ২ ঘন্টা দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক সময় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক সময় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
-মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘শরয়ী পর্দা’ মেয়েদের অন্তরের পবিত্রতার সাথে সাথে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)